জয় প্রতিবারেই কম পাশা তোলে, বিমলকে জেতানোই তার লক্ষ্য, খেলা চলে
কয়েক বার জেতার পর বিমল বলে তুমি ঠিক খেলছ না, এটাকে কি খেলা বলে ?  
তোমার গায়ে আমার চেয়ে জোর বেশী, তাও আমাকে জেতাতে পাশা দিচ্ছ ছেড়ে
জয় বলে নাগো বড়বাবু, আমিও  তুলছি কাড়াকাড়ি করে, বিমল না বলে, ঘাড় নেড়ে  
বাইরের লোহার গেটে হটাৎ বিকট শব্দ,  জয় সতর্ক হয়, বারান্দার থামের পাশে দাঁড়ায়  
রাস্তার উপরে কিছু মানুষের জটলা, বুঝতে পারে ছাদের থেকেই বার্তা এসেছে ইট ছোড়ায়
দেরী না করে দৌড়ে নেমে ঘরে ঢোকে, সড়কি হাতে দেয়াল ঘেঁষে চোখ রাখে গেটের ফাঁকে
তালা বন্ধ ভারী গেটে ধাক্কা-ধাক্কি, সতর্ক সব রক্ষী, ভাগো হিঁয়াসে, ভাগো উপর থেকে হাঁকে  
ছাদ থেকে ছোড়া আদলা ইট সামনের রাস্তায় টুকরো হয়, জটলা পাতলা হয় গাড়ির শব্দে
বন্দুক উঁচিয়ে জনা কয়েক সেপাই নামে, তেড়ে যায় দুষ্কৃতীদের দিকে, চরাচরে নামে সন্ধ্যে  
জয় সড়কি হাতেই ছাদে উঠে যায়, দেখতে পায় কিছুটা দূরে সেপাই দাঁড়িয়ে ফাঁকা রাস্তায়
একটা ঘোড়ার গাড়ী ছুটে যায় পরিচিত শব্দে, ছুটির দিন নয় তবুও দোকান  বন্ধ সন্ধ্যায়।


কিছু পরে তেড়েফুঁড়ে বৃষ্টি নামে, জয় ঘরে বারান্দায় পায়চারী করে অদ্ভুত এক অস্থিরতায়
কান খাড়া, চোখ চঞ্চল, চোয়াল শক্ত করে যেন ষষ্ট ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে কিছু খুঁজে পেতে চায়
রাতে খাওয়ার আগে পর্যন্ত এক ঘোরের মধ্যে কাটিয়ে, যাচ্ছি বলে উত্তর দেয় রামুর ডাকে
নিঃশব্দে খাওয়া শেষ করে, ঘরে গিয়ে জানালার খড়খড়ি তুলে দেয়, নির্জন রাস্তায় চেয়ে থাকে
জয় জানত না, পরের দিনটা ছিল ১৬ই আগস্ট ১৯৪৬, শহরের রাস্তায় মিশবে মানুষের রক্ত
কিছু হিতৈষীর উস্কানিতে তান্ডবে মাতবে কোলকাতা, চাক্ষুষ করবে ঘৃণ্য এক সাম্প্রদায়িক ক্ষত  
এক তরফা লুঠ তরাজ, জন মানসে ভীতির সঞ্চার, যে যেদিকে পারছে ছুটছে, বাজার বন্ধ
দোকান বন্ধ, আগুনে পুড়ছে একটু একটু করে জামানো স্বপ্ন, ভেঙে খানখান সব সম্বন্ধ
পরের সকাল থেকে প্রতিরোধ, পাল্টামার, শহরের পথে ছড়িয়ে পচন ধরা মানুষের লাশ  
সুরক্ষিত ঘরে নাটের গুরুদের ষড়যন্ত্রের আগুনে ছারখার মানুষের সব সম্পর্ক জীবনের আশ
চারদিন পর তান্ডব কিছুটা স্তিমিত হলেও শেষ হয়নি, ছড়িয়ে পড়েছে শহরের বাইরে দূরে
সঠিক খবর জানা ছিল দুরহ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে, ভুল খবর ছড়িয়েছে লোক মুখে ঘুরে।  


বাবুর বাড়ির গেট খুলেছে ছয় দিন পর, জয় সহ রক্ষিরা সব্বাই সজাগ থেকেছে দিনরাত
বড় মানুষের বসবাস বলে এলাকায় সেপাইয়ের পাহারা, তবুও চোরাগোপ্তা হানায় হয়েছে কাত
বৃদ্ধ দোকানদার লুটিয়ে পড়েছে টাকার বাক্সের উপর, মাছ আর মানুষের রক্ত মিশে একাকার
অবিশ্বাসের নির্মম অভিঘাতে দীর্ণ সমাজ, মানুষের মন, অবিবেচক সিধ্যান্তেই ঘোর অন্ধকার
আরো একমাস পরে আশ্বিনের প্রথমে নিধি আসে, বাড়ির খবর পায় জয়, মনটা শান্ত হয়
দিন দুই পর বাবু বলেন তুই নিধির সঙ্গে বাড়ি ঘুরে আয়, বুঝতে পারছি মনটা ভালো নয়।      

সোনারপুর
২৮/৩/২২
  
সুপ্রিয় কবি সঞ্জয় কর্মকারের আগ্রহে অশেষ প্রাণিত হয়ে প্রকাশ হল ৪৭ তম পর্ব।
আন্তরিক ধন্যবাদ কবি, এ ভাবেই প্রেরণা দিয়ে যাবেন।