ওহে জাতিসংঘ! ওহে সভ্য মানুষেরা!
বেঁচে থাকা না:কি তোমাদের সংবিধানে মৌলিক অধিকার
আমি বাপু, অধিকার-স্বাধিকার বুঝি না!
আমার বেঁচে থাকার একাগ্র আকাঙ্ক্ষা।
জন্ম অভিশাপে ন্যূনতম বেঁচে থাকতে
এখুনি দুবেলা দু’মুঠো খাবার দাও।
ক্ষুধায় পাকস্থলী জ্বলে যাচ্ছে-
শুধু দু’মুঠো খাবার চাই।


খাবার ব্যতীত অন্য কিছুতে লিপ্সা নাই
এই যেমন ধর- তোমাদের মতো বিলাসী জীবন
কাড়ি কাড়ি টাকায় ভরা সিন্দুক-
শহুরে অভিজাত পাড়ায় আলীশান বাড়ি
দামী দামী গাড়ি কি:বা আধুনিকা নারী
ও সবে কোন কিছুতেই আমার দাবী নাই।


সারাদিন হারভাংগা খাটুনি খেটে ১২৫ টাকা পাই।
বিস্মিত হইও না!
ইহা তোমাদের কারো হয়তো এক কাপ চায়ের পয়সা!
এই দিয়েই নবিরনে মা, নবিরন, আমার
নুন-পান্তার ফয়সালা।


বনেদি কৃষকের ছেলে ছিলাম একদা- মেঘনার পাড় ঠিকানা
ছোট্ট গ্রাম- শাহজিপাড়ায় ছিল একখানা বসত ভিটা।
গাঁয়ের বোদ্ধা কৃষক ‘জমির আলী’ পিতা।
কৃষকের ছাওয়াল, কৃষি ছাড়া অন্য কোন কাজে
হাত হয়নি অতটা পাকা।


হালের বলদ, দুধেল গাই, মেঘনার চরে উর্বর শস্যবতী জমি-
বাবা, ধুলট বুঝে চাষ দিত- ধুলোর রং দেখে বীজ ছিটাতো,
শস্যে গোলায় ভরে উঠতো খামার ঘর।
সেকালে সবই ছিল- সবজি মাচান, খড়ের চাওল, ঘ্যার পুকুর
সব গিলে খেয়েছে রাক্ষসী মেঘনা।
একরাতে বানে ভেসে গেছে হালের বলদ, গোয়াল ঘর
সাবাড় করে নিলো পেটে- শেষ সম্বলটুকু বসতভিটে।


হতভাগা বাবা- অভাগিনী মাকে নিয়ে
এখনো বেঁচে আছে মেঘনাকে ভালবেসে
ভিক্ষার ঝুলি আঁকড়িয়ে বুকে
জেলে পাড়ায় আঁষটে ভাতের মাড় খেতে।
আল্লা মালুম- হতভাগারা আরো কতকাল বেঁচে থাকতে চায়?
এমন রাক্ষুসে ক্ষুধা পেটে নিয়ে।
মেঘনার মতই সব গিলে খেতে চায় একবারে
অথচ দু’মুঠো পেলেই তুষ্ট।


আমি অক্ষম বাসনার জ্বালায় জ্বলে
মিনতি করি তোমাদের কাছে
আমার বৃদ্ধ বাবা-মাকে দু’মুঠো খাবার দাও।
ওদের বেঁচে থাকা অব্দী
শুধুমাত্র দুবেলা দু’মুঠো খাবার চাই।


নবিরনের মা, আহা!
মাতুব্বরের মেয়ে-
এতটুকুন পুতুলের মতন এনেছিলুম ঘরে
কতই বা তখন বয়স- চৌদ্দ কি:বা পনের হবে।
মন ভরে থাকতো অজানা সুখে
কি যে ঘ্রাণে কাছে টানিত-
মৌসুমের চাষ- কাজ বাজ ফেলে, মিথ্যে পেট কামড়ের ওজরে
থাকতাম আঁচলের ছায়া পাশে।
এগার বছরের ব্যবধানে
হাভাতের দেশে!
অস্থি মজ্জা কঙ্কাল সাড়- নবিরনের মা।
দেখে কেউ চিনতে পারবে না।


ন’বছর বয়সী কন্যা, একমাত্র জীবিত
বাঁকি দু’টো মরে ধন্য
জন্মের পর আদর করে নাম রেখেছিলুম ‘নবিরন’
অভাগী! মেঘনার ভাংগন সাঙ্গ করে দেখলো ভুবন!
জন্ম থেকে অনাহারী, অপুষ্টি, কালা জ্বরে ভুগে
খোঁসড়া, প্যাঁচড়া, মোচড়ানো চামড়া, কখানা হার।


হাতে ধরা শূন্য থালা হতভাগিনী উদাস দৃষ্টি
চোখের জলে স্রোতে বহে নিরবধি।
হতাশায় ভরা চোখের পানে তাকিয়ে আমার বুকের পাঁজর ভাঙ্গে।
কলজে ছিঁড়ে- চিত্ত ফাটে অজানা ব্যথায়।
আমি আর সইতে পারি না-
বিশ্বাস করো, আমিও যেকোনো পিতার মতন।


হায় জন্ম! হায় বিধাতা!
জন্ম দায়ে কী আমার আজ এ দশা!
আমরা প্রচণ্ড বুভুক্ষু, ভীষণ ক্ষুধাতুর
ক্ষুধার যন্ত্রণায় আমাদের পাকস্থলী পচে গলে যাচ্ছে -
আমরা খাবার চাই-
শুধু মাত্র বেঁচে থাকতে।


অন্তত দুবেলা দু’মুঠো খাবার দাও এক্ষুণি!
নাহলে আমরা মরতে শুরু করবো একসাথে
শয়ে শয়ে, লাখে লাখে, কোটি কোটি অনাহারী
মড়ক লাগাবো বিশ্ব ব্যাপী-
গোরস্থান বানিয়ে যাবো তোমাদের শহরের অলি-গলি, ফসলের মাঠ, পার্ক, বিশ্ববিদ্যালয়
খেলার মাঠ, অভিজাত পাড়া সর্বত্র, সমস্ত পৃথিবী জুড়ে
আর তোমাদেরকে সেসব গোরস্থানের পাহারাদার নিয়োগ দিয়ে যাবো।।


(৭/৩/২০১৩, টেকনাফ)