কবি কেন কবিতা লেখে এই প্রশ্নটির কোন একরৈখিক উত্তর নেই।কবি তার চারপাশে যা কিছু দেখে,সেসব দেখে ও অনুভব করে বস্তুতন্ত্রের ভেতর যখন নিজের মনকে পুরোপুরি আসন দিতে পারে না তখন সে কল্পনা ও ভাবের সাগরে ডুব দেয়।কখনও আবার চেনা খণ্ডদৃশ্যের মুগ্ধতা তাকে নিয়ে যায় নতুন কোন বিমুগ্ধতার সন্ধানে।কখনও আবার চারপাশের নিপুণ অথচ সংযোগহীন উপাদানের মধ্যে তিনি এক নতুন যোগসূত্র দিতে চান।এভাবে এই প্রত্যক্ষ জগত কবিতার অপ্রত্যক্ষ জগতকে কবির মানসপটে প্রতিনিয়ত নির্মাণ করে চলে।
আমাদের জগত ও জীবন যতটা যুক্তিপূর্ণ মনে হয় আসলে ঠিক ততটা নয়।ঘড়ির কাঁটায় কাঁটায় দিন-রাতের আবর্তন হলেও সমস্ত প্রকৃতির নির্দিষ্ট ব্যাকরণ নেই।তা হয়তো একটি সাধারণ পথে চলে কিন্তু কখন কোন ঘুপচিগলিতে ঢুকে পরে নতুন পথ নির্মাণ করবে তার ঠিক নেই।প্রকৃতির মত মানুষের জীবনেও এই অনিশ্চয়তা সবসময় বিরাজমান।কী শরীর কী মন কোন কিছু সম্পর্কেই ভবিষ্যৎবাণী করা যায় না।আজ একজনের নাড়ীনক্ষত্র পরীক্ষা করেই বলা যায় না তিনি এতদিন সুস্থ থাকবেন বা এতদিন বাঁচবেন।মানুষের মনের জগত তো আরও অস্থিতিশীল।সর্বোপরি ব্যক্তির অস্তিত্বের সংকট,চারপাশের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির সংঘাত ইত্যাদি তার চেতনাকে মহাজাগতিক ইশারার পথে নিয়ে যায়।পঞ্চইন্দ্রিয়ের বাইরে অথচ পঞ্চইন্দ্রিয়ের সমন্বয়ে নিজেকে আরও বৃত্তভেদীভাবে অনুভবের এই প্রেরণা তাকে কবিতার ভূমি নির্মাণে সহায়তা করে।
কবিতা হয়তো জীবনের অর্থহীনতাকে মহিমান্বিত করতে চায়।জীবনের প্রতিটি কর্মকাণ্ডে যে মানুষ বিভ্রম আবিষ্কার করেন,যে বিভ্রমে না পড়েও যার উপায় নেই--এত এত ভুলের গুহায় নিক্ষিপ্ত মানুষ আত্মপরিশুদ্ধির জন্য কবিতা লিখবেন না তো কী করবেন?কবিতা মূলত এই বস্তুতান্ত্রিক জগতের বিপরীতে প্রতিস্পর্ধী এক ভাষিক জগত যেখানে ধ্যানমগ্ন কবি বুদ্ধের মত অনুসন্ধান করে চলেন নির্বাণের পথ।এই নির্বাণ একেক কবির কাছে একেক রকম।কেউ অর্থ খুঁজে পেয়ে খুশি কেউ অর্থহীনতার সৌন্দর্যে বিভোর।
মানুষ হিসেবে মানুষ যা যা নয়,আর যা যা সে হতে পারতো,আর যা যা তার গন্তব্যে থাকা উচিত ছিল কবিতা তার ক্ষতিপূরণের ট্যাবু ও টোটেম।
মানুষ জানে মহাকালে সে প্রান্তভেদী কোন রেখা নয়।মহাকালের কোন এক প্রান্তরে হঠাৎ জ্বলে উঠে হঠাৎ তার নিভে যাওয়া।কে তাকে জ্বালাচ্ছে কে তাকে নেভাচ্ছে--নানা মতবাদ থেকে সে তার উত্তর পেলেও নিজস্ব অভিজ্ঞতা দিয়ে তাকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে না।তাই সব বড় কবির রচনাতেই মৃত্যুচিন্তা ও অস্তিত্বের সংকট এক বিরাট প্রকল্প নিয়ে উপস্থিত হয়।ফলে অবচেতনের পথে সে সন্ধান করে বহুমাত্রিক জীবনের সংকল্প।
কবি কেন কবিতা লিখে এই প্রশ্নের সামান্য উত্তর দেওয়ার পর কিছুটা আলোকপাত করা যাক কবিসত্ত্বার উপর।কবি কেন কবিতা লিখে--মূলত এই প্রশ্নের উত্তরেই আছে কবিসত্ত্বার বৈশিষ্ট্য।কবি এমন এক সত্ত্বা যে ক্ষুদ্র বস্তুকেও মহজগতের সাথে একত্র করে তার বিরাট সৌন্দর্য দেখতে সক্ষম।ফলে আঙিনায় ঘোড়ার খুড়ের আঘাতে সামান্য গর্তে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে আকাশের প্রতিবিম্ব দেখতে তার সমস্যা হয় না।
