শুভদীপ তখনো মাতৃগর্ভে
অস্ফূট কুসুম কুঁড়ির মত।
হঠাৎ একদিন তার বাবা নিঁখোজ
পাওয়া গেল না করে চেষ্টা  শত।


এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত
গর্ভবতী মণিদীপার কী হবে এখন!
কে জোগাবে অন্ন-জল-আশা
কে জোড়াবে এই ভাঙ্গা মন।


মাথার উপর ছাতা ধরবে কে
স্বজন সুজন কেউ যে নেই তাঁর।
জীবনদীপটি ধরে রাখার মত
এ জগতে সাধ্য আছে কার।

শুভদীপ ভূমিষ্ঠ হলো যথাসময়ে
মার অঙ্ক আলোকিত করে
ফুটে উঠল এক নির্মল পঙ্কজ
মণিদীপার ক্লিষ্ট সংসারে।


তারপর গঙ্গায় অনেক জল গড়িয়েছে
মিশেছে সমুদ্রের বিশাল বুকে।
শুভদীপ  ডাক্তার হয়েছে এখন
শহরে সবাই চেনে এখন তাকে।


স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পদ শেষ
আছে শুধু একমাত্র  ভিটা।
তা যাক, ছেলে তো মানুষ হয়েছে
শুভ আজ মণিদীপার খাঁটি স্বর্ণচ্ছটা।


তবে সুখ যে সবার কপালে সয় না,
হঠাৎ  এক বিরাট অসুখে পড়ে
চোখ দুটো হারালো শুভদীপ
দুর্ভাবনায় মার চিন্তা গেল বেড়ে।


শেষে ডাক্তারবাবু জানালেন
শুভ দৃষ্টি পেতে পারে, একমাত্র
নিজের চোখ দেয় যদি কেউ
আছে কি এমন কেউ মিত্র।


মা ছুটে গিয়ে বললেন ডাক্তারবাবু
আমার চোখ দুটিই দিচ্ছি তাকে,
আমি তো পৃথিবী দেখেছি এতদিন
তার যে অনেক দেখা এখনও বাকী আছে।


মার কৃপায় শুভ দৃষ্টি ফিরে পেল
মণিদীপা হলেন পুরোপুরি অন্ধ
চিন্তা করো না মা, শুভ বলল
বউ এনে দেব একেবারে অনিন্দ্য।


তোমার নয়নমণি হয়ে থাকবে সে
রাতদিন সেবা করবে--ভালোবাসবে।
তা ছাড়া অর্থেরও অভাব থাকবে না আর
বৃথা চিন্তা আর কিসে তবে।


শুভ চাকরী করতে বিদেশ গেলো
আশার স্বপন মণিদীপার চোখে
কয়েকমাস পর একটা চিঠি এলো
কপালে চোখ  সেই বার্তা দেখে।


শুভ লিখেছে, প্রণাম নিও মা।
আমি বাধ্য হয়ে বিয়ে করে নিয়েছি ।
তোমাকে এখানে নিয়ে আসার মত
বল কোথায় আর সময় পেয়েছি!


তবে মা, মেয়েটি দেখতে অপূর্ব
খুব বড় ঘরের, একেবারে অনন্যা
তুমি দেখলে খুশি হয়ে যাবে মা
মনে হবে বইছে যেন রূপের বন্যা।


তুমি যে অন্ধ একথা তাকে বলিনি।
বললে হয়তো বিয়েটা আর হত না
আসলে তুমি যে বেঁচে, একথাও
শ্বশুরবাড়ির আজ কেউই জানে না।


পরের দিন সকালে সবাই ছুটে এলো
না, মণিদীপা আর বেঁচে নেই।
নিথর নিঃস্পন্দ দেহটা ঝুলছে এখন
উঠোনের সামনে আমগাছের ডালেই।


ভোরের অরুণ আলোর ছটায় বইছে
পুত্রস্নেহের কি অবাধ ঝর্ণাধারা।
সব কিছু সংসারে শেষ করে দিয়ে
মণিদীপা যেন আজ আত্মহারা।


কাগজে মণিদীপা লিখে গেছেন,
আমার মৃত্যুর জন্যে দায়ী আমিই
ছেলেকে চর্মচক্ষু দান করলেও
তাকে অন্তর্চক্ষু দিতে পেরেছি কই।


আমার মৃত্যু সংবাদটা দয়া করে
শুভকে জানাবেন না কোনদিনই।
শুনে যদি সে কষ্ট পায় আবার
তাতে আমার কষ্ট আরো বাড়বেই।


কোন এক গোধূলিবেলায় যদি
মায়ের খোঁজে এখানে এসে পড়ে সে
বলবেন, তোর জন্যে ভালো বউ খুঁজতে
মা গেছে অনেক অনেক দূর দেশে।