জয় আছে খোশ মেজাজে, মনে জাগা কথা গুলো আড়াল করেই রাখে
ভাবে সে বলবে কাকে বাড়ি গিয়ে, বাবা দাদা নাকি শুধুই বলবে মাকে
নানা কাজে থেকেও তবু যেন সময় বাঁচে হাতে, অদ্ভুত স্বপ্ন দ্যাখে রাতে
ভেবে পায় না এমন কেন হচ্ছে ?  মাকে সব বলছিল সে খেতে খেতে
ছেলের নানা কথা শুনে কমলাও নির্বাক, শুধু চেয়ে থাকে মুখের পানে
শ্বশুরের ভিটে ছাড়ার পর এই প্রথম, কমলা প্রার্থনা জানায় নারায়ণী চরণে
ছেলেকে বলে ও সব কিছু না, বাবুর সঙ্গে যাবি, ভয় কিসের ! বোকা
মায়ের কথায় ভরসা পায় জয়, বিকেলে ফিরে যায়, মনে হচ্ছে বড্ড একা ।


কয়েক দিন পর আসে সেই সকাল, পূর্ণ জোয়ারের গাঙে বোট লাগিয়ে ঘাটে    
ঝোড়োর ছেলে এসে খবর দেয়, নিধি চটের বস্তা থলের বান্ডিল নিয়ে যায় ছুটে
বাবুর পিছু পিছু বড় চামড়ার সুটকেস মাথায় নিয়ে চলে জয়, বাতাসে হিম ভাব  
পুব আকাশে জাগছে দিনমণি, গাছ গাছালির নিবিড়তা পেরিয়ে পৌঁছায়নি তাপ  
নিধি বোটের উপর, ছোট্ট কাঠের পাটায় বাবু পা রাখেন, নিধি বাবুর হাত ধরে  
পিছনে সতর্ক জয়, বাম হাতে সুটকেস সামলিয়ে ডান হাত রেখেছে সামনে করে
নোঙর তুলে ঠেলে দিয়ে ওঠে ঝোড়োর ছেলে,  বোটের মুখ ঘোরে হালের মোড়ায়
বাবু ভিতরে গিয়ে বসেন, নিধি ও জয় বাইরে, বোট এগিয়ে চলে প্রথম ভাটায়    
জয় অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে দুপারের ঘন সবুজে আর মাথা তোলা চরে
ছোট বড় নানা পাখির ডাক, দাঁড় টানার শব্দে মুখরিত সকাল সোনালি রোদ্দুরে
নিধির ডাকে সম্বিত ফেরে জয়ের, এই তোর খিদে পায়নি ! মুড়ি আছে খাবি ?
জয় মাথা নাড়ে, মুড়ির পুঁটলি খুলে দুজনে খায়, নির্বাক জয়ের চোখে ভাসে ছবি।


জয় বলে পান্তা বেলা হয়ে গেল, কখন পৌঁছাব কাকা ? এইতো মাতলার পরে
এইবার দেখবি মাতলার রূপ, গতরের তোড়, পারলি গিলে খায় টপ টপ করে    
কাত্তিকের শেষ, হয়ত চোত বোশেখের মত নয়, তবুও ভরসা নেই মাতলারে
আমার দিকে সরে এসে বস, তুই এই পত্থমবার এলি, নয়ত চল বসি ভিতরে
ঝোড়ো হাঁকে আঁটকুড়ির বেটারা চেপে মার, গতরে জোর নি, ননি খেইচিস ননি ?
বোটের গতি মন্থর, ঘোলার টানে উজান বায়, কড় কড় শব্দে দাঁড় কাটে পানি
দুই দাঁড়ির শরীর বেয়ে নামে ঘাম, অসম যুদ্ধে জিত্তেই হবে লড়াই মরণ পন
হালের মোড়ায় বোট দোলে এগিয়ে চলে, দূরে দেখা যায় গোলকুঠি ভবন।      
    
সোনারপুর
১৫/০৭/২১