'চায়ের দোকান' কবিতাটি শুরু হয়েছে সাদামাটা কিন্তু চমকপ্রদ এক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে।এমন একটা চায়ের দোকানের পারিপার্শ্বিকতা দিয়ে, যেখানে একশ সতের পদের চা পাওয়া যায়।প্রথমে মনে হয় আমাদের চেনাজগতের কোথাও অত্যন্ত চেনা দু'টি চরিত্রের মাঝে ঘটছে এই ঘটনা।এরপর একের পর এক অসাধারণ সব ঘটনা সেখানে ঘটতে থাকে।পরীক্ষার জন্য অর্ডার দিয়ে একপর্যায়ে তারা পান--জলপ্রপাতের সাথে মৌমাছির ডানার গুঞ্জনসহ কিশমিশ আর আমলকিমিশ্রিত চা।আবার আরেকটা চা ছিল, যেটা খেলে ক্ষুধা নিবারণ হয়।কিন্তু একশ ষোল পদের চা পেলেও--জ্যোৎস্নার সাথে অ্যালোভেরা মিশ্রিত চা তারা পাননি।এই না পাওয়ার ভিতর দিয়ে ঘটনাকে একটা বাস্তব চেহারা দেয়া হয়েছে।কল্পনায়,কিছু  পাওয়া যায় না--কথাটি কল্পনা করতেও আমাদের কষ্ট হয়।


অপ্রত্যাশিত ঘটনাটি এমন ইন্দ্রজালবিস্তারকারী ভাষায় বলা হয়েছে যেন সবকিছু খুব সাধারণভাবেই ঘটছে।অবাস্তব বিষয়কে বাস্তবতার সাথে তিনি এমনভাবে মিশিয়ে দিয়েছেন যে,তাকে বাস্তবতারই অংশ বলে মনে হচ্ছে।অবশেষে যখন বলছেন--
"ভাবছি এবার শীতের ছুটিতে পৃথিবীতে যাবার সময় ঐ চা বানানোর পদ্ধতিটা শিখে যাব। তারপর আমরা পৃথিবীতে একটা ক্ষুধা নিবারক চায়ের দোকান খুলে বসব"..তখন তা খোলামেলা বর্ণনার আড়ালে ব্যখ্যাহীন চমকের ভিতর দিয়ে জীবনের গভীর সমস্যাকে নির্দেশ করেছে,যা জাদুবাস্তবতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।


কবিতাটির পটভূমি বাস্তব পৃথিবীর সাথে সংগতিপূর্ণ মনে হলেও তা ঘটছে পৃথিবীর বাইরের কোন স্থানে--যে তথ্য কৌশলে গোপন করা হয়েছিল শুরুতে।ফলে শেষদিকে সেই রহস্য উদঘাটনে কিছুটা চমক সৃষ্টি হয়েছে।আবার তথ্য ও চমকপ্রদ বিষয়গুলো সম্পর্কে অতিরিক্ত কোন ব্যাখ্যা দিয়ে কবিতাকে অর্থহীনভাবে অবিশ্বাস্য করে তুলা হয়নি পাঠকের কাছে।শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রথম পুরুষের নিচু এক স্বরে বর্ণিত হয়েছে কবিতার ঘটনা,যেখানে বাস্তব পৃথিবীর ঐশ্বর্য ধ্বসে পড়েছে অবাস্তবতার সামনে।কবিতাটিতে সময় একরৈখিকভাবে চলেনি।অতীত সবসময় বর্তমানের সামনে প্রকাশ্য থাকার পাশাপাশি দরজায় কড়া নেড়েছে ক্ষুধাক্লিষ্ট পৃথিবীর চিরন্তন ভবিষ্যতও।


নিচে তুলে দিচ্ছি তার কবিতাটিঃ


"চায়ের দোকান

ভাবছিলাম অদ্ভুত সেই চায়ের দোকানের কথা—একশ সতের পদের চা পাওয়া যেত যেখানে? তুমি বলছিলে, সব মিথ্যে! এসব নিতান্তই বিজ্ঞাপন। অত রকম চা নিশ্চয়ই বানানো সম্ভব নয়! আমরা পরীক্ষা করার জন্য একেকদিন একেকটা চায়ের অর্ডার দিতে শুরু করলাম।


একশ ষোল পদের চা আমরা পেয়েছিলাম। জ্যোৎস্নার সাথে অ্যালোভেরার চা দিতে পারেনি কালো দোকানদার। মনে আছে কিনা, একটা চা খেয়েছিলাম, জলপ্রপাতের সাথে মৌমাছির ডানার গুঞ্জন, কিশমিশ আর আমলকিমিশ্রিত। আরেকটা চা ছিল, যেটা খেলে ক্ষুধা নিবারণ হয়। সেই এক কাপ চা পানের পরবর্তী এক সপ্তাহ আমরা আর কোনো ক্ষুধা বোধ করিনি।


ভাবছি এবার শীতের ছুটিতে পৃথিবীতে যাবার সময় ঐ চা বানানোর পদ্ধতিটা শিখে যাব। তারপর আমরা পৃথিবীতে একটা ক্ষুধা নিবারক চায়ের দোকান খুলে বসব।"
(রাসেল রায়হান/ বিব্রত ময়ূর)