আবার একই কারণে কবির এই বিশ্ববিক্ষণই তাকে কোন একক সৌন্দর্যে মগ্ন করে রাখতে পারে না।ক্ষুদ্র দেখেই সে যেমন চোখ সরিয়ে নেয় না তেমনই কোন বড় কিছুও আবার তার মনকে এককেন্দ্রিক করে ধরে রাখতে পারে না।ফলে দিনশেষে কবি কোন নির্দিষ্ট ঠিকানায় নিজেকে নিবদ্ধ করতে পারেন না।এক আশ্রয়হীন বোধের জগতে তখন চলতে থাকে তার যাযাবর জীবন।কবির এই ভেতরের আশ্রয়হীনতা তার বাইরের জীবনকেও বিক্ষিপ্ত করে।ফলে কবিকে ব্যক্তিগত জীবনে প্রায়ই হতে হয় বিচ্ছিন্ন,প্রতিভাবান হয়েও জাগতিক যৌক্তিক সাফল্যের পথে নিজেকে পরিচালিত করতে তিনি প্রায়ই ব্যর্থ হন।বাইরে ও ভেতরে বিক্ষত কবি তখন মাতৃখেকো কবিতার কাছেই নিজেকে সমর্পন করেন।এ ছাড়া তার আর কোন উপায় থাকে না।
(চলবে......)
২৬/০৩/২৩
২
বর্তমানে বাংলাদেশে বইমেলাকে কেন্দ্র করে সাহিত্যজগত যেভাবে আবর্তিত হচ্ছে তা একদিকে যেমন আশার অন্যদিকে তেমনি হতাশার।আশার এ কারণে যে,বইমেলাকে কেন্দ্র করে লেখক-পাঠক- প্রকাশকদের মাঝে যে উচ্ছ্বাস লক্ষ করা যায় তা আনন্দের।অন্যদিকে হতাশার এ কারণে যে বইমেলার বাইরে সাম্প্রতিক সাহিত্য জগত যেন অনুজ্জ্বল এক মৌন দ্বীপ হয়ে গেছে।বইমেলার বাইরে হাতে গুনা কিছু বই ছাড়া আর কোন নতুন বই প্রকাশ হয় না বললেই চলে।ফলে লেখক-পাঠকদের ধারাবাহিক বিকাশ প্রক্রিয়া এক্ষেত্রে লক্ষ করা যায় না।বছরের একটি সময় জ্বলে ওঠে বাকি সময়টা যেন তারা শীতনিদ্রায় চলে যান।
আবার দেশে একশ্রেণীর প্রকাশক তৈরি হয়েছে যারা শুধু বইমেলাতেই টাকার বিনিময়ে বই প্রকাশ করেন।ধরা যাক তিনি যদি বইমেলাতে ২৫ টি বই প্রতিটি ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রকাশ করেন তাহলে তার অন্তত দেড় লাখ টাকা লাভ হওয়ার কথা।বই বিক্রির কোন চিন্তা নেই,নতুন পাঠক তৈরির কোন মাথাব্যথা নেই---বইমেলার আগে মাত্র দুই মাস পরিশ্রম করে এই বাড়তি অর্থলাভ বৈষয়িক দিক থেকে খারাপ নয় নিশ্চয়!এবার বছরের বাকি সময়টা আয়ের অন্যপথে মন দিলেই হল।এভাবে এইসব হাইব্রিড প্রকাশকদের কাছে বাংলা সাহিত্য কুক্ষিগত হয়ে পড়ছে।অপরদিকে শৌখিন টাকাওয়ালা লেখকদের ভীড়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে জীবনঘনিষ্ঠ প্রকৃত লেখক।একবারে সব বই এর মহান ক্রেতা যখন লেখক নিজেই হয়ে যান তখন দুর্বৃত্ত প্রকাশকের পক্ষে বিত্তহীন লেখকের জন্য পাঠক খুঁজে মরাটা কাব্যিকতা ছাড়া কিছুই নয়।লেখককে রয়্যালটি দেওয়ার ব্যাপারটা তখন তার কাছে কাঁথামোড়ানো ঘুমে পানি ঢেলে দেবার মতোই আতঙ্কময়।
৩
