অন্যদিন শুলেই ঘুমিয়ে পড়ে কমলা, আজ ঘুম আসে না, নানা ভাবনা মাথা খায়
গেরামে অনেক কথা শুনেছে ভুত প্রেতের, ভেবে পায় না কি ভাবে আলো হেঁটে যায়
বুঝতে পারে কত্তা ও ভয় পেয়েচে,  ভাগ্যিস ছেলে দুটো ঘুমিয়ে ছেল, এই রক্ষে
ভাবে, গেরামের বুড়ো বুড়িদের কাছে শুনেচে, ঐ বড় পুকুরে নাকি টাকা চরাত যক্ষে
আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে চোখ টা সবে লেগেছে, ঘুম ভেঙে যায় গোঙানির শব্দে
কান পাতে, উঠে বসে বিছানায় গাড় অন্ধকারে, হরি কে ধাক্কা দিয়ে জাগায় কোনমতে
হরিও উঠে বসে, কিন্তু কিছুই শুনতে পায় না, ধুস স্বপ্ন দেখে আমারেও জাগিয়ে দিলে
হরি, হাতড়ে হাতড়ে দেশলাই খুঁজে লন্ঠন টা জ্বালায়, ঘটিতে ঢাকা পানি খেয়ে বলে
শুয়ে পড় ও কিছু নয় মনের ভুল, কমলা বলে নিজে কানে শুনিচি এ জিনিষ ভুল নয়
বলে আলো টা জ্বালা থাকুক, দুহাত জুড়ে কপালে ঠেকিয়ে বলে তুমি দেখ  দয়াময়য়
গত সন্ধ্যায় বাঘে ধরার খবর পৌঁছেচে কাছারিতে, সকাল হতেই মিতে নিধি পোঁছেচে
নিধির ডাকা ডাকিতে ঘুম ভাঙে হরির, দরজা খুলে বলে ইস এত বেলা ! বুঝিনি যে ।


নিধিকে বসতে বলে হরি মুখ হাত ধুয়ে আসে, নিধি বলে কি ব্যাপার বলত মিতে !
হরি আগের দিনের ঘটনা জানায়, নিধি বলে হুঁ বাবু তাই পাঠাল ঠিক খবর নিতে
কমলা এসে সলজ্জ হাসিতে জানায় গরমে ঘুম হয়নি রাতে, তাই উঠতে দেরি হোল
রাতের দেখা আলোর কথাও জানায়, নিধি অবাক হয়, বলে সে দেকেনি এমন আলো    
কমলা বেতের পাত্র ভরে মুড়ি ও বাতাসা দেয়,  বলে তোমরা দু-জনে খাও ঠাকুরপো
দুই মিতে মুড়ি বাতাসা খেতে খেতে গল্প করে, নিধি বলে বাঘ মারলে টাকা দেয় তো
এখন বেশ কটা দিন তাহলে কাজ বন্ধ,  মনেহয় বাঘিনী বাচ্ছা নে ডেরা করেছে  
ফাগুন চোত মাসে বাচ্ছা হয়, তিন মাস পরে চোখ ফোটে, নির্ঘাত বাঘিনীই মেরেছে ।


খাওয়া শেষ করে নিধি বলে মিতে চলো তাহলে, বাবুর সঙ্গে দেখা করে আসবে
হরি ও নিধি বেরিয়ে পড়ে কাছারির পথে, একপো বেলাতেই চড়া রোদ, যেন গিলে খাবে
খামার পেরিয়ে ঢুকতেই ওরা দেখতে পায় সদরে কয়েক জনের জটলা বকুল তলায়
নিধি এগিয়ে যায়, হরি চিনতে পেরে বলে মিতে, এরা ঐ দলের, এদের কথা বোঝা দায়
নিধি বুঝতে পারে এরা বাঙালি নয়, বলে কা হো, কেয়া মাংতা ? কিসসে মিলনা হ্যায়
ওরা ও হিন্দি শুনে একটু সাহস পায়, বলে শের নে আদমি কো মারা, ডর লাগতা হ্যায়
নিধি হাত দেখিয়ে বলে, ঠারো ই ধার, হম বাত করকে বুলাতা হ্যায়, সমঝা; ভাগো মাত
হরি,  নিধির দিকে আর ঐ দলের দিকে তাকায়, মিতের কথা শুনে কপালে ওঠায় হাত
নিধি বলে এসো মিতে, যাই বাবুকে বলি, দেখি কি হয়, হরি বলে এদের সর্দার আসেনি
তুমি বেশ জানো, একসঙ্গে কাজ করি বটে, ওরা যে কি বলে আমি কিচ্ছু বুঝতে পারিনি
নিধি ভিতরে গিয়ে বাবুকে সব জানায়, হরি সেরেস্তায় নায়েবের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়
একটু পরে নিধি বাইরে এসে বলে, তুমহারা সর্দার আয়া কেয়া ! বাবু উসকো বুলাতা হ্যায়।


সোনারপুর
২৬/১২/২০২০