প্রাতিষ্ঠানিক শিল্প ও সাহিত্যমঞ্চের বাইরে লোকশিল্প এক বিরাট অধ্যায়। বলা যেতে পারে লোকশিল্প মানুষের  একমাত্র অকৃত্রিম শিল্প। এটা শিল্পের জন্য শিল্প নয়,জীবনের সতঃস্ফূর্ত উৎসারণই এর মূল।প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পীরা যেরকম খাতা-কলম নিয়ে তাদের শিল্প সৃষ্টিতে নিয়োজিত হন,লোকশিল্পের শিল্পীদের ক্ষেত্রে তা হয় না।ফলে শিল্প-সাহিত্যের কাঠামো,শব্দভারসাম্য,আদর্শ ইত্যাদি সম্পর্কে সচেতন না থেকেই তারা শুধুমাত্র তাদের প্রাণের কথাটুকুই উচ্চারণ করেন।ফলে নন্দনতত্ত্ব ও শিল্প আদর্শের কৃত্রিমতা এড়িয়ে তা সহজেই মানুষের হৃদয়গ্রাহী হয়ে গড়ে ওঠে।প্রাতিষ্ঠানিক শিল্প-সাহিত্যও হৃদয়গ্রাহী হয় তবে তার এই হৃদয়গ্রাহীতা অনেক সময়ই আবিষ্কার করে নিতে হয়,কৃত্তিমতা এড়িয়ে তার অকৃত্রিমের সন্ধান করতে হয়।কিন্তু লোকশিল্পের পুরোটাই অকৃত্রিম,কেননা তা হৃদয়ের সম্পদ।লোকশিল্প কোনকালেই শিল্পের দাবি নিয়ে ভদ্র সমাজে উপস্থিত হয়নি,তার প্রয়োজনীয়তাও তার নেই।মঞ্চ, খ্যাতি,সমারোহ এসবকে বরাবরই সে অগ্রাহ্য করেছে।অগ্রাহ্য কথাটা বলাও বাতুলতা,কেননা এ ব্যাপারে সে সচেতনই নয়।জীবন ও পারিপার্শ্বিকের প্রয়োজনে তার উদ্ভব।প্রকৃতি ও জীবনের সাথে সংগ্রাম,সম্পর্ক ও বিরোধই তার শিল্পের মূল কথা। ফলে এর বাইরে তার আর কোন প্রত্যাশা নেই। অর্থাৎ শিল্প সৃষ্টিতে সে সচেতন নয়,একান্ত অন্তর্মুখী।অথচ এই লোকশিল্প আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পের সূতিকাগার।লোকশিল্প,লোকআদর্শ,লোকধারণা,লোকগান, লোকাচার ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করেই আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক জীবন গড়ে উঠেছে।তাই ভদ্র সমাজ লোকসংস্কৃতির স্বীকৃতি দিক বা না দিক,তার অবদানকে অবচেতনে নিজের ভেতরে সে বহন করে বেড়াচ্ছে এ কথায় কোন সন্দেহ নেই।


লোকসাহিত্যের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তার সরলতা ও সহজবোধ্যতা।একান্তভাবে তার লোকজীবনের সাথে সম্পৃক্ত বলেই লোকসাহিত্য এত প্রাঞ্জল হয়ে সৃষ্টি হয়।লোকসাহিত্য একজনের সৃষ্টি নয়।প্রথমে তা একজনের মাধ্যমে সৃষ্টি হলেও পরবর্তীতে সমাজের মানুষের মুখে মুখে ও আচরণের ভিতর দিয়ে বিবর্তিত হয়।ফলে সবসময়ই সমাজে তার উপযোগিতা থাকে।তাই লোকসাহিত্যকে গবেষকগণ সমাজের সৃষ্টি বলে উল্লেখ করে থাকেন।তবে লালন ফকির,শাহ আব্দুল করিম প্রমুখ শিল্পীদের সৃষ্টিতে লোকজ ভঙ্গি ও লোকজ উপকরণ থাকা সত্ত্বেও তাদের ব্যক্তিগত উচ্চমার্গীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও শিল্পআদর্শের কারণে সমাজ তাদের নামকে আড়াল করতে পারে না।সমাজ সেখানে ব্যক্তির নামেই উপস্থিত হয়।