ইতিহাসের যেকোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক তরুণ/তরুণী সাহিত্যচর্চায় মনোযোগ দিয়েছেন।ইতিহাসের যেকোন সময়ের চেয়ে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বই,বিশেষ করে কবিতার বই এখন প্রকাশিত হচ্ছে।তবু নব্বই পরবর্তী বাংলা কবিতা কবি ও কবিপ্রত্যাশীদের বাইরে বিস্তীর্ণ পাঠকের কাছে কেন পৌঁছতে পারছে না তা এক ভাবনার বিষয়।যারা সমকালীন কবিতা চর্চার সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত তাদের জিজ্ঞেস করে লাভ নেই,আপনি যদি দেশের কোন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীকে আচমকা পথে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করেন যে, এই সময়ের জীবিত কোন কবিকে সে চেনে কিনা--আমার বিশ্বাস কবিতায় সদ্য একুশে পদক পাওয়া কবিকেও সে চিনবে না।অপেক্ষাকৃত তরুণ কবিদের কথা তো অনেক দূরের বিষয়।
এটা ঠিক যে নব্বই পরবর্তী কবিতা এমন বৈশিষ্ট্যকে নিজের জন্য অপরিহার্য ঘোষণা করেছে যার ফলে জনপ্রিয় ধারার কবিতা তার পক্ষে লেখা সম্ভব হচ্ছে না।তবে কেউই টিকে থাকার মত বা পাঠক মহলে মনোযোগ পাওয়ার মত লিখছে না সেটাও সত্য নয়।নব্বই পরবর্তী কবিরা আসলে জনপ্রিয় কবিদের অজনপ্রিয় ধারার কবিতার মত করে লিখছেন।সেখানে বুদ্ধি,কৌশল,পরিশ্রমের চিহ্ন স্পষ্ট।আর এই চিহ্নের স্পষ্টতাই তাকে সহজপাচ্য হতে বাধা দিচ্ছে।সব মহৎ কবিতাতেই পরিশ্রমের এই চিহ্নগুলো অন্তরালে চলে গিয়ে তার প্রকাশটা বড় হয়ে ওঠে।ফলে পাঠক পঙক্তির প্রক্ষেপনে খুব গভীরভাবে মুগ্ধ হন।
ইতিহাসে যারা বিখ্যাত কবি তারাও এই ধরণের কবিতা লিখতে পারেন তাদের মোট কবিতার ৫-১০ শতাংশ।কেউ কেউ মাত্র ২ টি বা ৫ টি কবিতার জন্যই মহাকালে স্থান পেয়ে যান।তার নামে সেগুলিই বার বার পড়া হয়।বাকি কবিতাগুলি হয়তো উচ্চস্তরের গবেষকগণ বা কোন কবিপ্রত্যাশী তার কবিতার কৌশল উন্নয়নে পড়ে থাকেন।এই ২ টি বা ৫ টি কবিতা যে কেউ চাইলেই লিখতে পারেন না।স্বয়ং নজরুলও সমস্ত জীবনে আর 'বিদ্রোহী'র আশেপাশে কোন কবিতা লিখতে পারেননি।তবে যিনি শব্দ দিয়ে নয় জীবন দিয়ে কবিতা লিখেন তার কাছে এমন কিছু কবিতা একজীবনে ধরা দেয়ই যা তাকে মহাকালে টিকিয়ে রাখে।এজন্য কবি হতে গেলে নিজেকেও কিছুটা কবিতা হতে হয়।
৪
বর্তমানের ভাল লেখাগুলোও আমাদের চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে।ফলে যারা ভাল লিখছেন তারা যথেষ্ট প্রাপ্য না পেয়ে আরও ভাল কিছু লেখার প্রেরণা পাচ্ছেন না।আসলে বর্তমানে সাহিত্যের কোন প্লাটফর্ম নেই।আর এত বই বছরের একটা সময়ে একসাথে প্রকাশ হয় যে সেখান থেকে প্রকৃত লেখাগুলো খুঁজে বের করা সম্ভব হয় না।একটা প্রধান সমস্যা হল আমাদের লেখাগুলোর যথার্থ আলোচনা /সমালোচনা হচ্ছে না।যা লেখা হচ্ছে বাংলা সাহিত্যে তার অবস্থান কোথায় তা নিয়ে কেউ লিখছেন না।প্রশংসা তো দূরের কথা,এখন নিন্দা করারও কেউ নেই।নিন্দা করতে গেলেও তো অন্তত কিছুটা পড়ে দেখতে হবে।একটা সময় ছিল যখন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সমকালীন সাহিত্য নিয়ে নানা প্রবন্ধ লিখতেন।এখন সেই প্রবণতা একদমই দেখা যাচ্ছে না।এখন তারা শুধু চাকুরিজীবীতে পরিণত হয়েছেন।যেটুকু গবেষণা করছেন সেটাও ক্যারিয়ার গড়ার জন্য পিএইচডি বা অন্য কোন ডিগ্রী লাভের জন্য।