নিধি বয়সে একটু ছোট হলেও  বুদ্ধি গুলো বেশ শান দেওয়া
বড় মানুষের কাছে থাকার ফল, দেখে দেখে শিখে নেওয়া ।
হরি বলে; আচ্ছা মিতে, বাবু এই জল জঙ্গলে জমিদারি কেন নিল
কদিন ধরে কথাটা ভাবছি; বুঝতে পারিনে, অন্য দিকে জমিজমা তো ছিল    
নিধি উত্তর দেয়, সে অনেক কথা, দানের জায়গা, আমি যা শুনেছি বাপের মুখে  
হামিল সাহেব; বাবুদের পরিবারে কারুর জম্ম দিনে দিছিল যৌতুকে  
বাবুদের বাড়ি গঙ্গার পচ্চিম পারে, বাবুর কি মনে হল একেনে চলে এল  
বড় মানুষদের কথা ভাই - জানিনে; খেয়ে-পরে মাথা গুঁজে আছি এই ভালো  
মিতে, শোনো নায়েব বলেছে কালকে তোমার  জায়গা দেখিয়ে দেবে
আগের দিনে যে জায়গা দেকেচ, ওটার সামনে হালকা জঙ্গল, মিঠে খাল পাবে      
আর ওদিকে গুনোর ঘরও কাছে, পরিবার নিয়ে থাকবে, ডাকতে হাঁকতে –
জঙ্গলটা হালকা, ছোট গাছ কম, কেওড়া গুলো বেশ বড়, ভালো খুঁটি; আড়া হবে    
এটা হল মাঝের ঘেরি, একেনে নোনা খুব কম, দু-এক বছরে ফসল ফলবে  
আর যে জায়গা পাবে; তার খাজনা করে নেবে, তাতে তোমার ভালো হবে ।  


হরি চুপ করে কানে নেয় সব, ভাবে;  কি জানি কপালে কী আছে লেখা  
ছেলে দুটো ছোট একেনে কী পারবে থাকতে ! হয়ত রাজার পাবে দেখা
বংশের মানুষদের ছেড়ে এই দূর জল জঙ্গলে, বউ ছেলে নিয়ে বনবাসে
দীর্ঘশ্বাস পড়ে অজান্তে; নানা দুর্ভাবনায় তোলপাড় মন, তবুও সুদিনের আশে
নিধি বলে;  মিতে কিছু ভাবছ ! ভয় লাগছে, বুঝতে পারি ভাবনা আসে মনে
ঐ দখিনে ছ-আট ঘর বুনোদের; উত্তরে মণ্ডল আর মাঝি; গুনো আর তুমি মাঝখানে  
পূবে বেশ ভারী জঙ্গল; জোয়ার ঢোকে, পচ্চিমে কুঞ্জ গদাই রাখাল বলাইয়ের ঘর
গাঙের ওপারে প্রায় সব ঘন বন, জন্তু জানোয়ার বেশী আছে পূবের বনের পর  
বাবু শিকারে যায় ঐ পূব দিকেই, হরিণ; বরা; বন মোরগ শিকার করে আনে
গাঙের চরের একটু উপরে বোগড়া; কেওড়ার জঙ্গল, রাজা থাকে বোগড়ার বনে      
কেওড়ার পাতা; ফল খেতে আসে হরিণ;  রাজার চোখে পড়লে হয়না ফেরা
দু-ধারের ঘন বন; বোট থেকে বেশ লাগে দেখতে, বুঝেসুঝে তবেই চরে ভেড়া  
মাঝি দাঁড়িরা চরে টিন ভরে কাঁকড়া ধরে; সে কি বলব মালসার মত কাঁকড়া
লম্বা সাঁড়াশির চাপে খপা-খপ ধরে,  চোখের নিমিষে পটাপট ভাঙে মোটা দাড়া  
এই দেখ, কোন সকালে দু-গাল মুড়ি খেয়ে সারা বেলা কাবার, মিতে ঘর যাও
একপো বেলার দিকে নায়েব যাবে, আমিও যাব; যাও নেয়ে-ধুয়ে  খেয়ে নাও।  


সোনারপুর
২০.০৬.২০২০