ঠিক শোকগাথা নয়, অনেকটা তাই যদিও
ভিটেছাড়া হও যদি, দুহাতে পায়রা উড়িও।
 
মাস্তুলহীন জীবন যেন সমুদ্রে অবাধ ভেসে
যাওয়া এক অচেনা নাবিক দিকচক্রবালে
হারিয়েছে তার মানচিত্র, কম্পাস ও স্কেলে
যাবতীয় আত্মবিশ্বাস। একটি আলবাট্রসে
বিশ্বাস রেখে সৈকতে পৌঁছে গেলেও
ভিটেছাড়া হও যদি, দুহাতে পায়রা উড়িও।
 
নিকষ কালো অন্ধকারে হারিয়ে গেলে
ভুষো কালি
হঠাৎ আলোর বিচ্ছুরণে উঠলে জেগে
রঙ মাখালি
প্লাস্টিকের ঐ আলফাবেটে শব্দবোধের
হিজিবিজি
চিত্রিত কাঠখন্ডে গড়া  খেলাঘরের
নেইতো চাবি
ভিতের মাঝে পোঁতা আছে স্মৃতির নাড়ি
আড়াআড়ি
দিস্তাখাতার পাতায় আঁকা আবছায়া মুখ
সারি সারি
 
ঠিক পাগলামি নয়, অনেকটা তাই যদিও
ভিটেছাড়া হও যদি, দুহাতে পায়রা উড়িও।
 
চিলতে উঠোন জুড়ে আকাশে উড়ান দেয়
দীর্ঘ নারিকেল, হরিণসিং ঝোপের পাশে
ছড়িয়ে স্বর্ণচাঁপা ফুল, মধ্যিখানে দারুচিনি,
 ওপাশের পাতিলেবু বিলুপ্ত সময়ের গ্রাসে
তবুও বিস্মৃত বিশ্বাসে পরগৃহে পৌঁছালেও
ভিটেছাড়া হও যদি, দুহাতে পায়রা উড়িও।
 
মনের মতন ঘরগুলি তার জানলাগুলো
রুজু রুজু
ড্রেসিং টেবিল ছিল না তো করবে কিসে
সাজুগুজু
চাপাকলের দিন ফুরোলে টাইমকলের
পাইপ লাইন
লোডশেডিংএ সেজবাতিতে মনের মধ্যে
গুপী গাইন
কয়লা গুলের অবসানে গ্যাস সিলিন্ডার
গন্ধবিলাস
ভাতের থালায় ছড়িয়ে  যায় কুন্দফুলের
মিষ্টসুবাস
 
ঠিক মনখারাপ নয়, অনেকটা তাই যদিও
ভিটেছাড়া হও যদি, দুহাতে পায়রা উড়িও।
 
একে একে হাত ছেড়ে চলে যায় নির্ভরতা
স্বস্তি ও শোক। যন্ত্রণাবিদ্ধ আতপ্ত কপাল
স্পর্শ করে না চালধোয়া হাতের শীতলতা
মশলাগন্ধী আঁচলে নিষ্পাপ মুখের আড়াল
তবুও আছো পাশে এই বিশ্বাসে বেপথু হও
ভিটেছাড়া হও যদি, দুহাতে পায়রা উড়িও।
 
ক্রমশ সংসার বাড়ে, হাত পা ছড়িয়ে থাকা
অকুলান
একতলা দোতলা হল বারান্দায় হাওয়া
অফুরাণ
দখিনের বারান্দায় হাতলওলা চেয়ার
নিঝ্ঝুম
স্মৃতির পালঙ্কে অলসতায় শয্যাসীন
নির্ঘুম
আমার ছিল কি কিছু? জানিনা একটি
পাশবালিশ
ঢাকনা শতচ্ছিন্ন তার আমারও তাই
নেই নালিশ
 
ঠিক মনকষ্ট নয়, অনেকটা তাই যদিও
ভিটেছাড়া হও যদি, দুহাতে পায়রা উড়িও।
 
মেঝেতে ছড়িয়ে আছে পুরানো ক্যালেন্ডার
মাদুর এবং যতেক সাংসারিক টুকিটাকি
অপ্রয়োজনীয় হয়ত বা সময়ের তুলাদন্ডে
মেপে রাখা জীবনের পল-পল বাজি রাখি
তবুও পরিবর্তিত ঠিকানায় পৌঁছে গেলেও
ভিটেছাড়া হও যদি, দুহাতে পায়রা উড়িও।