একটা অদ্ভুত বৃত্তে পাক খাচ্ছে আত্মা মন,
বিশ্বকর্মার হাতুড়ির অগ্ন্যুৎপাতে গড়া ভাস্কর্যের মতো গাড়-
হাড় চামড়ার আবরণ; গোল হয়ে নৃত্যরত সারসের সাথে-
গান গায়; সারসীরা মরেছে বিবর্তনে,
জলাভুমি জলে নীল মার্বেলে সবুজের ছোপে জীবাশ্মের-
পাথর পোড়ানো গন্ধ! সারসীরা হারালো কোথায়?
ইন্দ্রজালে প্রলুব্ধ মেঘমন্দ্র নভোনীলে স্তব্ধ বসে কালিদাস!
উজ্জ্বয়িনীর পদ্মপুকুরে সুরম্য তালপাতার খাতায় রুদ্ধ,
প্রেমভিসারে মত্ত দেবদারু তলে একশৃঙ্গদের সূক্ষ দীর্ঘশ্বাস!
পায়ের নীচে মাখনের মতো নরম কর্দমে মিশে আছে,
পিষ্ট দুর্বা ঘাসের বর্ষণক্লান্ত আমোদিত নেশাতুর গন্ধ!  
সবকিছু বৃত্তের ভিতরে রমণীর রৌপ্যময় নুপূরের মতো
চন্দ্রবিলে ঘুরপাক খায়; মধুভৃৎ পরাগে জ্বলজ্বলে শিশিরেরে,
অমিয়সুধার পানীয় ভেবে, অন্তিম নৈশভোজের ক্ষুধায়,
দিল লাফ আগুনের ভিতরে! বৃত্তের কেন্দ্রে আগুন;
হাত মেলে পারস্যের উপাসক, চক্রাকারে নেচেছিল ধীরে,
নিবিষ্ট অগ্নিকে আনমনে বুকে নিয়েছিল টেনে!
উন্মুক্ত স্রোত মাখা কৃষ্ণকায় ঢেউয়ে, নির্লিপ্ত সন্তের মতো,
দুহাতে আকাশ নিতে গিয়ে, ঢুকে গেলো ফুসফুসে পাঁক,
মেঘের ছাতায় মধ্যনদীতে নিঃসংগ বাঁশের খুঁটির মাথায়,
ড্রাগন ফলের মতো ধরে আছে চাঁদ, তাকে ঘিরে পুনুরাবৃত্ত,
খাই ঘুরপাক! হাওরের বৈরাগী নৌকায় তুমিই তো বৈষ্ণবী,
টুংটাং বাজে একতারা, কন্ঠে ধ্রুপদী রাগ শুনে,
নদীও অবাক! অধরা ছায়ায় মিশে দেখে যাও প্রায়ই এসে,
কল্লোলিত শব্দ শুনে ছুঁতে গিয়ে বাষ্পে কুয়াশা এলো হাতে,
অশরীরি মরিচীকা ভেবে মারীচের পিছে পিছে,  
মৃগয়ায় পরিত্যক্ত জাহাজের মতো চলি ভেসে! ভাবি-
তুমি আলেয়ায় আলোকিত সন্ন্যাস! তবুও ভাদর আসে,
কামনারা জোনাকির ফুলে অন্তঃপুরে করে আসন বিন্যাস!  
উল্কা, মহাজাগতিক বর্জ্য সবকিছু অলৌকিক আকর্ষণে,
কেউ যেন নিচ্ছে কক্ষপথে টেনে! শুধু তুমি একা একা বসে,
গলিত স্বর্ণের মতো রৌদ্রঝলসানো সরিষার নীল বনে!
সেখানে নভোমণ্ডল পায়ে পায়ে ছুঁয়ে আছে অর্জুনের ছায়া,  
কচি লেবুপাতার সবুজে মেশানো সান্ধ্য কৃষ্ণচূড়ার আলোয়,
বিমোহিত রাধাচূড়া, অস্পষ্ট মানবীর মতো ছুটে আসে!  
কিছু ভালোবাসা রেখেছি ওখানে আনমনে,  
ইটের মতো পুড়ে খাঁটি; এক ছটাক ও কম হবেনা ওজনে!
বৃত্তের কেন্দ্রে বিস্ফোরিত আগ্রাসী আগুন,
তবুও ফড়িং এর তন্তুময় পাখা চুবানো সোনালি দোয়াতে!
ডুমুরের ফুল আলোকচ্ছটায় বর্ষাস্নাত হয়ে সুনীলে উড়লে,
আমিও ঝাঁপ দেই সবকিছু ভুলে!