সেই থিসিসও আবার প্রকাশিত হচ্ছে পরিপূর্ণ ইংরেজি ভাষায় যার কোন বাংলা অনুবাদ পর্যন্ত করা হচ্ছে না।ফলে জনগণের টাকায় সম্পাদিত এসব থিসিস আমাদের কোন উপকারেই আসছে না।শুধু রবীন্দ্র-নজরুল-জীবনানন্দ আর নয়,নব্বই পরবর্তী বাংলা সাহিত্য নিয়েও গঠনমূলক থিসিস করার সময় এখন এসেছে।যেহেতু নব্বই পরবর্তী সাহিত্য অঙ্গনে বড় ব্যক্তিত্ব এখনও সামনে উঠে আসেনি সেক্ষেত্রে বর্তমানকালের নানা সাহিত্যিকের সম্মিলিত সাহিত্যিক প্রবণতা নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে।এক্ষেত্রে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর এগিয়ে আসা উচিত।কিন্তু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না বলে সেই স্বপ্ন আজ হয়তো দুঃস্বপ্ন।
দেশের সাহিত্য পত্রিকাগুলোরও এখন করুণ অবস্থা।একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির বাইরে তা পৌঁছতে পারছে না।কারণ এইসব সাহিত্য পত্রিকার যথেষ্ট প্রচারণা নেই এবং একটি নির্দিষ্ট পরিমণ্ডলের বাইরের লেখকেরা সেখানে লেখার সুযোগ পাচ্ছেন না।দেশের স্বনামধন্য দৈনিক পত্রিকাগুলোতে প্রতি সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে যে সাহিত্যপাতা বের হয় তার অবস্থা আরও করুণ।এগুলো এখন সমকালীন সাহিত্যের কোন প্রতিনিধিত্বই করে না।দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য পাতাগুলোতে কদাচিৎ মানসম্মত লেখা দেখতে পাওয়া যায়।ছোট গল্পে কিছুটা সমৃদ্ধ থাকলেও নিতান্ত কাচা হাতের প্রবন্ধ ও কবিতায় ভরপুর থাকে পাতাগুলো।এর কারণ হল দক্ষ সম্পাদনার অভাব।সাহিত্য পাতার সম্পাদকরাও এটাকে জাস্ট একটা চাকরি হিসেবে নিয়েছেন মনে হয়।কোন রকমে নির্দিষ্ট দিনে পাতাটা ভরাতে পারলেই হল।এখানেও চেনা পরিমণ্ডলের বাইরের খুব কম লেখা প্রকাশিত হয়।অনেক ভাল লেখা তাদের মেইলে পড়ে থাকে কিন্তু অপরিচিত নাম হওয়ায় তা তারা পড়েও দেখেন না।এভাবে দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য পাতাগুলো পাঠকের মনোযোগ হারিয়েছে।ফলে এখানে নিয়মিত লিখেও কেউ সাহিত্য অঙ্গনে নিজস্ব স্থান নির্ণয় করতে পারছেন না।
৫
বর্তমানে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা বিসিএসকে কেন্দ্র করে ঘুরপাক খাচ্ছে।অনার্স-মাস্টার্স পাশ করে একজন শিক্ষার্থীর যখন আরও উচ্চতর গবেষণায় আত্মনিয়োগ করার কথা তার পরিবর্তে সে বাধ্য হচ্ছে আবার ক্লাশ সিক্স থেকে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত ভুলে যাওয়া সকল বিষয় মুখস্ত করতে।এতে তার লেগে যাচ্ছে ২-৪ বছর।চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা থাকবে এটা স্বাভাবিক কিন্তু তার সিলেবাস এমন হবে কেন যে তা একজন শিক্ষার্থীর সাম্প্রতিক অনার্স-মাস্টার্সের উপর না হয়ে পূর্বজন্মের মত ভুলে যাওয়া বিষয়ের উপর হবে?এটা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির মত তার সাম্প্রতিক সিলেবাসের উপর হলে কোথায় কী এমন বিপর্যয় সৃষ্টি হত!