গ্রামের পাঁচ জনের পাঁচ কথা শুনে শুনে, হরির মনটাও বার বার দোলা খায়
বউয়ের সঙ্গে সব কথা কয়, বউ বলে আমিও শুনতিচি কত, কি বলি তোমায়
শোন, যা হবার তাই হবে, আগে গে ঘরদোর বেঁদে এসো, দেকা যাবে কি হয়
পথম পথম ওমনি হয়, কষ্ট হয়ত হবে, মন্দিরে মাকে বলিচি, কেটে যাবে ভয়
আমিও তো শুনিচি এই গেরামও জঙ্গল ছেল, জোকেবুড়ি টাকা চরাত বড় পুকুরে
একন কি আর দেখতি পাও ! চারদিকি ঘাট, ভিড় লেগে আচে সকাল  দুকুরে
হরি মনে মনে অনেকটা সাহস পায়, বলে আমিও তাই ভেবিচি; মন চেয়েছে যাবো
খেটে খুটে জমি-জমা ঠিক করে নিলি, ভাতের কষ্ট যাবে, দুবেলা অন্তত খেতে পাবো
হরি আরো বলে, শোন আমি তো সামনের হপ্তায় যাবো, কিছু শাক সবজির দানা নে যাবো  
ভেবিচি ঘরদোর বেঁধে, গরমের দানা-দুনি লাগিয়ে রেখে মিতেরে দেখতে বলে আসব
ধর, মাঘের শেষে এসে ফাল্গুনের পথম হপ্তায় ডেবো-ঢাকনা গুইচে নে চোলে যাবো
একন একটা বড় হাঁড়ি, কড়া, খুন্তি, ডাবু, খান চারেক থালা লাগবে, মাতলায় কিনব।  


পরদিন চার বন্ধু বট তলায় আলোচনায় বসে, হরি বউয়ের সঙ্গের কথা গুলোই বলে  
তিন জনেই বলে ও জোগাড় হয়ে যাবে, সামনে শীত, বল; কাঁথা-কানি কটা নিলি চলে
নানা ভাবনায় হরি একথা ভাবেনি একবারও; মাথা চুলকে বলে, হুঁ - দুটো করে লাগবে
শীতের চাদর, জামাও লাগবে,  নিতাই বলে সব কেঁতা-কানি একসঙ্গে বস্তায় নিলি হবে
আরো কিছুক্ষণ গল্প গুজব চলে,  গৌর বলে অঘ্রানের পথম বুধবার; যাত্রার দিন ভালো    
হাতে আচে চার দিন, আব্দুল মিয়াঁ কে বলে দিতি হবে, কি বলিস ! যতীন বলে তাই হল    
হরি বাদে বাকী তিন জনের বেশ আনন্দ আনন্দ ভাব, মনে হচ্ছে চার বন্ধু যাচ্ছে পালাগানে
নিতাই বলে চল আজ উঠি, যতীন একবার দেখে নিস মালগুলো, যদি পড়ে থাকে; ভুলিস নে  
উঠতে উঠতে যতীন বলে, তোরা কেঁতা-কানি নে আসিস কাল, সব বাঁধতি হবে বস্তায় ভরে
গৌর বলে, কাল বেলার দিকি সবাই যাবো তোর বাড়ি, গুইচে দে আসব ঠিকঠাক করে।


মঙ্গলবার বিকেলে গৌর তিন জনের বাড়ি যায়, বলে আসে আব্দুল আসবে খুব সকালে
সন্ধ্যায় সবাই হরির বাড়ি যায়, হরির বউ মাদুর দেয় বসতে, বলে তোমরা বিপদে পড়লে
যতীন বলে বৌঠান, আমরা যাচ্চি দেখতে,  হরি কি ব্যবস্থা করেচে, তবে ছাড়ব তোমাদের
হরি চাট্টি মুড়ি নিস, আব্দুলের গাড়িতে বসে... হরি বলে হ্যাঁ অনেকটা রাস্তা আমাদের
মাঝে ঐ গকুলপুরের হাটেও থামবে আব্দুল, মতিচুর, খইচুর, গজা আর জল পাওয়া যায়
মুড়ির সঙ্গে ভালো জমবে, খেয়ে দেয়ে তবে যাবো, অনেক্ষন দাঁড়ায় মোষ দুটোরে খাওয়ায়
ভোর বেলায় আব্দুল হাঁক দেয় যতীন ভাই, যতীন ভাই – নিতাই যতীন গৌর বেরিয়ে আসে
মাল পত্তর গুছিয়ে তোলে, হরিও আসে ধীর পায়ে, অজানা কষ্ট, ভয় হরির বুকে জড়িয়ে থাকে।      


সোনারপুর
০২/০৮/২০২০