আধা পোড়া কামানেরা শুয়ে অসহায়! বাকরুদ্ধ রোগী,
নেক্রোপলিসের পাহারায়! যুদ্ধ শেষ! শত্রুশক্তি, মিত্রশক্তি-
একই বিছানায় মিলে মিশে ঘুমায়!    
লোহার শরীরে ঝরে ঝরঝরে বালি, গুল্ম লতার পিরানে;
অনেক রোদ, তাজা কমলার রসের মতো আর্দ্র বাতাস,
অপেক্ষা করছে! এখানে বেড়াতে আসে সে, প্রায়ই আসে!
ভারী পা গুলো মেঘের সাথেই চলে, ধীরলয়ে ঢেউ,
পাথরের খাজ কাঁটা স্তম্ভের মতো হেলে,  
বৃদ্ধ রাজার মতো দুলে দুলে, কম্পিত মৃত্তিকার বাতাস!  
চোখে জল, তার নিজস্ব না বৃষ্টির কেউই জানেনা
ধূসরতম কবরে কয়েকটা রাইফেল সমাহিত এখানেই,
তার হস্তিনীও শুয়ে! কয়েকটা তীব্র গুলি, বিদীর্ণ করোটি!
এখানেই শুয়ে তার প্রিয় হস্তিনী! ইনফার্নোর দিনে,
গভীর তৃষ্ণা নিয়ে মরেছিল! না! না! নিহত সে!
অমাবস্যার অপূর্ণ তৃষ্ণা নিয়ে শুয়ে আছে আজো,  
বুড়ো হস্তীটা তাই শুঁড়ে করে আনে কয়েক ফোঁটা জল,
এখানেই হস্তিনী আছে, আরো আছে কয়েকটা মৃত-
নক্ষত্রের মতো বুলেট, পাশাপাশি শুয়ে!    


কতগুলো বিধ্বস্ত বারুদের কামান, মাকড়সার জাল,  
আঠালো বৃক্ষের রস সমস্ত শরীরে মেখে,
অলুক্ষণে নেক্রোপলিসের পাহারায় আছে, বাকী সব মৃত!  
দুপুর ঘুমিয়ে গেলে, এখনো বেড়াতে আসে বুড়ো হস্তীটা,    
ওয়াইনের মতো ঝাঁঝালো ফল গর্ভে নিয়ে আগুনের বন,
তার অপেক্ষায় জেগে থাকে! জেগে আছে! হয়তো!
নলের গন্ধে মৃত বারুদেরা ঘাপটি মেরে মুহূর্ত গোণে,
হয়তো সেই তাদের আসন্ন শিকার, বাতাসে তীব্র গন্ধ
সাভানার ভোরের মতোন!
তবুও এখনো ভয় পায়না সে! পায়ের নীচেই বিষাক্ত কীট,
তাদের মাড়িয়ে নিয়ে আসে একমুঠো দুষ্প্রাপ্য জল,
ভাবে মরে যাওয়া হস্তিনী এখনো তৃষ্ণার্ত,
কি বা হবে দু একবার খেলে কৃষ্ণ মাম্বার বিষাক্ত ছোবল!
অনেক দূরের তুলার মতো বরফ মাড়িয়ে পূর্ণ পূর্ণিমায়,
এখনো সে হেঁটে আসে,
সামনের সাদা প্রান্তরে ধলা জোছনায়,
ওই তো হস্তিনী মরে আছে! কারা যেনো কেটে নিয়ে গেলো,
সুতীক্ষ দাঁত; তবুও এখনো সবথেকে সুন্দর নারীটির মতো,
শুয়ে আছে হস্তিনী তার!  


একটা বুড়ো হস্তী, পার হয়ে বীভৎস কামানের লাশ,
মাঘী পূর্ণিমায়, তীব্র দাবদাহে, এখনো বেড়াতে আসে,
দেখে যায় হস্তিনীটার শব! এখনো পচেনি,
পচলেই কি বা আসে যায়? কিছু না কিছু তো বেঁচে থাকে,
থেকে যায় অক্ষয়!  
কয়েকটা চোরা রাইফেল লুকানো বিষের মতো ছুটে এলো,
নক্ষত্রের মতো গুলি ঢুকে গেলো! নেই কোন বৃংহিত!
শুধু কাঁত হয়ে শুয়ে পড়ে তার পাথুরে শরীর-
বহুদিন পর আবার হস্তিনীর সাথে!
মাংসভোজী ছত্রাক,ব্যাকটেরিয়া গলাবে তাদের,
দুজনেরে একই সাথে, একাকার হবে হৃদপিন্ড পেশীর নির্যাস,
হয়তো স্লেটবোর্ডে চকের গুড়োর মতো দুজনের কঙ্কাল,
রোদে শুয়ে শরীরে শরীর ঘষে যাবে,
আরো অনেক সকাল! অথবা দুম করে ভেসে যাবে!


বাতাসে বুনো গন্ধের মতো রেললাইনের পচা কাঠের স্লিপার-
ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দে ভেঙ্গে তারা দুজনেই হেঁটে আসে,
পুনরায় হেঁটে আসে! আবার! বারবার!
কামানের গোলা চুপসানো বলের মতো যাচ্ছে ভেসে!