পরিবারের সবাই যখন তাকিয়ে আছেন তার ছেলে/মেয়ে একাডেমিক পড়ালেখা শেষ করে এবার পরিবারের হাল ধরবে এমন অবস্থায় কতজনের পক্ষে সম্ভব আবার ২-৪ বছর মেয়াদী রুদ্ধদ্বার পড়াশোনায় নিজেকে নিয়োজিত করা?সৃষ্টিশীল মানুষের পক্ষে এটা আরও অসম্ভব।তবু অনেককেই ছুটতে হচ্ছে এই সোনার হরিণের পেছনে।কারণ এর বাইরেও তাদের জন্য নিরাপদ কোন আশ্রয় নেই।এভাবে একটা সমাজ ও রাষ্ট্র যখন মানুষের সাথে প্রতারণা করে তখন তার সবকিছুই সংকোচিত হয়ে যায়।বাইরের মুক্ত হাওয়াতেও সে নিজেকে কারাবন্দী মনে করতে শুরু করে।
অপরদিকে আমাদের শিল্প-সাহিত্যে বিসিএস কেন্দ্রিক এই বিদ্যাচর্চার প্রভাব ভয়াবহ।দেশের বেশিরভাগ লাইব্রেরি পাঠকশূন্য।কারণ সাহিত্য পড়ে বা অন্যান্য জ্ঞান অর্জন করে কী লাভ যখন চোখের সামনে রয়ে গেছে বিসিএস নামক এত বড় পুলসিরাত।সুতরাং ওটা পাড় হওয়াই এখন সবার একমাত্র লক্ষ্য।এখন অনেকেই তাদের সন্তানদের পরামর্শ দিচ্ছেন যেন তারা অনার্স ফার্স্ট ইয়ার থেকেই বিসিএসের বইগুলোর উপর চোখ বুলাতে শুরু করেন!ফলে দেশের প্রথিতযশা পাবলিক লাইব্রেরিগুলোতেও এখন বিসিএস পরীক্ষার্থীদেরই ভীড়।আমি নিজেই এ দৃশ্য দেখেছি।এভাবে লাইব্রেরিতে সাহিত্য ও অন্যান্য গবেষণার বইগুলোতে শুধু সময়ের ধূলো জমছে ও জাতি এক মেধাহীন প্রজন্ম সৃষ্টি করছে।
এখন কালজয়ী সাহিত্য রচনা না করে কেউ যদি বিসিএস এর একটি ভাল বই লিখতে পারেন আশা করা যায় সেটা দিয়ে তার অনেক বেশি উপকার হবে।প্রকাশকদেরও এখন এদিকেই বিশেষ আগ্রহ।ইউটিউবে সাহিত্য বিষয়ক হাজার বুলি ছেড়ে লাভ নেই,বিসিএস বিষয়ক একটি ভিডিও ছেড়ে দেখবেন কয়েক মাসেই তার ভিউ হাজার থেকে লাখ ছাড়াবে।
এখন সাহিত্য চর্চা করবে কে....আর তা পড়বে কে....নাভিশ্বাস ফেলা,জ্যাম ঠেলা প্রাইভেট চাকরিজীবীগণ নাকি মুখস্তবিদ্যার কঠিন পথে নিজেদের সমস্ত সৃষ্টিশীলতাকে খুইয়ে আসা সেইসব অস্ত্রবিহীন ক্যাডারগণ....
৬
বর্তমানে উপন্যাস খুব সংকটজনক পরিস্থিতি পাড় করছে।মূলত তথ্যপ্রযুক্তির চানাচুর বিনোদনের এই যুগে উপন্যাস পড়ার মত লোক যেমন কম,উপন্যাস লেখার মত ধৈর্য্য দেখাবে এমন লেখকও কম।উপন্যাসের নামে বইমেলা উপলক্ষ্যে যা লেখা হচ্ছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা বড়গল্প ছাড়া কিছু নয়।উপন্যাসে একটা পার্শ্বচরিত্রের জীবনেও যে পরিমাণ উত্থান-পতন বা বৈচিত্র দেখা যায় এখন উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রেও তা পাওয়া যায় না।
হুমায়ূন আহমেদ বাংলা উপন্যাসে নিঃসন্দেহে একটি জনপ্রিয় ধারা সৃষ্টি করেছেন।কিন্তু সেই বোহেমিয়ান ও রূপক জীবনকেই আশ্রয় করে যদি সমস্ত সাহিত্য ঘুরপাক খায় তবে তা নিঃসন্দেহে আতঙ্কের কারণ।নদী তো চলবে বহু পথে,বহু শাখা-প্রশাখায় তার জল গড়াবে।নদীর সমস্ত জল যদি হলুদ রঙের পাঞ্জাবীতে আছড়ে পড়ে তবে বাংলার বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ-ঘাট দেখবে কে?তার জনপদের কথাইবা বলবে কে?
