চরম তিক্ততার শেষে রিক্ত মানুষগুলো
গগনবিদীর্ণ একটি কণ্ঠ শুনতে পেলো-
ভাইরা আমার,
এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।


সেদিনের সেই উদ্দীপ্ত আহ্বান
আমার সুফলা মাটি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল।
লাভাস্রোত ফিনকি দিয়ে ছুটে চলল শিরায় শিরায়, আকাঙ্ক্ষা আকাশে।
তর্জনী হেলনে পুর্ব দিগন্তে দেখা দিলো লাল সূর্য, অবারিত সবুজ মাঠে ফুটে উঠল সাদা শাপলা। বাতাসে নতুন পতাকার পতপত শব্দ,
আমার সোনার বাংলা আলোড়ন তুলল।


এমন আত্মহারার মাঝে
হায়েনারা বেরিয়ে পড়ল রাতের আঁধারে।
লণ্ডভণ্ড করে দিলো সাজানো বাগান।  
ছনের ঘরগুলো ছাই হয়ে ছড়িয়ে পড়ল
আকাশে বাতাসে।
শহুরে দালানগুলো ভেঙ্গে পড়ল গোলার আঘাতে। মাংস পোড়া গন্ধে চারপাশ ভারী হয়ে এলো।
ভিঠে মাটি ছেড়ে মানুষ পালালো।
বুলেট বৃষ্টি হলো মায়ের বুকে।
বোনের সম্ভ্রম লুট হয়ে গেল চোখের পলকে। বধ্যভূমিতে গলিত লাশের স্তুপ,
তাদের স্বপ্নীল চোখগুলো
গোগ্রাসে গিললো ক্ষুধার্থ শকুন,
মাংস খাবলে খেল কুকুরের দল।
পদ্মা, মেঘনা আর যমুনার জল
রক্তাভ হয়ে গেলো,
আমার পিতার লাশ ভেসে গেলো বঙ্গোপসাগরে।


তারপর ইতিহাস মোড় নিলো-
যে হাতে লাঙ্গল ছিল, যে বৈঠা টেনে জীবন চালাত, যে শ্রমিক হাতুড়ি পেটাত
রাতারাতি কোথায় যেন উধাও হয়ে গেলো। বিদ্যাপীঠে ঘন্টা বাজে না, শিল্পে সাইরেন নেই, নাট্যমঞ্চগুলো ফাঁকা,
বাতাসে সুরের লহর ভেসে আসে না।।
হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা-
কি সুর শুনিয়ে গেলো!
কোথায় হারিয়ে গেল আম জনতা?
ভয়ঙ্কর সুনামীর আগে-
সাগর সব জল টেনে নিয়ে যায়,
তেমনই নীরবতা নেমে এলো বাংলায়।
অবশেষে সুনামী এলো-
দৈত্যাকার ঢেউগুলো আছড়ে পড়ল এই ভূখণ্ডে।
সব আবর্জনা ভাসিয়ে নিয়ে
পূতপবিত্র করলো বাংলার মাটি।


যাঁর আহ্বানে শরীরের পশমগুলো দাঁড়িয়ে যায়, হৃদপিণ্ডের স্পন্দন বেড়ে
উষ্ণ রক্তস্রোত প্রবাহিত হয় আপাদমস্তকে;
যে কণ্ঠ কখনো মানে নাই মানা অন্যায়ে,
মাথা করেনি নত অত্যচারেও শত।
সেইতো দিয়ে গেছে সঠিক ঠিকানা,
মুক্ত বিহঙ্গের ডানা,
দিয়েছে স্বতন্ত্র পরিচয়,
তাঁর ঋণ কোনদিন শোধবার নয়।
কে বলে সে নেই আমাদের পাশে?
অনুভব করো প্রতি নিঃশ্বাসে,
মানুষের মনে, হৃদস্পন্দনে।