বাকি রাত এপাশ ওপাশ করে কাটায় জয়, ভোরের দিকে বেশ ঠান্ডা বাতাস আসে
গাঁয়ের ছেলে সে, খুব সকালে ওঠাই অভ্যাস, মাদুর বালিশ গুটিয়ে দালানে এসে বসে
শীত শীত করে, ঘরের দড়িতে রাখা কাপড় ভাঁজ করে গায়ে জড়ায়, সকাল হয়
কার্নিশে পাঁচিলে দলে দলে কাকের ডাকে সকালের নীরবতা ভাঙে, চেয়ে থাকে জয়  
রামু আর দুই জনও দালানে এসে বসে, রান্নার ঠাকুর গীতার মা জেগেছে সবাই
উপরের দালানের দিকে তাকায়, আকাশে আলোর ছটা, তবে উপরে কারো সাড়া নেই      
রামু বলে চলো ভায়া দুধ আনতে যাই, জয় রামু পাশাপাশি হাঁটে, পিতলের বালতি হাতে
যেতে যেতে রামু বলে ঐ দেখো গঙ্গায় খড়ের নৌকা যায়, ভায়ার ঘুম হয়েছে  রাতে !
জয় হেসে বলে হ্যাঁ এক ঘুমেই রাত শেষ, দুধ নেবে কোথায় ? ঐ সামনে কালোর খাটালে
বুঝতে পারে না জয়, বলে কোথায় ! রামু বলে খাটালে, জয় জানে দুধ পাওয়া যায় গোয়ালে।


দুধ নিয়ে ফিরতেই গীতার মা বলে ও রামু দা, উপরে যাও তাড়াতাড়ি, বাবু খুঁজতেছে দু-জনায়
গীতার মাকে দুধের বালতি দিয়ে, জয় কে বলে এসো ভায়া বলেই ত্রস্ত পায়ে রামু উপরে যায়  
বাবু উপরের দালানেই ছিলেন, দুজনে গিয়ে নমস্কার জানিয়ে দাঁড়ায়, খাটাল দেখে এলি  
রাস্তা চিনেছিস, জয় মাথা নেড়ে জানায় হ্যাঁ, বাবু বলেন রামুর সঙ্গে চিনে নিস বড় রাস্তা গলি
রামু নিচে নামে গীতার মায়ের ডাকে, সকালের চা নিয়ে উপরে যায়, চা পৌঁছায় ঘরে ঘরে
জয় চুপ করে বুঝতে চেষ্টা করে রামুর কাজ কর্ম, মনে মনে ভাবে বাবু কি কাজ দেবে তারে
চা শেষ করে, লোহার তারে বাঁধা দুটো চাবি জয়ের হাতে দিয়ে,  বলেন আমার সাথে আয়  
বাবু আগে পিছে জয়, সকালে গঙ্গা দেখেছে পাড়ে দাঁড়িয়ে, এখন ছাদ থেকে, জয়ের চোখে বিস্ময়
এর আগে সে খড়ের চালে উঠেছে লাউ কাটতে, এই প্রথম বার কোঠা বাড়ির ছাদে, ঘোর লাগে
চাপা উচ্ছ্বাস চোখে মুখে, বাবু একটা বন্ধ দরজা দেখিয়ে বলেন তালাটা খোল দেখি আগে
কয়েক বার চাবি ঘুরিয়ে তালা খোলে জয়, দরজা ঠেলতেই ভ্যাপসা গন্ধ নাকে আসে, চামচিকে ওড়ে      
আবছা আলোয় দেখতে পায় লাঠি, সড়কি, টাঙি, বল্লম, ভাঙা ইট, ভাগে ভাগে রাখা, ছোট্ট ঘর জুড়ে
পিছন থেকে বাবু বলেন কিরে দেখতে পাচ্ছিস কিছু ! জয় বলে আজ্ঞে, এগুলোর ঝাড়পোঁচ করবি
তোর সঙ্গে তেওয়ারী থাকবে, ঝেড়ে পুঁছে, তেল মাখিয়ে ঠিকঠাক করে দুজনে মিলে গুছিয়ে রাখবি
কিছুক্ষণ এটা ওটা দেখে বাবু বলেন আচ্ছা চল, কাল সকালে কাজ শুরু করিস, তালা লাগা এখন
বাবু আগে নেমে যান, জয় তালা লাগিয়ে, ছাদে দাঁড়িয়ে চারপাশ দেখে বিস্ময়ে কাটায় কিছুক্ষণ।  


সোনারপুর
১১/০৯/২০২১