আমার কোলকাতা ছিল
শামসুল হূদা রোড, চামড়াপট্টি, শিববাড়ী,
পার্কসার্কাস ময়দান। আমার পূজোর
আনন্দ ছিল ময়দানের মাঠে এক মাস জুড়ে - কখনও মধুসূদন যাত্রা, কখনও নির্মলেন্দু চৌধুরীর ভাটিয়ালী গান।
দূর থেকে দেখেছি মডার্ন স্কুল, আর লাঞ্চের টাইমে গাড়ীর ভীড়, দাঁড়িয়ে থেকেছি বেগবাগানের বাস-স্ট্যান্ডে
যাদবপুরের পয়তাল্লিশ নম্বর বাসের জন্যে।
মাঝে মাঝে লেডী ব্রেবোর্ন কলেজে হেঁটে চলে যাওয়া
টিকিটের পয়সা বাঁচাতে, মাঝে মাঝে গোল পার্কের লাইব্ররীতে সময় কাটানো
বইয়ের মাঝে।
কখনও আলিপুরের ন্যাশনাল লাইব্রেরীর দিকে পাড়ি
দেওয়া কোন অজুহাতে। এইট বি বাস স্ট্যান্ডে অনেক গল্প, অনেক আড্ডা - সেই বন্ধুরা কোথায় হারিয়ে গেলো,
খুঁজে পাইনা ফেসবুকেও। যাদবপুরের কফি হাউসে পা দিতে সাহস পাইনি কোন মতেও।


সরে গিয়েছি অনেক দূরে,


কোলকাতা পালটে গেছে।


বৃটিশ কাউন্সিল ছিল খুব দূরে নয়,
শেকস্পীয়ার আর ডিকেন্স ওখানেই দেখেছিলাম প্রথম,
আর নিউ মার্কেটও একবার পথে এসে যেতো। ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতাম কিছু না কিনেই, বাস-ভাড়াটুকু হাতে পেলেই যথেষ্ট।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের ভেতরে ঢুকেছিলাম একদিন,
ইউনিভার্সিটির ক্লাস পালিয়ে কি, তা তো মনে নেই!
মুক্তাঙন? আমার শিক্ষিকা মাসীর প্রিয়
নাটকের পীঠস্থান।


কোলকাতা পালটে গেছে! খুব দ্রুত! আর একটু ধীরেসুস্থে হলে ভালো হতো!


পালটে তো যায়নি বৃষ্টির সোঁদা গন্ধ,  কলেজ থেকে ফিরতে কাকভেজা হয়ে কি আনন্দ!
চুপচুপে শাড়ী, মেকআপ কাকে বলে জানা তো ছিল না,
চুলের বিনুনী বেয়ে পড়েছে জলের ঝর্ণা!


সেই মাটির গন্ধই নিয়ে যায় টেনে,
যা কিছু ফেলে এসেছিলাম, আবার সেখানে!