জয়ের মনটা আনন্দে নেচে ওঠে, মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়, রাতে ঘুম আসে না
জন্মাবধি মা বাবা ভাই বোন কে ছেড়ে থাকেনি, আনন্দে মাথায় ঘোরে হাজার ভাবনা
নিজের কাছে টাকা নেই, জানে না বাবু কি দেবে, তবুও ভাবে কার জন্য কি কিনবে
নিধি কে বলে কাকা, তোমার সঙ্গে বাজার যাবো, তুমি নিশ্চয়ই ভালো জিনিষ চিনবে
নিধি বলে বাবু কি টাকা দিয়েছে ? জয় ঘাড় নেড়ে বলে না, এমনি দেখতে যাবো
নিধি জয়ের মন বুঝতে চেষ্টা করে, বলে আচ্ছা সে হবে, গেলে তোকে সময়ে বলবো  
দুইদিন পর বাবু জয়কে উপরে ডাকেন, বলেন ধুতি শাড়ি এই টাকা কটা রাখ এখন      
বলেন তৈরি থাকিস, নিধি হয়ত বুধবার যাবে, কথা বলে নিস ওর সাথে সময় মতন    
বাড়ি যাবার আনন্দে খেতেও পারে না জয়, রামু জিজ্ঞাস করে কিগো বাপু কি হয়েছে
জয় বলে না খিদে নেই তাই খেতে লাগছে না মন, হয়নি কিচ্ছু পেট তো ভরে আছে
সকালে নিধিকে একলা পেয়ে বলে কাকা বুধবার যাবে ! আমাকে বলো বাজারে গেলে
বাবু ধুতি শাড়ি আর টাকা দিয়েছে, নিধি শুনে হাসে, বলে সব গুছিয়ে রাখ, যাসনি ভুলে  
নিধির পরামর্শে কাপড় গামছা গেঞ্জি টাকা গুছিয়ে রাখে একটা মোটা কাপড়ের ব্যাগে  
বাবুর বাড়িতে অনেক বার ইলিশ খেয়েছে, জয়ের ইচ্ছা বাড়ির জন্য কিনবে যাবার আগে ।  


মঙ্গল বার সন্ধ্যায় উপরে যায় জয়, আগাম অনুমতি নিয়ে রাখে বাবুর, সকালেই যেতে হবে
বাবুর মা কমলা দেবীকে প্রণাম করলে তিনি কয়েকটা টাকা দেন, বলেন রাস্তায় খেয়ে নেবে
বুধবার ভোরে উঠে স্নান সারে জয়, রামু পান্তা আর আলু চোখা দিয়ে বলে পেট ভরে খাও
কোথায় কি পাবে তা জানিনে, অনেক দূরের পথ পেট ভরা থাকলে  যেমন ইচ্ছে  যাও  
নিধি ও জয় দুজনেই খাওয়া দাওয়া করে, পোঁটলা পুঁটলি মাথায় নিয়ে রাস্তায় পা রাখে
অনেক পথ হেঁটে রেল ষ্টেশনের কাছেই বিখ্যাত মাছের বাজারে ঢোকে ইলিশের ঝোঁকে    
অনেক দেখে শুনে নিধি বলে এইটে নাও, চকচকে রুপালি অনেকটা চওড়া বেশ ভালো হবে  
ওজনে প্রায় তিন সের,  জয় নিধির দিকে তাকায়,  নিধি বলে বাড়ির সব্বাই তো খাবে
বুড়ো দোকানি ধনুকের ছিলার মতো মাছের ল্যাজে মুখে সুতলি বাঁধে, দেয় শালপাতা মুড়িয়ে
আরো দুজন লোক মাছ কিনতে আসে,  বুড়ো ঘাড় ঘোরাতেই মুহুর্তে কোপ দেয় বসিয়ে
নিধি জয়ের হাত ধরে টানে – গলি ঘুরে রাস্তা পেরিয়ে ষ্টেশন, আতঙ্কের সময় পেরিয়ে যায়  
মাছ পড়ে থাকে দোকানেই, ষ্টেশনে পৌঁছে মেলে স্বস্তি, চোখে মুখে জল ছিটিয়ে একটু খায়
দুই আনার টিকিট কেটে সাধারন কামরায় উঠে পরস্পরের দিকে তাকায়, আতঙ্কিত চোখে  
নিধি বলে চুপ করে বসে থাকো, ওসব আর ভেবো না, কোন কথা এনো না মনে মুখে
বাঁশি বাজিয়ে ট্রেন ছেড়ে দেয় কালো ধোঁয়ার পাল উড়িয়ে, জয় উসখুস করে চেয়ে নিধির দিকে
নিধি চোখ বুজিয়ে থাকে দেখতে চায় না আর, জয়ের চোখ জানালায় জানার ইচ্ছা হয় না ফিকে।    
    
সোনারপুর
২৮/০৩/২২