বর্তমানে আমাদের পৃথিবী যে ক্রান্তিকাল পাড় করছে,যুদ্ধ-মহামারী,আন্তর্জাতিক বা সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ইত্যাদিতে মানুষের জীবন যেভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে তা নিয়ে কোন উল্লেখযোগ্য উপন্যাস লেখা হয়েছে বা হচ্ছে কি?
আসলে লেখবে কে?সময়টা এত সুস্বাদু প্রতারক.....
উপন্যাসের নায়ক তো কখনও উপন্যাস লেখে না।
৭
রবীন্দ্রসঙ্গীত মূলত বাণীপ্রধান।সাধারণভাবে সঙ্গীত একটি সুরপ্রধান শিল্প।সেখানে সঙ্গীত বিষয়ক নানা প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ গানে ভাবকে সুরের উপর যেভাবে প্রাধান্য দিয়েছেন তা খুবই ব্যতিক্রম।এখান থেকেই রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিশীলতার উৎস সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।ভাবকে আশ্রয় করায় এবং তার গানের সুর সেই ভাবের অনুগামী হওয়ায় রবীন্দ্রসঙ্গীত এখনও চিরনতুন।
নজরুল আবার ছিলেন সুরের পাগল।তিনি কবি হওয়াতে তার গানের বাণীও অসাধারণ হয়েছে কিন্তু তার গানে সুরই প্রধান।সুরের খুঁজে তিনি কোথায় যাননি!ভাটিয়ালি,জারি-সারি,ভারতীয় নানা প্রদেশের ক্লাসিক্যাল মিউজিক নানা জায়গা থেকে তিনি সুর আহরণ করেছেন।এমনকি ইরানি গানের সুরেও তিনি গান বেঁধেছেন।১৯৩০-৪০ এই দশ বছর সুরের এই তীব্র সাধনাই তাকে বাকরুদ্ধতার দিকে নিয়ে গেছে কিনা কে জানে!
রবীন্দ্র ও নজরুল--বাঙালী এই দুই সাধকের কাছে চিরকাল ঋণী।
পরবর্তীতে চলচ্চিত্র নির্ভর ও আধুনিক গানের নামে বাংলা গান একান্তভাবে মেলডি প্রধান হয়ে ওঠে।সুরের গুণে "তুমি কেন এলে না/আর ভাল লাগে না" জাতীয় অনেক বাণীও জনপ্রিয় গান হয়েছে।ব্যতিক্রম যে নেই তা নয় কিন্তু বাংলা গানে বাণী ও ভাবের জোয়ার সেইভাবে আর দেখা যায়নি।বাংলা গানে বাণীকে আবার কাব্যিকতায় ফিরিয়ে আনেন কবীর সুমন।কিন্তু তার পরবর্তী উত্তরসাধক আর দেখা যায়নি।বর্তমানে তো বাংলা গান প্রবেশ করেছে এক গুনগুনময় রিমিক্স সঙ্গীতে যার সবচেয়ে হিট গানটিও ছয়মাসের বেশি টেকে না।বর্তমানে তাই কবিদের আবার গানের দিকে কিছুটা মনোযোগ দেওয়া উচিত।
৮
হিন্দি ভাষাটা গানের জন্য খুবই উপযোগী।হিন্দি ভাষায় যুক্তবর্ণের শব্দ খুবই কম এবং শব্দগুলো অধিকাংশই মুক্তাক্ষর বিশিষ্ট।ফলে স্বরধ্বনিকে টেনে ইচ্ছেমত সুর করা যায়।এটা এমন এক লতানো ভাষা চাইলেই গানে একে মাটি থেকে তুলে আকাশে নিয়ে যাওয়া যায় আবার একনিমেষে মাটিতে নেমে যাওয়া যায়।হিন্দি গান তাই এত দ্রুত মানুষের হৃদয়ে প্রবেশ করে।
হিন্দি ভাষায় গান রচনার এই বিশেষ সুবিধার কথা নজরুলও উল্লেখ করেছেন।তাই তো লোভ সামলাতে না পেরে বাংলা গানেও তিনি নির্দ্বিধায় ব্যবহার করেছেন হিন্দি শব্দবন্ধ---"আলগা করো গো খোপার বাঁধন/দিল ওহি মেরা ফাসগেয়ি"।
৯
