শাস্ত্রমতে গৃহ প্রবেশের দিন ধার্য হয়েছে দোল পূর্নিমায়
সেইমত প্রস্তুতি সেরে রেখেছে হরি, যতটুকু যা পাওয়া যায়
প্রথার কারণে মহা সমস্যায় , বাদাবনে পুরুত পায় কোথায়    
বসত গড়ছে যারা, সবাই প্রান্তিক শ্রেণীর; কেউ পুরুত নয়  
অনেক আলোচনার পর, ঠিক হয় নাম গানেই হবে প্রবেশ
মনে মনে ভাবে হরি, সবই শ্রীহরির লীলা, সময়ের আদেশ
কাছাকাছি যারা বসত করছে, সকলকেই জানিয়েছে নিমন্ত্রণ
কেউ চেনা জানা নয়, তবুও এই বাদাবনে সব্বাই আপনজন
দিনের বেলাতেই হবে সব,  সন্ধ্যা; রাত এখানে ভীষণ নিঃসঙ্গ  
পূর্ণিমা এখানে একা একা হাসে, নদী জঙ্গলেই হয় সে অন্তরঙ্গ
মাথার উপর থেকে চারদিকে মাটি ছোঁয়া আকাশে ভরা আলোর ফুল
রাত নামলেই জড়িয়ে ধরে নিঃসঙ্গতা, নক্ষত্রের আলোয় খোঁজে কুল।


দোলযাত্রার সকালে কমলা নতুন  পুকুরে স্নান সেরে, ভিজে কাপড়ে
দুটো দ্বার ঘট বসায় কোন উপকরন ছাড়াই, ছোট কলসিতে জল ভরে
সিঁদুর দিয়ে স্বস্তি চিহ্ন এঁকে দেয় হরি, দ্বার ঘটে;  আগড়ের দরজায়
পুরনো ভিটের থেকে আনা মুঠো ভর্তি মাটি প্রবেশ দ্বারে পুঁতে, ছড়ায়  
লালপাড় শাড়িতে কমলা; শঙ্খ বাজিয়ে এগিয়ে চলে, পূর্ণ হয় মনস্কামনার  
তিন বন্ধু করতালি দিয়ে নাম গান শুরু করে, প্রদক্ষিণ করে ঘর সাতবার
কদমা, বীরখণ্ডি, চিড়ে মুড়কি বাতাসায় নৈবেদ্য উৎসর্গ করে প্রদীপ জ্বেলে
দেবী নারায়ণীকে প্রণাম জানিয়ে প্রার্থনা করে, রেখ মা চরণে দিও না ফেলে।


একপো বেলার কিছু পরে আসে নিধি, সঙ্গে আরো বেশ কয়েকজন
হরি এগিয়ে গিয়ে বলে এসো এসো মিতে, তোমার আশায় কাটল এতক্ষণ
নিধি বলে মিতে তুমি তো সব জানো, বাবু, নায়েব কেউ নেই দেরি হয়ে গেল
মাটির দাওয়ায় হেঁতাল পাতার বিছানো চেটাইয়ে বসে বলে, সব ঠিকঠাক হল !
কমলা;  সকল কে চিড়ে মুড়কি শুকনো মিষ্টির প্রসাদ বিতরন করে হাসি মুখে
উপস্থিত অতিথিরা সকলেই খুশী, হাতজুড়ে প্রার্থনা জানায় সব যেন থাকে সুখে  
পিতলের জগে পানের জল দেয়, হাসি মুখে সকলেই সেই প্রসাদ গ্রহণ করে  
একটু পরেই ঝড়ো আর তার ছেলে আসে, ঝড়ো বলে বেশ লাগতেচে নতুন ঘরে
আমাদের নতুন সঙ্গী এলো, হরির দুই ছেলেকে বলে; বাপ বড় হ তাড়াতাড়ি
বাঘ তাড়াতি হবে, কুমুর মারতি হবে,  গায়ে জোর করতি হবে, নেই ছাড়াছাড়ি
গৌর নিতাই নিধি হরি সকলেই হাসে, বলে ঝড়োর কাছে সব শিক্ষে নেবে
শিখে নে ওরাও জঙ্গলে যাবে, বাগে পেলে বাঘের ল্যাজ ধরে ঘুরপাক দেবে।


সোনারপুর
১০/১১/২০২০