গুনো ঘেমে নেয়ে হরির দাওয়ায় এসে বসে, কমলা এক ঘটি জল কয়েকটা বাতাসা দেয়  
আপন মনেই গুনো বলে; কত কষ্ট করে ডাগর করিছিলুম ভাই, নিঃফুটে গেল! হায় হায়    
হরির মনেও ঢেঁকি পড়ে, কখন কোনটারে না টেনে নে যায়, কি বলবে ভেবে না পায়
আমতা আমতা করে বলে গুনো দা, কিছু একটা করতি হবে, হেঁসো পেতে  মারা যায় !  
গুনো বলে দুই খালের মুলোম লেপে ফেলেছে ভাই, আসা যাওয়া করে দেখিছি আগে
শালা,  আমার ছাগল দুটো টেনে নে গেল ! আমিও শেষ দেখে ছাড়ব, মনে বড্ড লাগে
মনস্থ করিছিলুম কদিন বাদে গায় সারলি;  চড়াবিদ্যের হাটে নে যাব, দু মাসের খোরাক
মাথায় বাজ পড়ল ভাই, বিনামেঘে বাজ, কি করে ভাতের যোগাড় হবে ভাবতিচি বেবাক
জল বাতাসা খেয়ে গুনো বলে উঠি ভাই হরি, হেঁকে বলে বউমা যাই, দেখি কি করা যায়
তবে শালারে মারবুই, গুনোর ক্ষতি করেছে, ছেড়ে দুবুনি, চামড়া বেচে দাম উঠবে নিচ্চয়।  


এমন ঘটনা যে ঘটে হরি বা কমলা কেউ শোনেনি আগে, উঠোন থেকে ছাগল টেনে নে যায়
হরি চুপ মেরে বসে থাকে কি যেন ভাবে উদাস হয়ে, কমলার কথায় সম্বিত ফিরে পায়
বসে থাকলি হবে, চারায় জল দিতি হবে না ! কমলা কলসি নিয়ে এগিয়ে যায় পুকুর পাড়ে
হরি ভাবে পুরনো জায়গায় ফিরবে তারও উপায় নেই, এখানেই থাকতে হবে মাটি আঁকড়ে
কমলা বলে বর্ষাটা এলি বাঁচি, জল টেনে টেনে আর পারিনে, হরি বোঝে শরীরটা ভারী হচ্ছে
বর্ষার পরেই নতুন মুখ আসবে সংসারে, শিকারির বউই ভরসা এ তল্লাটে ধাইয়ের কাজে
আর আছে গুনোর বউ কমলার থেকে খানিক বড়, মাঝে মধ্যে খোঁজ খবর করে, সাহস দেয়
বলে গরীবের ঘরে খাঁই বেশী সই , কি করবি বল;  দিন পার হয়ে যাবে ভগবানের ভরসায়
হরি জমিতে কাড়ান চাষ দে রাখে, বীজপাতার সবুজ হাসি দ্যাখে আর আকাশের দিকে চায়
ভাবে বড় ছেলেটাকে এবার কাজে লাগাবে, কমলা পারবে না; একলা হাতে সামলানো দায়
দিন চারেক পর দুপুরে হটাত আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামে অঝোরে, আষাঢ়ের প্রথম হপ্তায়  
সে দিনিই গুনোর ফাঁদে পড়ে জলের রাজা, পেট চিরে পড়ে আছে নোনা খালের কাদায়
পর দিন সকালে গুনোর ছেলে আসে, বলে কাকা বাপ তোমারে ডেকেছে, কুমুর মেরেচে বাপ
হরি দুই ছেলেরে সঙ্গে নে দৌড়ে যায় গুনোর বাড়ি, দ্যাখে সত্যি, আনন্দে গুনো করে লাফঝাঁপ
বলে ভাই বলিছিলুম না শালারে ছাড়বুনি, ঐ দ্যাখো উল্টে আছে কাদায়, ছালটা ছাড়াতি হবে
কাজ বাড়ল, হরি ভাই যদি কাছারি যাও বাবুকে খবরটা দিও, সায়েব জানলি টাকা পাওয়া যাবে।    


হরির দুই ছেলে অবাক চোখে দ্যাখে;  কুমীর দ্যাখেনি আগে, হলেও বা পেট চেরা মরা
গুনোর শক্ত চোয়ালে বিজয়ীর হাসি, বলে গুনোর ক্ষতি করবি ! আহা হা হা বেচারা
হরি দুই ছেলেকে বলে চল চল বাড়ি চল, মরা কুমুর আর কী দেখবি ? বাড়তেচে বেলা
গুনো শক্ত বাঁশের খাদি হাতে খালের কাদায় নেমে ডাকে ছেলেরে, দড়ি নে আয় ভোলা।  

সোনারপুর
২৫/৩/২১