নীলবাটি গ্রামে এক কুঁড়েঘরে
জন্ম নিলো মিস বেলা,  
জীর্ণ সংসারে বড় হতে থাকে
নিত্য খেয়ে পদঠেলা।  


লাথি কিল খেয়ে ষোল'তে বয়স
বাবা মার কাছে  বোঝা,
হন্যে হয়ে এ পাড়ায় ও পাড়ায়
চলছে বালক খোঁজা।  


ছতর আলী ঘরে বেকার পোলা
তাতে কিবা জাত যায়?  
আছে বিঘা'দু জমি পান দোকানী
টুকটাক ভালো আয়।  


ছেলে কীবা করে তাহা দেখিবার
এতটা সময় কোথা?  
প্রাণে বেঁচে যাই পার করি যদি
করি যদি সমঝোতা।


সময়ের ফেরে ঘটক পাঠায়ে
কায়দা কৌশল করি,
কোনমতে তারা জোড়াতালি দিয়ে
পার করে দিল তড়ি।


জনমের মতো চলে গেল বেলা
আর ফিরবে না ঘরে,
বোঝা বোঝা বলে আর চিল্লাবেনা
সমাজের পায়ে পড়ে।  


শ্বশুর বাড়ি উঠলো সে একা
কাজের বেটি স্বরূপ,
শাশুড়ীর বকা নিত্য অত্যাচার
তবুও সে থাকে  চুপ।  


ষোড়শী বেলা গর্ভবতী এখন
শরীরও দূর্বল বেশ,  
সারাদিন তার খাটাখাটি  তবু
কাজের হয়না শেষ।


গোয়াল ঘরটি ঝাড়ু দিতে গেলে
প্রসব বেদনা ওঠে,
কন্যা সন্তান জন্ম দিলে সেথায়
দূর্ভাগ্যের ফুল ফোটে।


জাতের ভালে কলঙ্কের  লেপন
এ মেনে নেওয়া দায়,
ভিটেমাটি হতে খুব তাড়াতাড়ি
করিল তারে বিদায়।


জরায়ুর ঘা বুকে নবজাতক
বেলা আজ নির্বিকার ,
দু'কূল হারায়ে ভবের সংসারে
নিঃসঙ্গ জীবন তার।


একবার ভাবে আত্মহত্যা করি
একবার ভাবে বাঁচি,
রেলস্টেশনে কতজনেই বাঁচে
খেলে খেলে কানামাছি।


ঠাঁই নিলো সেথা মরাগাছ তলে
গজিয়াছে কচি পাতা,
মরা থেকে জাগা নতুন জীবন
খাটালো ভীষণ মাথা।


কাছে পেল দুই এতিম সন্তান
বাঁধিল ঘর পাতায়,
শূণ্য জীবনে যোগ হলো সেথায়
পণ্য জীবন খাতায়।


এক হতে আজ তিন সন্তানের
সংগ্রামী জননী বেলা,
বাঁচার তাগিদে সংগ্রাম জরুরী
জীবন মরণ খেলা।


রাতের খাবার কোনমতে খেয়ে
বৈঠক করলো তারা,
তিন মায়ে পুতে রোজগার করে
অভাবকে দিবে তাড়া।


রেলগাড়ী হতে যত আয় হবে  
ওইখানে বেঁধে ঘর,
এতিম আমরা এতিমেরে টেনে
আপন করবো পর।


শুরু হলো আয় শুরু হলো টানা
এতিম যাহারা আছে,
প্রতিদিন আসে অনাথ যাহারা
বেলা জননীর কাছে।


সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে তারা
খানিক জমিন কিনে,
ঘর বাঁধা আর পর বাঁধা যত
এক হলো দিনে দিনে।


বিদ্যার্জনে মায়ের আদেশ-তাড়া
আলোকিত হবে  মন,
ভালবাসা যেন বিলীন না হয়
এই করো সবে পণ।  


উকিল ডাক্তার সব হলো মা'র
মায়ে আজ ভাগ্যবতী,
মানুষ যদি মানুষ হয় সত্যি
থাকে নারে অসঙ্গতি ।