বিকাশ দাসের নির্বাচিত কবিতা

বিকাশ দাসের নির্বাচিত কবিতা
কবি
প্রকাশনী অন্বেষা
প্রচ্ছদ শিল্পী নচিকেতা মাহাতো
স্বত্ব বিকাশ দাস
প্রথম প্রকাশ অক্টোবর ২০১৮
বিক্রয় মূল্য ১৫০

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা

প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ থেকে সংগৃহীত কিছু কবিতা
• এখন আমি একা
• জরায়ুজ
• নিকুচি করেছে কবিতা
• কবির শেষ পাতা

ভূমিকা

কবি ও গীতিকার বিকাশ দাস মহাশয়ের ‘বিকাশ দাসের নির্বাচিত কবি’ বইটি পান্ডুলিপি আকারে যখন হাতে আসে তখন থেকেই মুখিয়ে ছিলাম সব ক’টা কবিতা পড়ে ফেলবার জন্য। আদতে এটি বিকাশের পুর্বপ্রকাশিত চারটি কবিতার বই থেকে ঝাড়াই-বাছাই করা কিছু কবিতার একত্র সঙ্কলন। ফলে কবিতাগুলির সিংহভাগ আমার আগে থেকেই পড়া। তবে বিকাশের কবিতার মাধুর্য এইখানে যে, কবিতাগুলো ফিরে ফিরে পড়তে একঘেয়ে লাগে না। ফলত একদম নির্ভেজাল সাবেক মন নিয়ে যে কেউ এই কাব্যসঙ্কলনটি পড়তে বসলে আমার মতই মুগ্ধ হবেন বলে আমার বিশ্বাস।

প্রথম কবিতাটিই ভারি অনবদ্য। তোমার দু’চোখ রেখেছো একাকার। মনে হয় এ পৃথিবী এখনো অতোখানি ছোট হয়ে যায়নি বালিকা! মায়াজালে মোহ কেটে দোষ দিওনা তোমাতে। অকপট সচেতনে একটিবার চেয়ে দ্যাখো, এখানেই শেষ হয়ে যায়নি পৃথিবী! মায়াবতী, চোখ মেলো, দুহাতে নিজেকে জড়িয়ে মেলে ধরো অবাধ্য বৈরী বাতাসে। বোশেখী বৃষ্টি জমে শেওলা ধরা ভিজে চোখ হারাতে দাও আকাশে... আকাশে। পাঁজরে লেগে থাক ছোপ ছোপ গোপন চিহ্ন। আবার যেখানে কবি লিখছেন, এক টুকরো ধান চালের নিমগ্ন ভাতে / এক টুকরো হাড় খাটুনির নিরন্ন রাতে.... এক নিমগ্ন কবির আত্মস্থ হবার মন্ত্র শেখবার মত। পাশাপাশি ‘বিশ্বাস হাতড়ে শরীর খোঁজে’-র মত চমৎকার কিছু শব্দগুচ্ছ হাতের নাগালেই পেয়ে যাই। তাই হয়ত কবিই একমাত্র এই বিশ্বাসটুকু বুনে দিতে পারেন যে, যত টুকু বিশ্বাস করেছ তার চেয়ে বেশি সন্দেহ যত টুকু হাসিয়েছ তার চেয়েও বেশি কাঁদিয়েছ. যতটুকু স্বপ্ন দেখিয়েছ তার চেয়ে বেশি স্বপ্ন ভেঙ্গেছো যতটুকু কাছে টেনেছ তার চেয়েও .... দুটি শরীর এক হওয়ার টান, নাকি, প্রেম নিছক ..... দিবা নিশি তোমার স্মৃতি হাতড়ে বেড়াবে এই মন! নির্ঘুম। ভেঙ্গে সুখ খোঁজে পাও তাই।

কঠিন সত্য, শেষ উপলব্ধি, মা তুমি ভালো থেকো’র মত কবিতা বারে বারে আসে না। আসে না ‘ভবিষ্যতের ইবাদত খানা’র মত কিছু নির্বাচিত শব্দের সঘন আহ্বান। আর সেই শব্দের খননকাজ সেরে কবি বলতেই পারেন, ‘সহজে ভিজিয়ে মরুর প্রাঞ্জল নিরুত্তর আকাশ’। সত্যিই তো। সেই রমণী’র দীঘির মত চোখের দিকে তাকিয়ে কবি বলতেই পারেন, এই আকাশ আমার। নীলাকাশ রবে নিরুত্তর মানুষ আমি চেয়ে দেখো নীলাকাশ রবে নিরুত্তর যদি তুমি বলো আমি একান্ত তোমার, আমি তারায় তারায় রটিয়ে দেবো তুমি আমার। ক্যামেলিয়া হাতে এই সন্ধ্যায় ভালবেসে যত খুশি বলতে পারো এই ফুল আমার। আর সেই রৌদ্রতপ্ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে কবি লেখেন, ‘শরীরে জ্বর নামুক সুখের সুরভিতে’। যেন নিঃশ্বাসের সাথে সাথে সেই ধোঁয়া ওঠা কুয়াশা নেশাদায়ক পদার্থের মতো শরীরে ঢুকছে পাঠকের। পাঠক ক্ষনে ক্ষনে রোমাঞ্চিত হচ্ছে। অনুভব করছে সুখের সুরভিটুকু। যে দিন শয্যাশায়ী মুমূর্ষুর মতো ধুঁকে ধুঁকে ক্লেদের সুরভি নেমেছিল নিরন্নের ঘরে। উত্থানের বিপরীতে যে প্রবাহ একটিবারের জন্য নামুক আমার স্বপ্নে সুখের স্মৃতি রূপোলি ঝলক তুলে উঠে আসে ওইসব ডাগর স্মৃতি। স্রোতবেগে নৌকাগুলো দুলে ওঠে,পাটাতনে ছলকানো জল ভেঙে জেলেদের হাত চলে, জাল ঘিরে রোদ ঝলমল স্বপ্নের ঝিলিক। কবির প্রতিটি কবিতাই এক অমোঘ প্রেমের আঁতুড়ঘর। মিশে থাকতে চাই তোমার ভালোবাসায়, বৃষ্টি নামলে নামুক, পাহাড় ভাঙলে ভাঙুক। তুমি আমি একই কাপে দেবোই চুমুক, সন্ধ্যা হলে হোক আঁধার কে পাক মর্ত্যলোক। আমি তুমি আঁধার ভালোবাসা আরো জমুক। খানিক অভিমানে নামলে জল চোখের কোণে। কাছে টেনে তোমায় আমি আবার নেবো জড়িয়ে, ভালোবাসার এ বৃষ্টি দুজনার মধুর দৃষ্টি।

আমি কবি ও গীতিকার বিকাশ দাশের এই ‘‘বিকাশ দাসের নির্বাচিত কবি’’ শীর্ষক গ্রন্থটির সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করি। আশা করি পাঠকমহলে যথেষ্ট সমাদর পাবে। কবির ভাষা ধার করে বলি, জানাবো উচ্ছাস ‘তুমি সুখে আছো’। সুখে থাকুক কবির প্রকাশিতব্য কাব্যগ্রন্থটি।

চরৈবেতি।

অজিতেশ নাগ

উৎসর্গ

শ্রী অখিল সামন্ত, মালদা /শ্রী উত্পল সামন্ত, কোলকাতা / শ্রী শ্যামল সামন্ত, মালদা