আরেকটা রাত বিগলিত অন্ধকার শরীরে মেখে,
ছায়াপথে মাকড়ের মতো নিঃশব্দে পার হয়ে গেলো!
কিছু আরশোলার নিঃসৃত তীব্র গন্ধ নাকে এসে,
পুনরায় ফিকে হয়ে গেলো! শৈশবের টয়ট্রেন,
এরই ফাঁকে হেলে দুলে নিয়ে এলো,
ভুবন ভোলানো মাঠ, কলমির কোলে শোয়া বৈরাগী-
ভ্রমর! আবার মিশেও গেলো কল্পিত ড্রাগন,
শুধু রোদেলা আগুন উনুনে জ্বলছে দেখে নারীদের-
কলপারে জলকেলি; ফোয়ারার মতো উচ্ছ্বল,
অপরিণত চোখে তারাও তো পরী; ডানাকাটা ছিলো!
তারপর তন্দ্রায় অতন্দ্রিলার মৃদু যাওয়া আসা শুরু,
ঝাপটানো স্পর্শে আজো তীব্র শীতের ছোয়ার মতো,
হই শিহরিত! পাশে থেকেও সে একান্তে বিবর্জিত!
তবুও মধ্যবয়সে তাড়া করে; ধাক্কা দিয়ে অন্ধকারে,
মধ্যরাতের তন্দ্রা মাটিতে মেশালো! ঘুম তো পন্ড হলো!
অবিশ্বাসের ত্রাসে ঝিমাচ্ছে চিরচেনা ওথেলো,
তবু ভয় হয়, এই বুঝি জেগে যায়! পাহারায় থাকি,
ঘুম এক বরফের পাখি; উষ্ণতা খুঁজে হারালো একাকী!
নির্ঘুম বলে জেগোনা দানবেরা রূপকথার শাবক,
বিনির্মাণে ব্যস্ত আছি তাসের ঘর; রাণীর অধিষ্ঠান,
সামান্য বাকি!


কালো ছাতা মেলে দিগন্তে উঁকি দিচ্ছে কাফকার শহর;
প্রতিদিন শতবার রূপান্তরিত হই পতংগে পরপর,
ঠিক নেই কোন! আশ্চর্যতম খেলা থামেনা কখনো!
তার চোখ ভাসে আকাশের চোখে,
বলে রাতজাগা কত লোকে! আমার হইনি দেখা,
এক-দুই-তিনে অন্ধকার গুণি; শেষ স্বচ্ছ হ্রদ নাকি,
বাষ্পীভূত হয়ে উবে যাচ্ছে একা একা! হয়নি দেখা!
সামনে ধুন্ধুমার! বাজাচ্ছে দুন্দুভি তারা চমৎকার,
জানো নাকি?
প্রাসাদের অলিগলি অনুপ্রবেশে জর্জর;
কোমর দুলিয়ে আগাচ্ছে শতবর্ষী পাপ; সম্মুখে সমর!


আমিতো পতংগ হই, তুমিও তাই! প্রতিদিন ভোরে-
হতে হয় নির্বোধ! বিষের আভাসে নিরূপায় হয়ে বাঁচি,
কীটনাশকের ভয়ে থামেনা কখনো কীটের জীবন!
ভিতরের নটরাজ নৃত্যে উন্মনা হলে উতলা বাতাসে,
চেপে ধরি গলা; বাহিরে এসোনা তুমি এভাবে প্রকাশ্যে!
চুপচাপ বসে থাকো কোটরের ভিতর!
মিছিলে মিছিলে মহামারী রাজপথ নিয়েছে দখলে,
সূর্যাস্তের মতো কতো লোক ডুবে যাচ্ছে সামান্য কাদায়,
কয়েকটা নেকড়ে পাল তোলা জাহাজে প্রচন্ড ব্যস্ত,
শব ছিড়ে খেতে; শ্বাপদ উল্লসিত মহোৎসবের কালে,
কটু গন্ধ কড়া পাকে ভিড়ছে শহরের উপকূলে!
তবু পূর্ণিমা পিকনিকে এখনো উচ্ছ্বসিত তরূণ তরূণী,
হেসে বলে 'যা করার করো' 'যা হবার হোক'!
ঘরে ফিরবো না এখুনি! অনেক দেরী মধ্যরাতের!
এ বাতাস অচেনা, চেপে আসে কন্ঠের স্বর!
হিসহিসে রাতে সরীসৃপের মতো আঁধার ঝরছে অঝর;
নির্ঘুম চোখ ক্লান্তিতে অবশ তবু মানেনা ঘুমের বশ!
সব মানুষকেই কি ভূতেরা করেছে ভর?


'ভয় নেই' বলে উষ্ট্রারোহী হলো কিছু লোক,
মৃদু হেসে বলে- 'চলো হাঁটি! সব পথ শেষ হবে একদিন!'
'ঊটের দলের সাথেই থেকো অর্বাচীন',
'পেয়ে যাবে কালপুরুষের নীচে স্তব্ধ পিরামিড',
গম্ভীর নীলে ছায়া তার খেলে সুপ্রাচীন!