সুর একটি সর্বগ্রাসী ব্যাপার।কেউ যখন সুরের সাধনায় মগ্ন হন তার অন্যান্য প্রতিভা সেখানে তলিয়ে যায়।নজরুল তার সৃষ্টিশীল জীবনের শেষ দশ বছরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার গান লিখেছেন ও সুর করেছেন।তার মানে প্রতিদিন তাকে অন্তত একটি গান লিখতে ও সুর করতে হয়েছে!মাত্র দশ বছরে এত গান সৃষ্টি করা এক বিশাল ব্যাপার।এই দশ বছর তিনি কবিতা ও সাহিত্যের অন্যান্য শাখায় একদমই মনোযোগ দিতে পারেননি।রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে হিসাব আলাদা।তিনি ঋষি প্রতিভা।তিনি আশ্চর্য সাধনায় তার সমস্ত সৃষ্টিশীলতার মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করতে পেরেছিলেন।
১০
সাধারণভাবে কথা কোন শিল্প নয়।কথাকে শিল্পরূপ দিতে গেলে হয় তাতে আনতে হয় নাটকীয়তা নয়তো বোধের গাঢ় প্রক্ষেপণ অথবা সুরের মূর্ছনা।সুরের মূর্ছনায় কথা হয়ে ওঠে গান;নাটকীয়তায় গল্প,উপন্যাস বা নাটক।কিন্তু কবিতার ক্ষেত্রে সুরের অভাবকে ঘুচিয়ে দিতে আনতে হয় অনেক কিছু।কিছুটা ছন্দের দোলা,কিছুটা বোধের প্রক্ষেপণ,কিছুটা আড়াল,কিছুটা আরও অনেক কিছু।আবার বিষয় অনুযায়ী এসবের মাঝে রাখতে হয় ভারসাম্য।সুতরাং কথার ভাস্কর্য নির্মাণে কবির কাজ কোনকালেই সহজ ছিল না,আজও নয়।
১১
সাহিত্যে রাজনীতি আছে,খুব কঠিনভাবেই আছে।সাহিত্যের রাজনীতি একেবারে যে খারাপ জিনিস তা নয়।মানুষ যেহেতু রাজনৈতিক প্রাণী সবজায়গায় তাকে রাজনীতি বুঝতে হয় অথবা রাজনীতির কলকাঠি হতে হয়।কিন্তু সাহিত্যের এই রাজনীতিটা হওয়া উচিত তরকারিতে লবণের মত মৃদু।সৃষ্টিশীলতা ছেড়ে ওদিকে বেশি মন দিলে বিপদ আবার একদম তা না বুঝলেও ক্ষতি।
তবে মজার বিষয় হল ফেসবুক আসার পর তা সাহিত্যের এই রাজনীতিকে বিক্ষিপ্ত করে দিয়েছে।এখন আর এর কোন কেন্দ্র নেই।এখন অনেকগুলো দল,উপদল আছে কিন্তু কেউই তারা প্রধান নয়।এটা একদিক থেকে ভাল আরেকদিক থেকে খারাপ।ভাল এজন্য যে, লেখা প্রকাশের জন্য কোন পীর ধরতে হচ্ছে না আবার খারাপ এজন্য যে, তরুণেরা অগ্রজদের পথনির্দেষ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।সাহিত্যের রাজনীতি কেন্দ্রহীন হওয়ায় আবার ভাল লিখেও কেউ সামনে আসতে পারছে না।কারণ সাহিত্যের এককেন্দ্রিক কোন মিডিয়া নেই।আগে বুদ্ধদেব বসুর 'কবিতা' পত্রিকায় লেখা ছাপা হলে তার মোটামুটি একটা কবিস্বীকৃতি জুটে যেত।কিংবা 'দেশ' পত্রিকায় লেখা ছাপা হলে তার একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হত।এখন প্রথম আলোতেও মাসের পর মাস কবিতা ছেপে লাভ নেই।
বাংলা সাহিত্যের অনেক নামকরা সাহিত্যিক আছেন যারা যতটা না প্রতিভাবান তার চেয়ে বেশি পরিচিতি পেয়েছেন বড় বড় পত্রিকার সাথে সরাসরি সংযোগ ও সাহিত্যরাজনীতির কেন্দ্রে অবস্থানের জন্য।তবে এর ব্যতিক্রমও আছে।যেমন বিনয় মজুমদার।তিনি সাহিত্যের রাজনীতিতে উপেক্ষিত হয়েও পাঠকমহলে সমাদৃত।সেটা তার অত্যন্ত গভীর কিছু কবিতার জন্য,সাহিত্যের রাজনীতি যাকে আড়াল করতে পারেনি।
