বাবুর কথাগুলো বার বার কানে বাজে জয়ের, দিনে রাতে থাকবে না ফাঁক  
সতর্ক থাকবি, জিজ্ঞাসা নয় ব্যবস্থা নিবি, তুই দলপতি নির্দেশ দিতে নয় রাখঢাক
রাতে তেমন ঘুমোতে পারে না জয় মাঝে মাঝে উঠে বসে, অদ্ভুত দুশ্চিন্তার ভারে  
খড়খড়ির আলোয় সাপের জিভের মত দেখায় সড়কির ফলা, রেখেছে পাশে যত্ন করে  
রাত গভীরে কিছু চিৎকার ভেসে আসে কানে, তবে কাছাকাছি নয় বুঝতে পারে
সুখরাম, রামলাল আজ এ ঘরে নেই, দুজন গেটের ওপাশে উল্টো দিকের ঘরে
ভারী লোহার গেট উপর নিচে বাঁধা মোটা শিকলে, সের দুই ওজনের বড় তালায়
রাত বাড়ার সঙ্গে মাঝে মধ্যে পথ হারানো একটা দুটো মশা পোঁ পোঁ করে জালায়  
রামু আজ দুপুরে ঘুমোতে পারেনি, নড়াচড়া নেই, শুধু উটের কুঁজের মত পেটটা ওঠে-নামে    
মাঝে মাঝে মুখ দিয়ে দম ছাড়ে, যেন বিরাট কালো ইঞ্জিনটা ইস্টিশনে ভুস করে থামে।      
  
শেষ রাতে জয় ঘুমিয়ে পড়ে, জানলার খড়খড়ি দিয়ে আসা তুমুল বৃষ্টির ছাঁটে ভাঙে ঘুম
ধড়ফড়িয়ে উঠে পড়ে, রামু তখনো ঘুমাচ্ছে, আকাশ কালো  শেষ শ্রাবনে বৃষ্টি নেমেছে ঝুম  
চোখ খচ খচ করে জয়ের, কলসির জলে গলা ভিজিয়ে ভাবে একটু ঘুমিয়ে নেওয়াই ভালো  
খড়খড়ি বন্ধ করে মাদুরটা সরিয়ে  শুয়ে পড়ে, মেঘের আস্তরে ঢাকা সকালের আলো
আরে ভায়া ওঠো, রামুর ডাকে ঘুম ভাঙে জয়ের, অনেক হল বেলা, খাবে নাকি চা মুড়ি
জয় ঘুম চোখে খানিক তাকিয়ে থাকে, এখনো বৃষ্টি হচ্ছে ! শুধু বৃষ্টি নয় শীল ও ঝুড়ি ঝুড়ি
রামু বলে শুনলুম ছিমানি বাজারে লুটপাট, কাটাকাটি হয়েছে, জয় অবাক হয়ে বলে কাটাকাটি !  
হ্যাঁগো ভায়া তবে আর বলছি কি ! বাজার সরকার উপরে গিয়ে বলছিল, হাতে হাতে ছোরা লাঠি
জয়ের চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে, রামু বলে ভায়া মনে জোর রেখো, বাবু নিচ্চই তোমারে বলবে  
তোমারে যখন নে এলো তখনি বুঝিচি, তারপর রঘু মাস্টরের ডেরায়, দেখো আরো কি ঘটবে
চলো ভায়া আজ গরম গরম খাবে চলো, বাদলার দিন – ভীম ঠাকুর কষিয়ে রেঁধেছে চালে-ডালে  
আঃ যা লাগবে না – সঙ্গে গোটা গোটা আলু, নেবুর আচার, দারুণ জল খাবার বাদলার সকালে।  

রামু উপরে জলখাবার পৌঁছে দিতে গেলে বাবু বলেন, জয় উঠেছে ? ওকে উপরে পাঠিয়ে দিস
জলখাবার খেয়ে জয় বাবুর কাছে যায়, বাবু জিজ্ঞাস করেন দলবল এলে কি করবি ভেবেছিস !
জয় নিজের ভাবনার কথা বিস্তারে জানায়,  বাবু বলেন বেশ – কতটা ইট তুলেছিস তাতে হবে !
নিচে যা পড়ে ছিল প্রায় সব, ওরাই আটকাবে আগে, লাঠি সড়কির চেয়ে ইটেই বেশী কাজ দেবে
আপনি একবার দেখে নিলে ভালোহয়, আমি ওদের কথা তেমন বুঝিনে, ভালো হয় বুঝিয়ে দিলে
আচ্ছা চল, বৃষ্টি পড়ছে ছাতা নে, বাবু দেখে শুনে জয়ের কাঁধে হাত রাখে, হিন্দিতে বুঝিয়ে বলে।  


সোনারপুর
২৯/০১/২০২২