প্রাণের বই মেলা শুরু হয়ে গেল।এবার মেলাতেও হাজার খানেক করে নতুন উপন্যাস ও কবিতার বই বেরুবে,যার ৯৯ ভাগই হবে তরুণ লেখক ও কবি।কিন্তু বরাবরের মত এবার বই মেলাও প্রতিশ্রুতিশীল কোন তরুণ লেখককে খুঁজে বের করতে পারবে না।এত বড় বই মেলার মধ্য দিয়ে একটি নতুন মুখও কেন সার্বজনীন ভাবে পরিচিতি বা মূল্যায়ন পায় না?তবে কি কেউ যুগের চাহিদা অনুযায়ী লিখতে পারছে না,নাকি অযোগ্য লেখকদের  আধিক্যতার কারনে যোগ্যদের খুঁজে বের করা সম্ভব হচ্ছে না?


উত্তর আমার জানা নেই।তবে সাহিত্যের খুব বন্ধ্যা সময় চলছে এখন।আমাদের ভাবতে হবে কেন এমন হচ্ছে।শুধু ছাপার অক্ষরের জঞ্জাল বাড়িয়ে কি এমন লাভ।পরিস্থিতি অনেক সময় বড় সাহিত্যিক গড়ে তোলে।আমাদের সময়টাই হয়তো বন্ধ্যা।আমাদের জীবনে শিল্প সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে এমন কোন ক্রাইসিস নেই।জীবনে ক্রাইসিস না থাকলে বড় কবি বা লেখক হওয়া যায়না।ভাবছেন বলে কি ছেলে? আমাদের জীবনে ক্রাইসিস নেই!আবারও বলবো শিল্প সৃষ্টির মত যথার্থ কোন ক্রাইসিস নেই।থাকলেও আমরা তাকে গভীর ভাবে অনুভব করিনা বা করতে পারি না।শুধু চাল ডাল আর নুনের ক্রাইসিস মানুষের সাহিত্যের ভাবকে উজ্জ্বল করে না।আমাদের জীবনে ব্যস্ততা আছে,ক্লান্তি আছে,অবসাদ আছে কিন্তু জাতীয় জীবনে সামগ্রিক কোন স্বপ্ন নেই,আমাদের জাতীয় মন আজও গড়ে উঠেনি।


এই ইলেক্ট্রনিক যুগে খুব গভীরভাবে কিছু উপলব্ধি করার মত সময় আমাদের নেই।খুচরো সময় কাটানোর অনেক মাধ্যম আছে আমাদের।তাই বেশির ভাগ সময় আমাদের লেখায়ও বিশেষ ব্যতিক্রম কিছু থাকে না  যা অন্যদের খুব করে আকর্ষণ করতে পারে।তাছাড়া আমাদের লেখায় আজকাল ভাবের চেয়ে পান্ডিত্য থাকে বেশি।লেখাকে বার বার জটিল করে বুঝাতে চাই কত উচ্চ ভাব ধারার লেখক আমরা। আধুনিক কবিতার কথা কি আর বলব, ওটাকেতো আমরা তামাশায় পরিণত করেছি।যা খুশি লিখছি,ভাবের ঐক্য থাক বা না থাক।কোন অর্থ দাঁড়াক বা না দাঁড়াক।


তাছাড়া আমরা  সমাজের সাথে এক প্রকার আপোষ করে ফেলেছি এবং সমাজের যাবতীয় সুযোগ ভোগ করে ভুক্তায় পরিণত হয়েছি।সমাজের সাথে আমাদের বিরুধ বড় অল্প। কবি,লেখকদের চলতে হয় চিরাচরিত পথ থেকে ভিন্ন পথে।তাদেরকে বিদ্রোহ করতে হয় প্রচলিত জড় সমাজ ব্যবস্থার।তাদের স্বপ্ন এনে দিতে হয় মানুষের  চোখে।তা না হলে মানুষ তাদের লেখা পড়বে কেন?মানুষের মনকে জাগিয়ে দেবার মত লেখা লিখতে হবে আমাদের।মস্তিষ্ককে জাগানোর জন্য বিজ্ঞান আছে।সাহিত্যে অতিরিক্ত বিজ্ঞান ও পান্ডিত্য প্রবণতা সাহিত্যকে রসহীন করে তুলছে।


তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে আমাদের কল্পনা করার সুযোগও অনেক কমে গেছে।সব কিছুই স্পষ্ট এখন আমাদের কাছে।ফলে আমাদের কল্পনা শক্তিও বিকশিত হচ্ছে না।অথচ বড় সাহিত্যিক হতে হলে থাকা চাই কল্পনা করার প্রবল শক্তি।থাকতে হয় রহস্যকে নির্মাণ করার বিপুল দক্ষতা।কিন্তু আমাদের জীবনে আজ কতটুকুই বা রহস্য আছে?থাকলেও তাকে অনুভব করার মত সাধনা ও সময় আছে কি?আমরা নিজেকে কতটুকু আবিষ্কার করতে পেরেছি?নিজেকে আবিষ্কার করতে না পারলে অন্যদের কি আর এমন দেবার থাকে আমাদের।ঠাকুর মার ঝুলির চেয়ে আজকালকার শিশরাও মোবাইল বা পিসিতে গেমস খেলতেই বেশি ভালবাসে।কানামাছি খেলার চেয়ে কার্টুন দেখাতেই তাদের আগ্রহ বেশি।রূপকথায় তাদের আকর্ষণ নেই।টিভিতে যে রূপকথা দেখানো হয় তাতে কল্পনার বিকাশ হয় না।ফলে কল্পনায় অদক্ষ পাঠক কুলের কাছে সাহিত্য নিয়ে যাওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।বাজারে মননশীল সাহিত্যের চেয়ে বরং সস্তা মেগাজিনের কাটতি তাই বেশি।


যাদের ভাব নেই তারাইতো দুর্ভাবের সন্ধান করেন।জীবনের সহজ কথাকে সহজ করে বলতে পারেন এক মাত্র জাত লেখকরাই।অন্য দিকে যারা অল্প পরিশ্রমে খ্যাতি পেতে চান তারা চান তাদের লেখায় চমক দেখাতে।এ জন্য যা খুশি তারা করেন।কিন্তু চমক বিষয়টাই একটি ক্ষণস্থায়ী ব্যাপার।বেশি ক্ষণ তার রেশ থাকে না।


কারিগরীর দিকে বেশি নজর দিলে শিল্প হয় না,পণ্য হয়।কারখানায় গড়া পুতুল পণ্য,যদিও তা নিখুঁত।নিজের হাতে গড়া পুতুল শিল্প,যদিও তার নাকটি বোচা থাকে।


(চিন্তাগুলো একান্তই ব্যক্তিগত,কোন সিদ্ধান্ত নয়।বানান বিভ্রাট মার্জনীয়)