প্রিয়তমা চলেগেছে -
আজ তার চলে যাওয়ার একশো আঠাশতম দিন। আমি গুণিনি - দেওয়ালের ক্যালেন্ডারটাই বলে দিয়েছে, যার পাতায় এখনো টানানো, তার হাতে আঁকা শেষ একটি অর্কচিহ্ন।
জল যেমন শুকিয়ে যায় কুয়োর তলদেশে। তেমনি আমি বোঝার আগেই স্পন্দনটুকু নিভে গিয়েছিল। অথচ প্রতিদিন আমি তাকে গল্প শুনিয়েছি -"এই আলো তোমার মতোই নরম।" সে হেসেছিল, কিন্তু আমি বুঝিনি, সেই হাসি বিদায়ের আগে শেষ জানালা বন্ধ করেছিল।
সে একাকী পথে হেঁটে গেছে - কোনো হাত না ধরে, কোনো শব্দ না রেখে। শুধু পায়ের ছাপ — যেগুলো সময় মুছে দিয়েছে শ্রাবণের বৃষ্টির সঙ্গে।
আমি ফিরে এসেছি। আমার ফেরাটা ছিল চুপচাপ, দায়বদ্ধ। যেন কিছুই হয়নি। পাশের দোকানের লাল চা-ওয়ালা এখন আর জিজ্ঞেস করে না - "আজ ম্যাডাম আসেননি?" কারণ তাকেও অভ্যস্ত করে দিয়েছি অনুপস্থিতির সঙ্গে। সবাই শিখে গেছে, যারা চলে যায়, তাদের খোঁজ করা যায় না।
এখন আমার অনন্ত সময়, ঘরে বসে সময় কাটাই। আমার সাথে বসত করে, তার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত স্মৃতি। এখন এ ঘর শুধু নিঃশব্দ। ঘড়ির কাঁটার মতো - টিকটিক করে চলে মহাকাল, কিন্তু কোনো গল্প শোনায় না।
এখন আমি আর কিছু লিখি না, কেবল মনের পাতায় রচনা করি নীরব বেদনার জার্নাল - যেখানে শব্দ নেই, ব্যাখ্যা নেই, অশ্রু নেই। শুধু আছে এক অন্তহীন অপেক্ষা, একটি নামহীন প্রশ্ন - সে কি আর কখনো ফিরবে?