তুমিই তো মেয়ে অলকানন্দা, মন্দাকিনীর পারিজাত,  
বৃষ্টিতে আর ভিজোনা এমন,
কষ্টেরা গলে যাবে! গভীর রাতের নির্ঘুম ছাদ,
বিকেল বেলার ছলছল চোখ; তোমায় ঘিরে ঘর করেছে-
এই নগরীর দুঃখরা সব! আনাচে কানাচে জল জমেছে,
ভাসছে রাস্তা টইটুম্বুর!
খবরের কাগজ বহুদিন হয় পড়না; এ বছরে-
নাকি হবে বড় বন্যা! টেলিভিশনের স্ক্রলে সিরিয়ালের-
আহ্লাদী মিথ্যা অভিনয়ে কাঁদে! তুমি তো মেয়ে,
সেই কবেই আটকে পড়েছ বৃষ্টিস্নাত বনে!
এই ইট কাঠ পাথরের দেশে পড়ে আছ পুনুরাবৃত্ত ফাঁদে!    
পাখির পালকে জল ঝরে ঝরঝর; ম্যাকাওরা নিয়ে-
সাত রং মিশে গেলো আমাজন বেসিনে;
তুমি তো সেই কবে থেকে ভেসে যাচ্ছ অনন্ত প্লাবনে!
এই শহরের সাত আকাশের মেঘ,
তোমার কাছে ঋণ চেয়ে নিয়ে হয়ে গেছে এভারেস্ট,
তুমি তো মেয়ে দুঃখ জমানোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক!
চেক নয় কষ্টের বদলে ফোটাও অলকানন্দা ছাদে,
শুধু তোমার অলৌকিক আকাশে হয় ফুল আর-
মেঘের পাপড়ির এই লেনদেন; কি অদ্ভুত বিনিময়,
মেঘেরা তো তোমার কাছেই তাই ঋণের খেলাপি!
এখনো পিচ ভাংগা রাস্তায় অনেক বৃষ্টি ঝরা বাকি!  

সামনে জীয়ল কূপ ভেবে লাফ দিলে চোখ বুঝে,
কৃষ্ণগহ্বরের ঠিক হৃদপিন্ডের ভিতর!
আশ্চর্য মিথ্যার বেসাতি সব; জীয়ল কূপ নিজেই মৃত!
সারাতে পারেনা কোন বৈদ্য তোমার বুকের ক্ষত!
এসে যাচ্ছে বড় বান; বুড়িগঙ্গার মাছ গুলো হুরহুর-
করে ঢুকে পড়বে কি উঠোনে তোমার?
মনে হয় হাজার বছর ধরে একই বৃত্তে এই ঘুরপাক,
বৃষ্টিতে নামলে ক্লান্ত নাগরিক বিকালে,
হাত ছুড়ে দিয়ে তুমিই তো বলেছিলে উল্কার রাতে,
কি দরকার এই অনাবশ্যক বাহারী ছাতার?
বিষন্ন বিকালে লাল সাদা মিলে ঝরা পাতা জড়ালো কে?
রমনার পলাশের বনে! ঐখানে বুড়ো বটগাছে,
শৈশবের সুরেলা সঙ্গীতে সব কিছু মিশে আছে লেকের-
সবুজ জলে; মাঝে মাঝে ভাবো বুঝি,
হাঁস হয়ে নেমে যাবে জলজ সাঁতারে! তবুও মানবী-
কখনো হয়না হাঁস, পাখা দুটো নেই আর!
ভাবো অর্কিড হবে অপরূপ ফুল নিয়ে একটা আস্ত-
পাহাড় দখলে নিবে! বেলুনের মতো মাথায়,
ঝোলাবে পুরোটা আকাশ!
রুপকথা একপক্ষে বলে না কখনো কথা,
শিকড় কাঁটছে অবাধ্য দানবের শাবলের শক্ত আঘাত!
এখন রাতজাগা ঘড়ির অসহ্য টিকটিক; প্রহরীর সতত-
প্রহরায় ঘুমই তো হয়না আর!
উপায় বলতে শুধু ড্রয়ারে জমানো স্লিপিং পিল!


রাবীন্দ্রিক বিরহের মত অনেক ক্রন্দন লুকানো,
ঘরে, রাস্তায়, বাইরে! জীবনানন্দ মাঝরাতে এসে-
তোমার বাসার গলির মুখে দাঁড়ান কিছুক্ষণ!
সোনালী চিলের পালক মেয়ে কুঁড়িয়ে নিয়েছ তুমি,
হাজারো লোকের ভিড়ে এক অম্লান দূরদ্বীপবাসিনী!
জলের কষ্ট নীলে মাখাও, নীলের কষ্ট জলে,
এই নগরীর মেঘময় বিকালের দরবারে নিজস্ব শিল্পী-
হয়ে প্রতিদিন ছুয়ে যাও নাগরিক বেলাভূমি!  
ক্যানভাস ছেঁড়ে দুঃখী রং কেমন রাংগিয়ে দিচ্ছে-
মোড় থেকে মোড়ে, ধানমন্ডির প্লাবিত সরোবরে!
মন্দাকিনীর মেয়ে! যাযাবর চুলে হাত বোলায় বাতাস,
নগরীর উন্মুক্ত বুক টানছে তোমাকে; রাস্তায়-
পাঁজরের মতো উঠানামা করছে নিঃশ্বাস!
টের পাও তুমি আপ্লুত সন্ধ্যায় তার চাপা ঘ্রাণ!
সন্ধ্যামালতীর লাল দেখে কেঁদে দিলো গলিমুখে,
কয়েকটা এতিম বিড়ালের ছানা! পশমের বলের মতো-
তুলতুলে শরীরে মায়ার ভান্ডার!
ওরা কি পারবে সব কান্নার জল শুষে নিতে-
টিস্যু পেপারের মতোন? তবু অপুর্ণ পূর্ণিমায়
ভেসে যাওয়া বাতাসে,
এখনো তোমার কান্নার বাষ্প ভাসে! ঘুমাও এবার!
স্বপ্নে দুঃখের সাথে একান্তে কথোপকথন দরকার!