(১)
থমকে যেয়োনা, হোঁচট খেয়োনা ক্লান্ত রূড় জীবন,
দেয়াল ঘেঁষেই মাধবীলতা; বইয়ামে জমানো-
না বলা কথা! পুরানো তেলের বোটকা গন্ধের মতো,
সঞ্চিত ভাড়ারের সুতীক্ষ স্মৃতি কাতরতা!
মেয়েটি তো বাড়িয়েছিল হাত ভেংগে যুগসন্ধির প্রথা,
অমরাবতীর সপ্ত দুয়ারে জোনাকিরা ফুটেছিল-
থরেথরে! তবু বিচিত্র ছোপময় পালকেরা পালালো-
পুরোনো নির্বাসনে! মিশে গেলো নদী বুড়ো কাশবনে,
কোথায় হারালে তুমি?
চারিদিকে শুধু নক্ষত্রপুঞ্জের মতো ফুটে আছে,
সাদা সাদা ফুল! নাকি আমাকে জড়িয়ে ধরেছে হঠাৎ-
নরম ফুলের পাপড়ি ছেঁড়ার অনতিক্রম্য ভুল?
মনের মতো মঞ্জরী নিয়ে মিশেছিলে মনে মনে,
পারিজাত বনে! পাইনিতো টের অসময়ের অঘ্রাণে!


(২)
আলতো পায়ের ছোপে টলমল আলতাদিঘীর জল,
কোমল গান্ধারের মতো আনত সন্ধ্যায় বিমোহিত,
হয়ে আছে লোহিত কমল! নীলে তাজা রক্তের ছোপ!
থেমোনা জীবন! সরে যাবে ক্লান্ত ঐরাবত এক্ষুণি,
নুপূর নিক্কণে বাজছে তার অনাগত পদধ্বনি!
বিষণ্ণ আষাড় তাই ঝরে ঝরঝর!
শুষ্ক পাতারা কথা বলে মর্মর; ময়ূরেরা নৃত্যে অনড়,
দশ দিকে সজাগ পাহারায় থেকে জমে গেল দশানন,
এতো পৌরাণিক পরাজয়! তুমি পালালে কোথায়?
এখনো কদমের তলে ছোয়া হলোনা করপুট ভুলে,
পুড়ছি ক্রমশ অনন্তের অনলে; তুমি এখনো অধরা,
শুধু স্মৃতিরা আজকাল বড় বেশি ব্যাথাতুরা!


(৩)
সোনালি বালুর কণায় সঞ্চারিত স্রোত সিংহদুয়ারে,
বজ্রনিনাদে এখনো মাতাল প্রেম বন্য ঈগলের মতো,
তীব্র নখরে, কড়া নাড়ে জোরে জোরে!
থেমোনা জীবন! এলোচুলে একাকিনী দাড়িয়ে এখনো!
খুলে দেখি কেউ নেই, মহাজাগতিক শূন্যতা ছাড়া,
এমন সকরূণ রসিকতার মানে আছে কোন?


(৪)
উন্মাতাল মেঘে দুষ্ট শিশুর মতো হুড়োহুড়ি করে কারা?
অবাধ্য কুন্তলে রেখেছ ঢেকে চিরচেনা হাসিমাখা-
গালে দুটো টোল! তবু আমার ডুবে যাওয়া হলো সারা-
বহুকাল গত! বিগত সময়ের শবে ভালোবাসা মাখা!
হায়ারোগ্লিফিক্সের কফিনে নিয়ে কৃষ্ণচর্মসার স্মৃতি,
সুরেলা সারসের জীবন্ত কল্পনায় চড়চড়ে শুষ্ক বিভূতি!
তার চেয়েও বেশি জীবন্ত! মধ্যাহ্নের মতো তীব্রতম-
তুমি অরূণার রাগিণী! তুমি আজো আকাশের ক্রন্দন!


(৫)
রূপালী মূদ্রারা রজতাভ আলো হয়ে গলে গলে,
ছড়িয়ে পড়ছে, ফোয়ারায়, এভিনিউয়ে, নষ্ট চাপকলে!
আকাশের তলে রাজার সমাধির গায়ে হাসে কারুকাজ,
ওই যে ওখানে, বসে আছো তুমি! ঢেউয়ের রাজহাঁস!
নিঃশব্দ দুপুরে নিদারূণ ক্লান্তিতে আরণ্যক পদক্ষেপে,
তুমি আজো ধেয়ে আসা প্রেমের আওয়াজ!
আমিতো লক্ষীন্দর! নিয়তির হাতে অকারণে নিহত,
অপেক্ষায় থাকি স্বর্গের আসরে পুনুরুত্থানের বারবার,
অলৌকিক ভেলায় তুলে নিয়ে যেয়ো টেনে,
সাহসিনী বেহুলা আমার!


(৬)
তুমি হৃদয়ের মরূভুমি, অবনত চিবুকে শিশিরের জল,
নাকি প্রেমের অনল? এতোকাল ধরে এখনো অধরা!
ছুয়ে দিতে গেলে, চলে গেলে সরে!
থেমোনা জীবন! আজো পদ্মপাতায় ভাসে সুরম্য ফল,
তার বৃন্তে ভালোবাসা আছে! আছে হাসির কাকলি!
শুনতে পাচ্ছো অমরাবতীর মেয়ে? এতো দূরে কেন?
এসো হাঁটি রূপালী সায়রে; কিঞ্চিৎ পাশাপাশি!