লোকশিল্পের সাথে প্রকৃতির থাকে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। মূলত প্রকৃতির উপর ভিত্তি করেই লোকশিল্প রূপ লাভ করে। ছড়া,প্রবাদ,লোককাহিনী,গীতিকা, লোকগান সকল ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য। যেহেতু প্রকৃতি মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং জীবনের সারকথাই লোক সাহিত্যের প্রধান উপাদান,তাই প্রকৃতির সাথে তার নিবিড় সম্পর্ক।ফলে একই ভাষা ও জাতীয়তা বহন করেও বিভিন্ন স্থানের লোকসাহিত্য বিভিন্ন রকম হয়। এজন্য উত্তরের ভাওয়াইয়া এর সাথে দক্ষিণের ভাটিয়ালি মেলে না,আবার মধ্যবঙ্গের গম্ভীরার সাথে পশ্চিমবঙ্গের ঝুমুর গান মেলে না।ভাওয়াইয়া ও ভাটিয়ালি গানে এক ধরনের একাকিত্বের সুর পাওয়া যায়।গরুর গাড়ির চালক ও নৌকার মাঝি তাদের একাকীত্ব দূর করতেই এই ধরনের গান গেয়ে থাকেন।ভাটিয়ালি গানে নদীর বিস্তারের সাথে মিল রেখে তার প্রবহমানতার মত একটানা বিস্তার লক্ষ্য করা যায়।ফলে এখানে কোন তাল সৃষ্টি হয় না শুধু একটানা আর্তনাদ ভেসে উঠে। ভাওয়াইয়া গানের ক্ষেত্রে গাড়ির চালক একাকীত্ব বোধ করলেও পথের উঁচু-নিচু ও গাড়ির নিয়ন্ত্রণ তাকে ব্যতিব্যস্ত রাখে।ফলে সে একটানা সুরে মত্ত হতে পারে না।উপরন্তু পথের উঁচু-নিচু,উঠানামা তার স্বরকে প্রায়ই ধাক্কা দেয়।গবেষকগণ বলেছেন এ কারণেই ভাওয়াইয়া গানে স্থানে স্থানে 'হ' ধ্বনির সৃষ্টি হয়েছে ।পথের আকস্মিক এই উত্থান-পতনের জন্যই  ভাওয়াইয়া গানের সুর হঠাৎ করে উপরে উঠে আবার হঠাৎ করেই নিচে নেমে যায়।


লোক ছড়াগুলো মূলত শিশুদের জন্য রচিত হলেও তা বড়দেরও মনোরঞ্জন করে।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেশকিছু লোকছাড়া সংগ্রহ করে সেগুলো প্রকাশ করে গেছেন,যা এখনও খুব জনপ্রিয়।লোকসংস্কৃতির প্রতি তিনি খুব অনুরাগী ছিলেন। লোকশিল্পী লালনকে তিনিই সর্বপ্রথম সভ্য সমাজে প্রকাশ করেন।লোকছড়ায় ভাবের কোন ধারাবাহিকতা থাকে না,তাতে শুধু শিশুমনের অবাধ কল্পনায় উৎসারিত কল্পনাচিত্র থাকে।তাই তা এত হৃদয়গ্রাহী হয়।প্রবাদ,প্রবচন,গীতিকা ইত্যাদি প্রত্যেকটি শাখা লোকসাহিত্যের সমৃদ্ধ শাখা।এসবের বৈশিষ্ট্য ও বিকাশ নিয়ে গবেষকগণ বিস্তারিত আলোচনা করে গেছেন।তা নিয়ে আর নতুন করে বলার কিছু নেই।আমাদের বর্তমান জীবনের উপর লোকসাহিত্যের কি প্রভাব ও লোকসংস্কৃতি কী কারনে আজ ধ্বংসের প্রান্তে তাই আমার আলোচনার বিষয়।


