সেই বর্ষায় ঘন ঘন সাপ পড়ছিল "আটোল" এ
শেষদিনের 'টার দাপট কি!
দুই হাতও নয় লম্বা
তবুও।
জাত কেউটে।
আর কেউ হলে তক্ষুণি পিটিয়ে মারত,
আমার হঠাৎ খেয়াল হল
বেশ 'সাহসী' সাজা হবে।
অগত্যা নিলাম গামছায় বেঁধে।
লোক স্বজন জড়ো করে,
চোখ কপালে উঠিয়ে বললাম,
"মাঠের ভিতর ধানের গোড়ায় ছিল লুকিয়ে
পায়ের শব্দ শুনেই এলো তেড়ে
আমিও ধরলাম খপাত্ করে..."
কথা শেষ হলো না--
--হই রই কান্ড গেল বেঁধে,
একজন বলল, কি সাহস দেখেছ?
সাহস না থাকলে কি আর সেবার ক্ষ্যাপা গোরুটাকে শান্ত করেছিল;
সেই শুনে আরও একজন বলল
"ঠিক ঠিক,
ওরে, ভব তোর আর কোনো চিন্তা নেই
ছেলে তোর খুব সাহসী
'বাস্তুদেবীর' দয়ায়..."
আর কে একজন বলল,
"আমিও তো ছিলুম সেখানেই
আমার লাঠির 'বাড়িতে' ই কাহিল হয়ে সকালে পালিয়েছিল
তা হোক, ধরেচে তো,সে দৃশ্য যদি দেখতে তোমরা"
এসব শুনে  কিন্তু কিন্তু ভাবটা ঝেড়ে ফেলে ময়না মাসি বলেই ফেলল,
"এই বয়সে এত সাহস, কোথায় পেলি,বিদ্যে শিখচিস নাকি?
আমি কি একটা বলতে যাব?....ঠিক
তখনি পিছন থেকে কে একজন এসে ঠাটিয়ে চড় কষাল গালে,
আমি পড়লাম আকাশ থেকে,
সবার প্রশংসার বাক্যবাণে একটা একটা করে ঠিক যত কটা সিঁড়ি উঠেছিলাম এতক্ষণ
ততগুলো ভেঙে এক্কেবারে নীচে,
মাটিতে।
আর
অকস্মাৎ এমন কান্ড ঘটতে দেখে
যে বলেছিল, সে সাপ ধরতে দেখেছে আমায়, সেই পালাল সবার আগে।
একদল হাসল মাথা নুয়ে,
আর যারা 'বিনা প্রশ্নে' প্রশংসার বান ডেকেছিল
তারা আমায় ঘৃণার চিতায় তুলে যে যার নিজের কাজে গেল।
ময়না মাসি'র বেবাক দৃষ্টি আর
কানের পাশে সোঁ সোঁ হাওয়া...
পড়ছে মনে, সেই সেদিনে
জোড় বচ্ছর আগে।
আজ ওখানে শংকর, আমি ছিলেম সেথায় যেদিন
খই ফুটছে লোকের মুখে
প্রশংসারই বাক্যসুধায়
হাঁড়ির ভেতর জাত কেউটে, লম্বা বোধহয় হাত আষ্টেক,
এই কাহিনিটাও আমার মতন একেব্বারে আগাগোড়া
সবাই আছে যেমন ছিল,
নেই যে কেবল সেই লোকটা।
বিস্ময়েতে খুঁজলাম তাকে নিজের পানে চাইলাম না,
আর কজনাও ভিড়ের ভেতর তার খোঁজে হাল ছাড়ল না।


শুধু সাপটা কেবল লেজের ভরে উঠল আর পড়ল
কারা-হাঁড়ির পিছল গুহায় সপ্রাণ ছাড়া চাইল।
আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হল
সবাই চলে গেল।
তার সত্যমণি-দুচোখ আঁধারে মিলিয়ে গেল....
আমি এবং আর কজনা সেই লোকটাকে খুঁজছি তখনও
তখনও..তখনও....