বর্তমান এই পরিস্থিতি কতটা ভাল আর কতটা মন্দ হিসেব করা কঠিন।তবে চলছে যখন চলুক।অদূর ভবিষ্যতে অনেক 'সবাই রাজা'র ভেতর একজন সম্রাট হয়তো উঠে আসতেও পারে।
১২
আবৃত্তিধর্মী কবিতাকে আজকাল অতি সংবেদী কেউ কেউ তরল ও লঘু কবিতা হিসেবে গণ্য করে থাকেন।এমনকি শামসুর রাহমান ও নির্মলেন্দু গুণের বিবৃতিধর্মী কবিতাকেও তারা আক্রমণ করতে ছাড়েন না।দীর্ঘদিন কবিতার সাথে যুক্ত এমন অগ্রজকেও এধরণের পোস্ট দিতে দেখেছি।দেখে মর্মাহত হয়েছি।
বিবৃতিমূলক বা আবৃত্তিধর্মী হলেই তার কাব্যিক মান নেমে যাবে এর যুক্তি কোথায়?যেকোন শব্দ ও ভাষা মানুষের বোধে যদি প্রক্ষিপ্ত হতে পারে,ভেতরে যদি তুমুল আলোরণ তুলতে পারে অথবা মৃদু শিহরণ জাগাতে পারে--সেটাইতো কবিতা।
প্রকৃত কথা হল আবৃত্তিধর্মী কবিতায় উপরিচালাকি চলে না।সত্তার একদম তলদেশ থেকে ওঠে আসলেই কেবল তা তরঙ্গপ্রবণ আবৃত্তিধর্মী হতে পারে।আমরা তো নাগরিক বিলাসে আজ সত্তার তলা খুইয়েছি!সুতরাং ইতিহাসটা অন্য কোথাও।
তরল মানেই সহজলভ্য নয় আবার ঘন-সংবদ্ধ মানেই মূল্যবান নয়।মূল্যবান হল তারা কী বহন করে এনেছে তা।
১৩
সাহিত্যের নানা শাখার পাঠক কমলেও বর্তমানে কিন্তু কবিতার পাঠক বেড়েছে।কারণ কবিদের সংখ্যা অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে রেকর্ড ছাড়িয়েছে।আর বলাই বাহুল্য বর্তমানে কবিতার মূল পাঠক এই কবিরাই।আমাদের পাঠ্য বইয়ের কবিতাগুলো এখনও ১৯৩০ সালের সিলেবাস পার করতে পারেনি বলে বর্তমানে কবি ও নিজস্ব সাধনায় সূক্ষ্মানুভূতি সম্পন্ন গুটিকয়েক মানুষের বাইরে কবিতার পাঠক কম।
বর্তমানে উপন্যাসের পাঠক কমলেও ছোটগল্পের পাঠক এখনও আছে।স্ট্যাটাসটা লিখতে চেয়েছিলাম মূলত এই বিষয়ে যে,বর্তমানে অনেক লেখক/কবি আছেন যারা দীর্ঘদিন সাহিত্যকর্মের সাথে জড়িত থাকার পরও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তার সৃষ্টিকর্ম মুলতবির ঘোষণা দিচ্ছেন।এর অনেক ধরণের কারণ থাকতে পারে।প্রথমত তিনি হয়তো তার চারপাশ থেকে একদমই প্রেরণা পাচ্ছেন না।দেশে প্রচারযোগ্য তেমন কোন লিটলম্যাগ বা আগের মত আত্মপ্রত্যয়ী সাহিত্যসম্পাদক নেই।আবার তিনি পয়সা খরচ করে ২০০ কপি বই বের করলে হয়তো তার ২০ কপিও বিক্রি হচ্ছে না।এভাবে ৫/১০ টা বই বের হওয়ার পর যে কারও পক্ষেই প্রেরণাহীন হওয়া সম্ভব।
ফেসবুকের এই যুগে লেখক/কবিদের মাঝে সংযোগ বাড়লেও আন্তরিকতা কিন্তু বাড়েনি।বাড়লে আমরা অন্তত আমাদের কাছের বন্ধুর বইটা কিনতাম ও তার প্রচারের দায়িত্ব নিতাম,দুই লাইন পাঠ-প্রতিক্রিয়াও দিতাম।বর্তমানে লেখক/কবিরাই যেহেতু পাঠক তাই মনের সকল কৃপণতা দূর করে আমাদের একে অপরকে প্রেরণা দেওয়া উচিত।
এক অগ্রজ আমাকে বলেছিলেন "সাহিত্যজগতে কোন বন্ধু নেই।সবই শকুন"। কথাটি শুনে মর্মাহত হয়েছিলাম।আমরা চাই একথা মিথ্যা প্রমাণিত হোক এবং কবি/লেখকেরাই পরস্পরের সবচেয়ে নিকটাত্মীয় হোক।