শাহানার ঠিকানা
জীবনের শেষপ্রান্তে এসেও রইলো অজানা।
এইতো সেদিন অসহযোগ আন্দোলনে উত্তাল বাংলাদেশ
রাজপথ কাঁপা শ্লোগান
ছাত্র-জনতার উদাত্ত আহবান।আর নয় ঘরে বসে থাকা।
জানুয়ারির মাঝামাঝি তবুও চললো
বিয়ের আয়োজন।
যোগ্য পাত্র ভেবে-
শাহানার আপত্তি হার মেনে সানাই বাজলো একদিন ।
আনন্দ উৎকন্ঠায় শাহানার চিত্ত ।
বর এলো, হাত ধরলো; প্রাণে জোয়ার এলো
শিহরিত মনে খুঁজে নিলো নতুন ঠিকানা।


নিয়তির কাছে বন্দী জীবনে
মিটেনা সব চাওয়া
কে জানিত প্রারম্ভেই শেষ হয়ে যাবে শাহানার পাওয়া।
এলো কালরাত্রি, সাথে বিভীষিকা
তমসাচ্ছন্ন আকাশ । কপাল ভাঙলো শাহানার।
পাকসেনা ধরে নিয়ে গেল প্রাণের স্বামী।
আর ফিরে এলো না মানুষটি, এলো লাশ ।
ইতোমধ্যে শাহানার গর্ভে  জীবনের স্পন্দন।


অজান্তে বেড়ে স্পন্দন নিঃস্বরিত হয়ে
একদিন কোলজুড়ে এলো এক মেয়ে শিশু
শাহানা ভুলে গেল অতীত।
আবার স্বপ্ন, আবার এগিয়ে চলে
সে বেশিদিন নয়। একা চলতে কত রকম যে বিপদ হয়।
শাহানার জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়।
কলিকে বাঁচাতে আবার বসন্ত জাগ্রত হয় শাহানার মনে
নতুন করে বউ সাজা ।


ঘর এলো, বর পেলো কিন্তু মন ভরলোনা শাহানার।
তবু হারমানা জীবনে আবার হার মেনে
জীবন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া।
এলো নতুন কুড়ি, এক-দুই ।
তিনটেই মেয়ে শিশু । তবু তৃপ্তি, তবু আহ্লাদ ।
এটাই শাহানার জীবনের অতৃপ্তসাধ।


মেয়েরা বড় হলো, পড়ালেখা শেষে ভাল বিয়েও হলো
ইতোমধ্যে দ্বিতীয় বরও পরোপারে
শাহানা বড় একা।
মেয়েরা নিজনিজ সংসারে
কেউ দেশে আবার কেউবা প্রবাসে
বাড়-বাড়ন্তি নিয়ে সুখের সংসার
শাহানার ঠাঁই ঘুরেফিরে মেয়েদের বাড়ি বারবার
জীবন সায়াহ্নে শাহানা ভাবে আসলে কে কার ?


ঠিকানার খুঁজে অষ্টাদশি শাহানা
সেই কবে জীবনে ঝাঁপ দিয়েছিল
পেয়েছিল কাণ্ডারিও। কিন্তু আজ ?
কাণ্ডারিবিহীন শাহানা একা
তাই আজও শাহানা খুঁজে ফিরে একটি ঠিকানা
যেন বিধাতার অমোঘ নিয়মে বাঁধা
শাহানার অতৃপ্ত বাসনা ।