জন্মই আজন্ম পাপ!
হায়! কি যে জন্ম জ্বালা।
সভ্যতায় নির্বোধ নৃশংস
নিপীড়ন যন্ত্রণায় দুর্নীতি কবলিত জীবন।


বিচারহীন নির্বিচার, চিন্তাহীন আজব মানুষ ওরা।
প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য, মৃদুমন্দ সমিরন
সূর্যের উত্তাপ, পৃথিবীর রং, বাহারি সভ্যতা কিছুই
জানা নেই ওদের।  
ভ্রান্ত নক্ষত্রে জন্ম
মুক্ত নিঃশ্বাসের সাবলীল জীবন
ওদের অভিধানে নাই।


ওদের নেই কোন ঈশ্বর-প্রভু -ভগবান
নেই রাষ্ট্র, ধর্ম, খাবার, বাসস্থান!
মানবাধিকার সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।
হায়! ঈশ্বর তুমিও মুচকি হাসছো! তুমি বুঝি রোহিঙ্গা ইস্যুতে অন্ধ?
জন্ম পাপে ওদের জ্বলছে অতৃপ্ত আত্মা
জীবন থেকে কবর অব্দী।


সাতশো পঞ্চাশ কোটি মানুষের পৃথিবী
সকলেরই নিজস্ব ঠিকানা আছে
গোলকের কোথাও নেই ওদের জন্য চিত্রিত একবিন্দু ভূমি।
না। ওদের কোন ভূমি নাই, আবাস নেই।
ওরা জন্মের যাযাবর
ওরা কুৎসিত পাপিষ্ঠের দল!


ওহে! বিশ্বনেতাগণ!
ওহে!  অং সাং সুকি-
কোথায় তোমার শান্তি? নোবেল প্রাইজ বিবৃতি ?
এটাই কী তোমার সভ্য নীতি?
লজ্জা! লজ্জা!


জ্বলন্ত সভ্যতা! জ্বলন্ত মরণ!
মানবতা ধুকে মরেছে চিতার অনলে।
ওরা জন্মের কুৎসিত
ওরা প্রচন্ড  ক্ষুধার্ত! ওরা আধুনিক সভ্যতার শিকার, আজব পশু!
ওরা আহার চায়, পান করতে চায়-
ওরা ভারত মহাসাগর একবারে গিলে খেতে চায়!
ওরা সারা বিশ্ব দুমড়ে মুচড়ে গিলে খাবে চিবিয়ে।
ওরা আজ নির্বাসিত। আদি বাসস্থান ছেড়ে।


ওদের ভাবনায় নেই- কিবা সমাজ, কিবা পরিবার, কিবা পরিবেশ
ওরা জানে না কেবা পিতা-মাতা, কেবা পাড়াপড়শী
ওরা খুঁজে না কোথায় বাচ্চা-কাচ্চা, কোথায় প্রেয়সী।
একখানি ছোট কাঠের নৌকা সম্বল
বঙ্গোপসাগরে ভাসছে ভাগ্যকে সাঙ্গো করে।
যেন ভেসে বেড়ানোই ওদের জন্মের কাজ
ওদের নেই আশা, নেই গন্তব্য
শত শত শিশু, নারী পুরুষ
ভাসতে ভাসতে বঙ্গোপসাগর পেরিয়ে ভারত মহাসাগর।
ওরা মরণ নৃত্যে মেতে উঠছে একসাথে
ওরা খাবার চায়, ওরা পানির চায়...
ওরা উম্মাদের মত বাঁচতে চায়
হায়! ওদের নায়ে নেই কোন রসদ
নেই খাবার, নেই পানি!
সীমাহীন গভীর সমুদ্রে অনিশ্চিত জীবন
ওরা জীবনের শেষ কোণে পৌঁছে যায়
গভীর সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে
একসাথে মরে বন্য যন্ত্রুর দল।
জমাট জলাবদ্ধ সলিলে সমাধিত হওয়াই জীবন।
আহা! জন্মই যাদের আজন্ম পাপ।
রোহিঙ্গা!
অস্বাভাবিক সাম্প্রদায়িকতার শিকার এক জাতি।


একসময় হয়তো আমাদের সভ্যতার  
ইতিহাস বিষয়ে একটি অধ্যায় হয়ে থাকবে-
সাম্প্রদায় ছিল এক, নাম ছিল তার রোহিঙ্গা!


[২০১২-১৩ সালে টেকনাফ অবস্থানকালে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ও রোহিঙ্গাদের করুণ জীবন চারিত বিষয়ে অবগত হই। তখনই বিষয়টি আমাকে ভাবিয়ে তুলে। রোহিঙ্গা সমাজের সামগ্রিক বিষয় ভাবনা থেকে পরবর্তী কালে ২০১৫ সালের মে মাসে কুলাউড়া রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ইংরেজিতে একটি কবিতা রচনা করি।  যাহা দীর্ঘকাল পরে অনুবাদ সম্পাদনা  করে পেশ করলাম।
পুনষ্চঃ মূল ইংরেজি লেখা থেকে কিছুটা কার্টসার্ট, কিছুটা পরিবর্তন করে বাংলায় অনুদিত হলো।]