এক নদী কে জিজ্ঞেস করেছিলাম মানুষের কথা
উত্তর দেয়নি, খলখল হেসে বয়েছে দূর থেকে দূরে
এক নারী কে জিজ্ঞাস করেছিলাম সে কি সুখী
সেও উত্তর দেয়নি, আড়চোখে কটাক্ষ হেনেছিল
এক পুরুষকে জিজ্ঞাস করেছিলাম পুরুষ কত প্রকার
সে মাতাল ভেবে, ত্রস্ত পায়ে বমির ভয়ে পালিয়েছে
প্রশ্নের মুখোমুখি কেউই দাঁড়াতে চায়না, পালিয়ে বাঁচে
নেতা, দুষ্কৃতী, বারবনিতা, ব্যবসায়ী সব্বাই এক ছাঁচে।
অজানা কে জানার জন্য অলস পায়ে হাঁটতে হাঁটতে
পৌঁছে যাই কখনো নির্জন নদী তীরে, সবুজ মাঠে
শাপলা শালুক ফুলে ভরা কানায় কানায় ভরা খালের পাশে
ইট ভাটা, মাটি কাটা, চাষের কাজে নিমগ্ন শ্রমিকের কাছে
কুমোর পাড়ায়, কামার শালায়, মাঝি মাল্লার আড্ডায়
তাঁত বোনার শব্দে মুখর আম কাঁঠালের ছায়া ঘেরা গ্রামে
মন্দির মসজিদ গির্জার পাশে পাশে, সন্ধ্যায় ব্যস্ত জনপদে
শীতের রাতে গুটিসুটি হয়ে ঊষ্ণতা রক্ষা করে পড়ে থাকা
গাড়ি বারান্দায় অথবা মুক্ত আকাশের নিচে শহরের ফুটপাতে
হাসপাতালের বর্হিবিভাগে, এমারজেন্সীর অর্ধমৃত মানুষটার পাশে
কৈশোরের কোলাহল মুখর অনাথ আশ্রমে নিষ্পাপ মুখের ভিড়ে
নিস্তরঙ্গ বৃদ্ধাবাসে নিঃসঙ্গ জীবন গুলোর শুক্ল পক্ষের কথা জানতে
চাষি বউ, জেলে বউয়ের হেঁসেলে, সবুজ জঙ্গল ঘেরা প্রত্যন্ত এলাকায়
প্রান্তিক পরিবারের আতিথ্যে ধোঁয়াওঠা মোটা ভাতে তৃপ্তির গন্ধ নিতে
তবুও মনে হয় দেখা হল না, জানা হল না বেঁচে থাকার রহস্যকে।
নদীর চরে বা গ্রামের পুরানো বটের তলে গুলি খেলায় মগ্ন কিশোরের দলে
অথবা কিত কিত খেলায় মত্ত কিশোরিদের কাছে জীবনের পাঠ নিতে
হেমন্তের জোছনা সুরোভিত সন্ধ্যায় হরি নামের সান্ধ্য বাসরের ভক্তিরসে
নির্মল শান্ত ভোরে আজানের সুরে ঘুম ভেঙে পায়ে পায়ে পৌঁছেছি কাছে
অজানা আলোর নির্মল, প্রাণময় জ্যোতির নিরন্তর উৎসের খোঁজে।
প্রতিদিন প্রতিপল ঘুর্নায়মান পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ প্রাণের জন্ম মৃত্যুর হিসাব
কে রাখে, নাকি বয়ে চলে অজানা কোন নালা বেয়ে ঠিক যেমন চলে
মুরগীর দোকানের বঁটির ফলায় অথবা জবাই করা ছাগের নলি বেয়ে
অনুতাপহীন সত্ত্বায় কাঁঠাল পাতা চিবোতে চিবোতে কিছু না জেনে।
সোনারপুর
২১.০৯.২০২১