এটা ঠিক
আমিও বড়ো হলে ভুলে যাবো মাকে
ভুলে যাবো
আমার দুধের ঝিনুক বাটি আমার বারকোশ আমার জলের গ্লাস ।
কথায় কথায় অদ্ভুত সব উজবুক বায়না জেদে ফুলে ওঠা শ্বাস ।
একটু পরে খুঁদকুড়ো মন আবার মায়ের দুধে আমার চুপ কান্না
নিজের দোষে ভাঙলে খেলনা
বাড়তি পাওনা মায়ের আঁচলে আদরের দোলনা ।


ভুলে যাবো
মায়ের ভুলিয়ে ভালিয়ে গল্পে গানে
ভালো করে ভাত চটকে চিবুক টেনে টপকরে আমার মুখে গ্রাস গেলানো
অনেক পাখি চেনানো শিস ডাক টেনে
বিষম লাগলে
চট করে আমার মাথায় হাত বোলানো
মায়ের জিভের ডগায় ষাঠ ষাঠ
আমি সোনার ছেলে মায়ের রাজ্যে আমিই রাজ্যপাট আমিই বড়লাট ।


ভুলে যাবো
হঠাৎ হঠাৎ ঘুম ভাঙলে
মায়ের হাত আমার পিঠে উল্কি আঁকা হাজার আকাশ ঘুম পাড়ানী
মেঘ ডাকলে বৃষ্টি হলে বাজ পড়লে সোজা মায়ের বুকে একঝাঁপে ।
আমার সব দুষ্টুমির খেলায় মা সামিল যেন কৃষ্ণ গোপালা যশোদারানী ।
ঘর উঠোনময় আমার পালিয়ে বেড়ানো খপ করে ধরাপড়া মায়ের এক ধাপে ।


ভুলে যাবো
হাড়খাটুনির মায়ের কষ্টলাগা চোখের থেকে
আমার চোখ পেয়েছি পেয়েছি চলার সড়ক আলোর দানী
ফেলা গেলে অন্ন
শাসন বিধি রাখতেন কাছ থেকে
চারবেলার বিজ্ঞাপনের দুনিয়ায় সব চিনি সব জানি ।
ভুলে যাবো
খুব শীতে মায়ের শরীর থাকতো ঝুকে নিজের ছায়ায় দিকে
মায়ের দুপায়ে হাঁটুর ব্যথা কিন্তু রোদ রাখতো ঠিক আমার দিকে ।
আবার খুঁটিয়ে দেখা
স্কুল ফেরৎ টিফিন বাক্স আর হোমওয়ার্ক রুটিন মতো
আবার বুঝিয়ে তখনি
বকাঝকার মধ্যে আমার দুগালে আদর চুমু উজার যতো ।


ভুলে যাবো
মায়ের সেই শুভ্র শাড়ি কালো পাড় বাঁধা কিনারা
নিস্পত্র চরাচর উপোসী শরীর
আমার ভুবনসঙ্গী বাকি পৃথিবীর সব স্বাদ আল্হাদ ভুলে
পেটের প্রসব জ্বালা
কোলেপিঠে মানুষ করার দহন
আকাশ ভাঙা জলঝুপ্পুস ঝড় মাথায় তুলে ।
তখনও মা সজাগ
রাখতে আরোগ্য নিরাময়
স্নেহ মমতার অন্তস্তলে আগলে আমায়
আমার অনেক অকাজ জেদের আবোলতাবোল ভাঁজে ।
মায়ের লহুগতর
হিমশিম দুহাত অষ্টপ্রহর আমাকে শুধু মানুষ করার কাজে ।


ইদানিং ব্যতিব্যস্ত আমি নিজের স্বার্থের কাজে
পেলেই অবসর বেশ কাটে সময় বউ ছেলের কাছে
নিজের সংসারের রোজকার কলহ গিলতে না পেরে
শেষমেশ দ্বন্দ্ব কাটিয়ে
দ্রুত হাতে
গলগ্রহ মাকে
রেখেছি পাশের দেওয়াললাগা আলোবদ্ধ ঘরে
ভালো থাকবেন বলেই করে দিয়েছি একঘরে ।
তবু কাঁটাতারের অন্ধকারে মায়ের দুচোখ অস্থির
ঘরের চৌকাঠে চৌকাঠে পৌঁছে দিতে শান্তির নীড়
আশীষ মাখা দুহাতে ।
এখন
মা থুত্থুড়ে প্রায়শঃ শুয়ে অবসাদ ক্লান্তির কাঁথায়
বিড়বিড় করেন মহাভারত রামায়ণ কখনও গীতার শ্লোক শোনান ।
আবার ঠিক সময় ধরে আমার ঘরের একাকীর জীবনযাত্রার পরিধান
সুঁচ নিয়ে হাতে জীর্ণ দৃষ্টির ভেতর দিয়ে
প্রযত্নে মঙ্গল সুতো পড়ান
দুচোখে রাত জাগান
আনতে ছেলের সংসারে সুখ সম্বৃদ্ধির সমাধান ।
আজও মা নিয়মিত একলা ঘরে
নিস্তব্দ রাত দুপুরে সেলাই করে
সুঁচ ফুটিয়ে মায়ের
আঙ্গুলে রক্ত পড়ে
চোখের জল পড়ে না
আমি গায়ে সুখের দামী পোশাক পড়ে
বলতে লজ্জা করে,
মা তুমি ভালো থেকো ।
মা তুমি ভালো থেকো ।


বিকাশ দাস
মুম্বাই