দিকচক্রবালে অস্তগামী রবি; নদীতে তার ছায়া রঙ ছড়ায়, মতির নৌকো ভেড়ে কাছারির ঘাটে  
দূরে গাছে জড়িয়ে হালকা কুয়াশার চাদর, দু-চারটে গবাদি পশু ধীরলয়ে ফেরে চেনা গোঠে  
জয় আগে পিছনে নিধি নামে, বুক ভরে নোনা জলের গন্ধ মাখা নির্মল বাতাসে শ্বাস নেয় জয়  
মতি হেঁকে বলে বাবু এলে খবর করো একবার, নৌকো ছেড়ে যায় অপর পারে মতির ডেরায়        
গাঙ ভেড়িতে উঠে নিধি বলে তুই কোথায় যাবি, বাড়ী ! সন্ধ্যে নামতে দেরি নেই সাবধানে যাস
জয়ের মনে এক অনাস্বাদিত সুর দোল খায়, হাওয়ায় ভেসে চলে বাড়ির টানে,  বুক ভরা আশ  
জঙ্গল কাটা নোনা জমি এখনো চাষের উপযুক্ত নয়, তবুও ইতিউতি সবুজ ক্ষেতে ফসলের সংবাদ
জয়ের কান্না পায়,  ভাবে আর কখনো সে কোথাও যাবে না, এখানেই তার স্বর্গ  মনের আবাদ
সন্ধ্যার শাঁক বাজার সাথেই জয় পা রাখে নিজেদের উঠোনে, এক অনাবিল আনন্দে ভরে যায় মন
বড় বোনটা দৌড়ে এসে জয়ের হাত ধরে, যেন বহুকাল বাদে অতি প্রিয় জনের প্রত্যাবর্তন।  


বড় বোন চিৎকার করে বলে, মেজদা এয়েছে, মেজদা এয়েছে, মেজ বোন ও দৌড়ে আসে
অনাবিল আনন্দ রাশিতে ভরে ওঠে জয়ের পৃথিবী, ভাই বোনের মধুর সম্পর্কে তারা ভাসে
কমলা প্রদীপ জ্বালিয়ে এসে ধমকে বলে এই বড় খুকি তোরা ছেলেটারে বসতে বলবি কবে  
জয় মৃদু স্বরে দুই বোন কে বলে আচ্ছা আচ্ছা চল, দাওয়ায় যাই তারপর সব গল্প হবে
তিন ভাইবোনে দাওয়ায় এসে বসে ঝ্যাঁতলায়, জয় থলেটা হাতে দিয়ে নমস্কার করে মাকে
কমলা কপালে হাত ঠেকিয়ে বলে কৃপাসিন্ধু দয়া করেছে, আর বাবা আগে জল দে মুখে চোখে
এত দূরের পথ মুখ চোখ কালো হয়ে গেছে, কলসির ঠান্ডা জল আর কয়েকটা বাতাসা এনে রাখে  
নে আগে জল বাতাসা টা মুখে দে, ওতে খাবার আছে মা, এই দুটোকে বেশি করে দাও আগে  
থলে খুলেই মা বলে,  হ্যাঁরে এটা কি ? এরম তুলতুলে সুন্দর বাস, জয় বলে মা এটা পাউরুটি    
কমলা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে এমন খাবার সে দেখেনি আগে, দুই বোন আহ্লাদে মিটিমিটি
জয় বলে এটা শুধু কলকাতায় পাওয়া যায়, গাঁ গঞ্জে নয়, বাবুরা সকালে বিকেলে জলখাবারে খায়  
কমলা বলে জানিনে বাপু কত রকম খাবার, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে বলে; এত নরম এটা ভাঙা যায়!
জয় বলে না, আমারে দাও – আমি করে দিচ্ছি তুমি বাবার ছুরি টা দাও, দাঁড়া দেখি সেটা কোথায়
আচ্ছা থাক, এমনি কেটে দিচ্ছি – দুই বোন অবাক চোখে তাকিয়ে, টুকরো করে ওদের হাতে দেয়
নে খেয়ে দ্যাখ, মাকে ও দেয়, বোনেরা মুখে না দিয়ে গন্ধ শোঁকে, জয় হেসে বলে ঐ ভাবে খায় !
জয় জিজ্ঞেস করে মা, বড়দা, বাবাকে দেখছি না তো বাড়িতে নেই ! সন্ধ্যে হয়ে গেল ওরা কোথায় ?        


সোনারপুর
২৭/০৯/২০২২  


বিদ্রঃ কবিতার পটভুমি যেহেতু শতাধিক বৎসর আগের অবিভক্ত বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চল সেই কারনে পাউরুটি ঠিক কি তা জানা সম্ভব ছিল না।