কয়েকটা দিন বেশ আনন্দে কাটিয়ে গৌর ও নিতাই বাড়ীর পথ ধরে
হাঁটা পথে মাতলা, মাতাল নদীর খেয়া পার হলে মাতলা ইস্টিশন ওপারে
দুজনের আজ মন ভালো নেই, চুপচাপ হেঁটে যায় কথা নেই কারো মুখে
রোদ্দুরটা বেশ চড়া চৈত্রের ছোঁয়া, গাছের ছায়ায় জিরিয়ে নেয় আংশিক সুখে  
ভালোবাসার বন্ধন ছিঁড়ে গেলে যেমন হয়, স্মৃতি যখন কুরে কুরে খায়
যেন পিছনে ফেলে এসেছে ভালো লাগা সময়, বন্ধুর জন্য ভাবনা পিছু ধায়
নীরবতা ভেঙে গৌর বলে বাড়ি ফিরে একদিন চল ঘুরে আসি শাঁকের হাটে
নিতাই বন্ধুকে থামিয়ে বলে;  যদি গেরামে পাওয়া জেতো ভালো হত তবে
দুই দাঁত বয়স হলে ভালো হবে, উদোম গেলে গায় গতরে পাওয়া যাবে
উঠে পড়ে দুইজনে, আরো কিছুটা হেঁটে গাঙ ধারে পোঁছায়, চরে নাবে
বাড়ি পৌঁছাতে সুর্য প্রায় পাটে, সারা দিনের ক্লান্তির ছাপ ওদের চোখে মুখে
গৌর বলে সন্ধ্যায় আসবি নাকি ! নিতাই বলে দেখি; যতিন যদি বাড়ি থাকে।  


হরি সারাদিন বাড়িতেই থাকে, এখানে তেমন কাজ নেই, তবুও কাজ খোঁজে
মিতে নিধিকে ও বলে হরি, নিধি হরিকে লাগিয়ে দেয় নতুন বাঁধের কাজে
কোথাও নদীর চর, কোথাও বা জঙ্গলের ভিতর দিয়ে বাঁধ হয় মাটি কেটে    
অন্য মজুরদের দল তাঁবু খাঁটিয়েই থাকে, ঠিকেদার লোক এনেছে দূর থেকে
অন্য মজুরেরা বাংলা বললেও হরি পুরো বুঝতে পারে না, চুপচাপ কাজ করে
এক সের চাল ও এক আনা হিসেবে পায় প্রতি রোজে, সন্ধ্যার আগে ঘরে ফেরে
জমির চরিত্র বদল হয় জঙ্গল কেটে, জেনেছে বাঁধের কাজ টানা তিন মাস চলে  
চিন্তা যে হয় না এমন নয়, তবুও স্ত্রী কমলার কথায় ভরসা পায়; উপায় হবে বলে
সংসারের ভালো মন্দ সব কমলার উপর, সে যা ভালো বোঝে তাই করে
হরির দায় কেবল রোজগারের, কাজ করে যা পায় সবটুকু কমলা কে দেয় ধরে।


নতুন মাটিতে লাগানো আনাজের ক্ষেত,  কমলার হাতের ছোঁয়ায় ভরপুর ফুলে ফলে
নিজেদের খাওয়ার পরে অনেকটাই উদবৃত্ত, ভাবে যদি বেচা যেত ! হরিকে বলে
এখানে তেমন সুবিধে থাকলে বেচা যেত, সবাই যে যেমন পারে করে-কম্মে খায়  
নিধি কাজ-কম্ম কম থাকলে ঘুরে যায়, একদিন নিধিকে ও বলে কথায় কথায়
সাতপাঁচ না ভেবে, হরি কাছারিতে আনাজ দিয়ে আসে ঝুড়ি ভর্তি করে একদিন
কাছাকাছি যারা বসত করেছে তাদেরকে ও কমলা আনাজ বিলায় প্রায় প্রতিদিন
সংসারের কাজ, বাগানের কাজ আর ছেলেদের দেখভালে সময় কাটে কমলার
একেক দিন ভাবে শরিকি ভিটের কথা, সামান্য বিষয়ে ও দিন যেত কত ঝামেলার।  


সোনারপুর
১০.১২.২০২০