অনেক কালের চেনা জানা ভীষণ প্রিয় কিছু হারিয়ে গেলে
সবাই যেমন তন্ন তন্ন করে খোঁজে পথে প্রান্তরে, এখানে ওখানে  
মনের মধ্যে এক সমুদ্র গোপন অস্থিরতার আঁকাবাঁকা পথে  
তবুও সে অধরা, পাওয়া যায়না তাকে, আক্ষেপের কোন প্রহরে
তেমনি খুঁজে যাই মায়ের গায়ের গন্ধ ক্লান্ত রাতের গভীরে      
ঘুমভেঙে পাশ ফিরে মাকে চাই নিরাপদ আশ্রয়ের খাতিরে ।  


মায়ের আদেশে প্রতি ভোরে উঠোন ঘিরে দৌড় অন্তত দশ পাক  
প্রতি রবিবার সকালে ঠাকুমার হাতে কালমেঘ, টোপ মিছিরির চাক          
অথবা গুড়ের বাতাসায় দুফোঁটা সাদা ভেরেন্ডার আঠা, থানকুঁড়ির রস  
পড়ার শেষে নটায় জল খাবার, রসনা থাকত নারকোল নাড়ুতেই বস      
ঠাকুরদাদার কাছে মহাভারতের গল্প শোনা, হুঁকোর ভুড়ুক ভুড়ুক ছন্দ  
অদ্ভুত ভালো লাগায় কাটত ছুটির সকাল, পোড়া তামাকের ঘ্রাণ ছিলনা মন্দ  
রান্না শেষে দুপুরে মা তেল মাখিয়ে দিলে, খোঁটা ধরে চার ডুব; পুকুরে স্নান
আবার ফিরবে দিন যদি কেউ বলত! সময় এগিয়েছে, স্মৃতিরা হয়নি ম্লান।        


বর্ষায় বাতাবীর ফুটবল, শেওলায় ভরা বৃষ্টিভেজা খামারে কবাডি  
শিশির ভেজা পায়ে নাছোড় আদুরে শুকনো পাতা ধুলো মাটি  
বাতাসে ভেসে আসত সরষে ফুটে খেঁজুর রসের মন মাতানো গন্ধ  
বাক্স থেকে বেরকরা শীতের চাদরে সোয়েটারে প্রাগৈতিহাসিক ছন্দ  
খেলায় হারজিত নিয়ে বড়দের চ্যাঁচামেচি মারামারি অহেতুক দন্দ
সন্ধ্যায় সব কোলাহল উধাও, হারিকেনের আলোয় ছায়ারা অনেক বড়
চাপ চাপ অন্ধকারে ভুতের নড়া চড়া, বারান্দা থেকে ঘরে যেতে জড়সড়
মায়ের হাঁক, কিরে পড়া শেষ হল ! মুখ বুজিয়ে বসে আছিস কেন ?


ভাবতাম সূর্যটা কেন যে ডোবে,  অন্ধকারেই তো ভুতেদের আনাগোনা  
খস খস শব্দে, ছায়ার নড়া চড়ায় ভয়ে নির্বাক,  হয় কি পড়াশোনা !
বলতে পারিনি সে কথা কারো কাছে, সব্বাই খ্যাপাবে, বলবে ভিতু
খুঁজতাম মায়ের আঁচল, সেখানেই নাকি অভয় মন্ত্র আছে থিতু
মা নেই, পাশফিরে শুয়ে আছি পৃথিবীর কাছে, কেউ কি বোলবে, ভয় নেই;  
বোকা ছেলে, ঘুমিয়ে পড় তাড়াতড়ি, অন্ধকার কেটে আবার সকাল হবে।  
  
সোনারপুর
১১/১১/২০১৮