লোকসংস্কৃতির প্রত্যক্ষ প্রভাব লক্ষ্য করা যায় মধ্যযুগের সাহিত্যে।মধ্যযুগের আদি নিদর্শন 'শ্রীকৃষ্ণকর্তীন' এ রাধাকৃষ্ণ বিষয়ে শাস্ত্রীয় মতামতকে অনুসরণ করা হয়নি।হিন্দুশাস্ত্র যেখানে রাধাকৃষ্ণের অপঙ্কিল প্রেমকাহিনীর কথা বলছে এই কাব্যে সেখানে কৃষ্ণকে মানবীয় পঙ্কিল গুণসম্পন্ন করে উপস্থাপিত করা হয়েছে।শাস্ত্রমতে রাধার বয়স যখন দশ অথবা এগার তখন কৃষ্ণ মথুরায় চলে যান এবং রাধার সাথে তার আর কোনদিন দেখা হয়নি।তাহলে সাহিত্যে তাদের পরিণত বয়সের প্রেমানুভূতি কোথায় থেকে এল?এটা এসেছে মূলত কাব্যের প্রয়োজনে কবিকল্পনা ও লোকধারণার উপর ভিত্তি করে।শাস্ত্র অনুযায়ী যেখানে রাধাকৃষ্ণের বস্তুগত মিলন হয়নি সেখানে বৈষ্ণব কবিগণ কৃষ্ণকে মথুরা থেকে ফিরিয়ে আবার রাধার কাছে এনেছেন,কারণ সে যুগে বিরহ দিয়ে কাব্য শেষ হওয়ার রীতি ছিল না।লোককাহিনীর শেষ লাইনে "অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলো" এই কথার যে প্রাচুর্য লক্ষ্য করা যায় সেই মনোভাবের প্রভাবই রাধাকৃষ্ণের মিলনে কবিদের উৎসাহী করে তোলেছে।বলা যায় লোকআশাকে এখানে নিরাশ করা হয়নি,তাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।চৈতন্য পরবর্তী বৈষ্ণব সাহিত্যে রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা আধ্যাত্মিক ও উচ্চমার্গীয়ভাবে উপস্থাপন করা হলেও সেখানেও মিলনাত্মক এই ধারাকে উপেক্ষা করা হয়নি।মঙ্গলকাব্যেও যেভাবে লৌকিক দেবদেবীকে আর্যদেবদেবীর সাথে সম্পর্কযুক্ত করা  হয়েছে,তাদের উপর হিংসা-প্রতিশোধ ইত্যাদি মানবীয় গুণাবলি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে তা স্পষ্টভাবেই লৌকিক সংস্কৃতি প্রভাবিত।তাদের আসন,বসন সবক্ষেত্রেই লৌকিক আচারের প্রভাব পড়েছে।দেবত্বকেও তারা লৌকিকতা দ্বারা অলংকৃত করেছেন।আরাকান রাজসভার কবিদের অনুবাদ সাহিত্যেও একইভাবে পার্শ্বচরিত্র হিসেবে লৌকিক চরিত্র ঢুকে গেছে এবং মূলের কাহিনী হুবুহু গ্রহণ না করে তারা সেই ঘটনার লৌকিক রূপ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন।


