নায়েব একটু সময় নিয়ে বলল, তুই কবে বাঁধবি ঘর !
জানিস তো কড়ি দড়ি দুটোই লাগে; জোগাড় করে লেগে পড়
এটা হল কার্তিকের মাঝ, অঘ্রাণেই ভালো; সময় পাবি হাতে
কাঠ কাঠমা কেটে ছেঁটে শুকোতেও সময় যাবে দেওয়াল গেঁথে
কদিন আছিস ! যাবার আগে গড় পাড়ের উলুগুলো কেটে রেখে যাস  
শুকিয়ে, শিশির খেলে ভালো হবে, নৌকো এলে কিনে রাখব বাঁশ
হরি কেবল মাথা নেড়ে দেয় সায়; ভাবছে মনে টাকা কোথায় পাবে
সম্বল ঐ ভিটে টুকুই আর দু-চার খানা বাসন, কী করে জোগাড় হবে
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে বলল হরি, আঁজ্ঞে; উলু কাল কাটতে পারি
খানিকটা গুছিয়ে রেখে – ভাবছি হপ্তা খানেক পর ফিরব বাড়ি
নায়েব বলল আচ্ছা আচ্ছা,  ভালো কথা; নিধি সরদার দেখিয়ে দেবে  
কিন্তু দেখিস বাপু, উলুবনে মনসার ঠাঁই - লাঠি রাখিস হাতের কাছে।    

আধপো বেলায় হাজির হরি কাছারির দরজায়, ডাকে নিধি—নিধি    
তামাটে রঙের শক্ত শরীর,  চকচকে কাস্তে আর হাতে নিয়ে লাঠি
সাড়া করে;  দরজা খোলে নিধি, উলু কাটাবে ! নায়েব মশায় কয়েছে    
চল হরি দেখিয়ে আসি। হরি বলে, ভায়া তোমারে আমার মনে ধরেছে
অসুবিধে না থাকলে এক দন্ড গপ্প করি এস। কথায় কথায় নিধি জানায়
বাপ মা ভাই বাবুর শহরের বাড়িতে থাকে, খেয়ে পরে আছে বাবুদের দয়ায়
বাবুর মা খুব ভালোবাসে তাকে ছোট থেকে, বাবু একেনে এল; ওরেও নিল জুড়ি
নিধিরাম থেকে বাবু একন নিধি সরদার বলে, আমি খালি বাবুর কাজই করি।
হরি বলে তোমার তবু বাবু আছে ভাই, আমার কি হবে ; ঐ ওপর ওলাই জানে
গরীব মানুষের সারা জেবন কষ্ট, যে পারে ঠকায়, বলতে পারিনে দুঃখ হয় মনে
তোমারে খুব মনে লেগেছে,  যদি ভাই মিতে হও ভয় পাবো না কোন খানে
নিধি বলে আমিও ভাবছিলুম এই কথা, তোমারে বলতুম  দু-চার দিনে
ঠিক আছে, আজ থেকে আমরা দুজন মিতে, তবে এক্ষুনি দিও না পাঁচ কানে
দিন গেলে বুঝবে সবাই; চলো মিতে বেলা বাড়ছে, বাবুর ঘুম ভাঙলেই খুঁজবে
তোমার কাছে দেশলাই আছে ? রসো, দু-গল্লা খড় আনি, গড় পাড়ে ধোঁয়া দিতে হবে
পোকা মাকড় যে যেথায় আছে আগুনের আঁচ ধোঁয়া পেলে, সবাই সরে যাবে।  


সোনারপুর
১৬.০৬.২০২০