বিদ্যা সঙ্কট লিখে ছিলাম এক বছর আগে, লেখাটা আমার মনে দাগ কেটে ছিল তাই শেয়ার কোরলাম l


আমার নাম সমীর বারুই ,এই বাংলায় থাকি
গ্রামের স্কুলে পড়ার জন্য রোজ দু মাইল হাটি,
আমার বাবা সকাল বিকেল পরের মাঠে খাটে
মা  যায় রোজ শহরে, আয়ার কাজে।
বাবা ছিল টিপ সই  মা এইট পাশ
তাদের ছেলে কলেজ যাবে এই ছিল বিশ্বাস।
ঘরের পাশে পাঠশালাতে ভর্তি হলাম আমি
খাওয়াটাই মুখ্য সেথায়, পড়ার থেকেও দামি।
পাঠশালা শেষ করে, গেলাম বড় স্কুলে
ভর্তি হয়ে বাড়ী এলাম বাবার কাঁধে চড়ে।
আট্টা বছর কেটে গেল দেখতে দেখতে;
বাবা তো আর পারেনা মাঠের কাজে যেতে
সংসারের ভারটা তাই মায়ের ওপর চাপে,
সবুজ সাথীর সাইকেলটা মাকে দিয়েছি তাই,
আসতে যেতে একঘন্টা বেচেছে তাতেই।
সাইন্স নিয়ে HS দিয়েছিলাম এবার
1st Division এ পাশ করেছি পেয়ে ভাল নম্বর।
স্যাররা বলেন ভালো কলেজে পড়তে হবে এবার
তাই তো তোকে যেতে হবে গ্রামের বাহার,
জেনেশুনে Online এ ভরেছিলাম ফর্ম
কোলকাতারই নামী কলেজে ডাক যে পেলাম।
এ কথাটা বলতে এসে দেখি,বাবার চোখে জল,
মার আনন্দ বাঁধ মানে না চোখ করে ছল্ ছল্ –
এবার এলো টাকার পালা কেমনে জোগাই?
যা ছিল তা আগেই গেছে বাবার চিকিৎসায়
মা এসে বল্লো আমায়, তুই করিস না ভয়
লক্ষীর ভাড়ে জমাই পয়সা হয়ে যবে নিশ্চয়,
এ পয়সায় কিছু হবে না,তাতো আমি জানি
কিন্তু আমি এমন কথা কেমনে বলি?
মা আমার মনের কথা অচিরেই জানে
অভয় দিয়ে চলে গেল সেকরার দোকানে;
ফিরে এসে মা দিল এক গুচ্ছ টাকা
তাকিয়ে দেখি মার কান হয়েছে ফাকা।
এটা ছিল মার শেষের সম্বল
সেটাই আমায় নিতে হলো চোখে আসে জল।
এবার আমার যাবার পালা কোলকাতা শহরে,
স্যারের সাথে চলে এলাম সেই কলেজে,
কত বড় গেট তার কি বিশাল বিল্ডং!
এই খানে যে পড়তে পাবো কখনো ভাবিনি,
কত কত লোক তাদের কি বিচিত্র সাজ,
একেই বলে কোলকাতা তা বুঝলাম আজ।
স্যার বলেন লাইনে দাঁড়া হাতে নিয়ে ফরম,
আমি একটু জেনে আসি হোস্টেলের নিয়ম ।
একটা ছেলে হঠাৎ এলো আমার পাশে
বল্লো আমায়,“কি বিষয়ে নেবে ঠিক করো আগে,
পয়সা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরো অনেকে,
কোন বিষয়ে কত টাকা, লাগবে ভর্তি হতে
তা তো তোমার লেখা আছে UNION অফিসে,
যাও গিয়ে ঠিক করো,জমা করো টাকা,
তবেই তোমার ভর্তি নেবে কলেজের খাতা।”
আমি বলি আমার বাবা ছিল দীন মজুর
পয়সা দিয়ে পড়ার চেষ্টা সাধ্যের বহু দূর,
1st Divisionএ পাশ করেছি Mark Sheet নম্বর ভরা
আমি হোলাম গ্রামের ছেলে অনেক কষ্টে পড়া,
সেই ছেলেটা হেঁসে বলে-
লাভ হবে না লাইন দিয়ে, ভর্তি অনেক দূর
গ্রামে যাও চাষ করো ছেড়ে দাও পড়া
সবাই যদি পড়া করে চাষ করবে কারা?
মা আমার স্বপ্ন দেখে বিলেত যাবে ছেলে
অনেক দেশ ঘুরে , ছেলে আসবে যখন ঘরে
মায়ের বুক ভরবে তখন আনন্দ গৌরবে।
মাগো তোমার স্বপ্ন আর সত্যি হবে নাকো,
পয়সা দিয়ে পড়া আমার সাধ্যে হবে নাগো॥
গ্রামের ছেলে গ্রামে, যাচ্ছি আমি ফিরে
যাবার সময় একবার যাবো সেকরার দোকানে
এক জোড়া দুল কিনে আমি পরাবো মার কানে
সেই আনন্দে ভুলবো আমি কষ্ট যা আছে মনে॥