আধুনিক সাহিত্য একান্তভাবে ইউরোপীয় প্রভাবিত হওয়ায় মোটাদাগে সেখানে লোকসংস্কৃতির উপাদান ব্যবহৃত হয়নি।তবে লোকসংস্কৃতির নানা উপাদানকে সাহিত্যে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।ব্যক্তিমনের আত্মঅনুসন্ধানই আধুনিক সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য।সেখানে সমাজ এসেছে ব্যক্তির সাথে তার সম্পর্কের ভিত্তিতে,সমাজের সার্বজনীন অনুভূতি নিয়ে নয়।রবীন্দ্রনাথ লোকসংস্কৃতির চর্চা করলেও তার পরিশীলিত শিল্পে সরাসরি তার প্রয়োগ ঘটাননি।যদিও লালনের তত্ত্ব তাকে আকর্ষণ করেছিল এবং তার কিছু গানে বাউল আদর্শের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।নজরুল আরবি-ফারসি শব্দের যতটা চর্চা করেছেন সেই তুলনায় লোকশব্দ কবিতায় ব্যবহার করেননি।তবে তিনি তার বেশকিছু গানে ভাটিয়ালি সুর ব্যবহার করেছেন।লোকসুর তাকে আকর্ষণ করেছিল।বাংলা কবিতায় লোকজ শব্দের সার্থক ব্যবহার ঘটান সর্বপ্রথম জীবনানন্দ দাশ।তার 'রূপসী বাংলা' লোকচিত্র ও লোকশব্দে ভরপুর।তার অন্যান্য কবিতাতেও এর বহুল প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়।জীবনানন্দ পরবর্তী কবিতায় লোকজ উপাদানের সার্থক প্রয়োগ ঘটান আল মাহমুদ।অবশ্য তিনি জীবনানন্দের মত প্রাকৃতিক চিত্র আঁকেননি।তার কবিতায় লোকজ উপাদান এসেছে অনুষঙ্গ হিসেবে,বিষয় হিসেবে নয়।এছাড়া সৈয়দ শামসুল হকের 'পরাণের গহীন ভিতর' কবিতায় লোকজ উপাদান ব্যবহৃত হয়েছে অত্যন্ত সার্থকভাবে।উত্তরাধুনিক কবিতায় মানুষের সার্বিক জীবনই যখন উপেক্ষিত তখন লোকসংস্কৃতি যে সেখানে স্থান পাবে না এটা স্বাভাবিক।কেউ কেউ তার সামান্য চর্চা করে থাকলেও মোটাদাগে তা ধরা পড়েনি।


লোকজীবন দ্বারা মানুষের সবকিছুই প্রভাবিত।একই ধর্মের একই বিষয় সমাজের বিভিন্নস্থানে লোকাচারে পার্থক্যের জন্য সামান্য হলেও পরিবর্তীত হয়ে অনুষ্ঠিত হয়।একই প্রমিত বাংলা রিডিং পড়ার সময় রাজশাহীর মানুষ এক টানে পড়েন,সিলেটের মানুষ আরেক টানে পড়েন।একই খাদ্য একেক অঞ্চলের মানুষ একেক প্রক্রিয়ায় প্রক্রিয়াজাত করেন।তাদের খাদ্যগ্রহণের প্রক্রিয়াও বিভিন্ন।কোন অঞ্চলে মাদুরে বসে খাওয়ার রীতি,কোন অঞ্চলে পিড়ীতে বসে খাওয়ার রীতি।আজকাল অবশ্য কী গ্রামে,কী শহরে সম্পন্ন পরিবারে ডাইনিং টেবিলে খাওয়ার রীতিই দেখা যায়।খাদ্যগ্রহণের পার্থক্যটা আমি নিজের চোখেই দেখেছি।অফিসের একই ডাইনিংটেবিলে বসে খাবার সময় রংপুরের লোককে দেখেছি শুরুতেই মাছ-মাংস,সবজি ও ডাল একসাথে মিশিয়ে নিতে।ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষকে দেখেছি বেশি বেশি মরিচ খেতে।অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের ক্ষেত্রেও এরকম সূক্ষ্ণ অনেক পার্থক্য আছে উপযুক্ত গবেষণায় যা বেরিয়ে আসবে।এখানে অবশ্য লৌকিকতার সাথে আঞ্চলিকতার বিষয় এসে পড়ে।লৌকিক আর আঞ্চলিকের মধ্যে বড় বিরোধ নেই।আঞ্চলিক শব্দটি লৌকিক শব্দের চেয়ে আরও বিস্তীর্ণ বিষয়কে ধারণ করে।বহুল বিখ্যাত ঢঙে তাই বলা যায়,যা কিছু লোকজ তার সবই আঞ্চলিক আবার যা কিছু আঞ্চলিক তার সব লোকজ নয়।


