মুখে আওয়াজ করে লাঠির ঝাপ্টা দিয়ে এগিয়ে,  নিধি আগুন জ্বালে
নিধি বলে, মিতে আগুনের কাছা কাছি থাকবে, বিড়ে নিয়ে এগিয়ে যাবে  
হেমন্তের শিশির ভেজা সকালে আগুনের আঁচ পেয়ে নাচ লাগে উলুবনে
হিস হিস, দৌড়ের শব্দ; বোঝা যাচ্ছে অনেকে আস্তানা গেড়েছিল এইখানে
দুজনেই পাশাপাশি দাঁড়িয়ে, হরি খানিক হতচকিত, ভয়ের ছায়া মনে  
নিধি বুঝতে পেরে বলে;  মিতে ভয় পেও না, সকলের ভয় আছে জানে
আর কেউ থাকবে ভেবেছ ! সাপখো্প, জানোয়ার; সব্বাই ভয় পায় আগুনে  
এইবার লেগে পড়, বাবুর হয়ত ঘুম ভেঙেছে, ডাকা ডাকি করবে নে
নিধি চলে যায়, হরি একটু দেখে নিয়ে, কাজ শুরু করে, আপন মনে
গুণ গুনিয়ে ওঠে, মাঝিরে আর কত কাল গুণের দড়ি যাবি টেনে ।  


একপো বেলার কিছু পরে নিধি আসে, হাঁক দেয়; মিতে, হরি পিছনে তাকায়
নিধি বলে বাব্বা, অনেকটা কেটে ফেলেছ দেখি, তোমার হাত চলে বেশ ত্বরায়  
এস মিতে বসি এখানে, হরি আসে মুখোমুখি বসে, নিধি গামছার পুটলি খোলে    
আজ পান্তা খাই নি, ছোলা সেদ্দ মুড়ি লঙ্কা পেঁয়াজ নিয়ে এইচি জল খাবারে  
হরি বলে মিতে আমি- – আরে না না বেশী করে এনেছি দুজনে খাব বলে  
অন্য দিন পেঁয়াজ দিয়ে পান্তা খাই, এই জল জঙ্গলে আজ মিতে হলে --
এর বেশী একেনে নেই, মাতলা যাব যেদিন,  খুব করে মিষ্টি খাব দুজনে মিলে    
হরি বলে, মিতে;  তোমরা মাতলায় যাও ! সে তো অনেক দূরের পথ, কী কারণে !  
ঐ দেখ;  মিতে কি বলে, মাতলা না গেলি সংসারের সব জিনিস পাব কেমনে
হাট আছে একেনে ? গন বুঝে যাওয়া আসা, দু দিন এক রাত্তির লেগে যায়।    


খেতে খেতে নিধি বলে, গুণ আছে তোমার , কাজের সুন্দর গোছ আছে  
উলু খাগড়া, তাও কেটে গুছিয়ে রেখেছ,  একবারে ধানের মত দেখাচ্ছে
এগুলো শুকোলে;  বিচুলি বেঁধে নিলে, খুব ভালো হবে,  দেখো খুব টেকসই  
একবার ছাওন দিলে দু-বছর চলে যাবে হেসে খেলে, খড়ের চেয়ে মানানসই
এক ঘটি পানি এনেছি তোমার জন্যি, পকুরের পানি ফটকিরিতে থিতান দেওয়া  
আমরা এটাই খাই, বাবু খায় ফুটিয়ে ঠান্ডা হলে, যেখেনে যেমন যায় পাওয়া
আজ কতটা কাটবে ? হরি বলে;  এই তিনপো বেলা পর্যন্ত, যতটা হয়
দুপুরে কী খাবে ? ভাত নিয়ে আসব ! দুজনে একেনেই  খাব
না না মিতে, ও সব আমার সয়ে গেছে – মজুরী করি, খেয়ে যাই –এসে খাই
তুমি বরং খেয়ে জিরিয়ে এস একবার , তোমার সঙ্গে যুক্তি বুদ্ধি করা চাই।    


সোনারপুর
১৮.০৬.২০২০