আমরা জানি সংহত সমাজ বলতে বিশ্লেষকগণ যে আত্মনির্ভরশীল সমাজকে বুঝিয়েছেন তা আর  এখন অবশিষ্ট নেই।তার বিনোদন এখন অন্য কারও দখলে।তার ওপর বিশ্বায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে বিদেশী সংস্কৃতি প্রান্তিক জনগণকেও স্পর্শ করেছে।ফলে লোকসংস্কৃতি তার কদর ও সৃষ্টির প্রেরণা হারিয়েছে।এখন গরুর গাড়ির চালক বা মাঝির গান গেয়ে আর তার একাকীত্ব দূর করার প্রয়োজন হয় না।তার সাথে প্রায়শই একটি মোবাইল ফোন থাকে যেটা তার গানের এই খোড়াককে পূর্ণ করে ফলে।যদি সে মোবাইলে তার অঞ্চলের ভাওয়াইয়া বা ভাটিয়ালি গানও শুনতে থাকে তবু সে নতুন সৃষ্টতে আগ্রহী হয় না।ফলে লোকসাহিত্য ও লোকসংস্কৃতির সৃষ্টিমুখ এভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।আচার,আচরণ,খাদ্যাভ্যাস,আসবাবপত্র,গৃহ নির্মাণ সকল ক্ষেত্রে এখন গ্রামীণ সমাজে নগর সভ্যতার অনুকরণ লক্ষ্য করা যায়।ফলে বস্তুগত লোকসংস্কৃতিও একইভাবে আর বিকশিত হচ্ছে না।এভাবে সাধক বাউলের পরিবর্তে একধরণের গায়ক বাউলরা সমাজে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে।সভা সেমিনার,বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাশে,গবেষণায় লোকসাহিত্যকে ব্যবহার করে নানাজনের জীবনচর্যার ব্যবস্থা হলেও লোকসংস্কৃতির তা বিশেষ উপকার করছে না।বর্তমানে একমাত্র আদিবাসী সমাজই তাদের নিজস্ব কিছু সংস্কৃতি ধরে রাখতে পারছে কিন্তু যেহেতু বৃহত্তর সমাজে তা অনুপ্রবেশের যোগ্য নয় তাই গবেষকগণ তাকে মূল লোকসংস্কৃতি থেকে পৃথক করে লোক সংস্কৃতির এক বিশেষ শাখা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।


মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ,খাদ্যাভ্যাস,কথা বলার ভঙ্গি সবক্ষেত্রেই পাশ্চাত্যকরণ হচ্ছে।ফলে জাতীয় সংস্কৃতিই যেখানে ধ্বংসের মুখে তখন লোকসংস্কৃতির অবস্থা কী হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়।বাঙালীর হাজার বছরের একধরনের লোকচিকিৎসা ছিল।আধুনিক চিকিৎসার সাথে তা পারঙ্গম নয় সত্য,কিন্তু অন্তত প্রাথমিক চিকিৎসায় তা উপকারি।ওরিয়েন্টাল মনোভাবের ফলে তাকেও  আমরা অবজ্ঞা করেছি।লোকসংস্কৃতির সাথে সাথে লোকসংস্কৃতির চর্চাও এখন বিলুপ্তির পথে।তার জন্য যে নিবিষ্ট সাধনা, অবসর ও নিষ্ঠা চাই তা আর এখন মানুষের নেই।