শেষ কার্তিকের সকাল, হঠাত অসময়ে আজ উত্তুরে বাতাস  
আকাশ পরিষ্কার, বেলা একপো মত, তবে কি শীতের আভাস
নিধি, গলা তুলে বলে নায়েব মশাই, আমি খামারে আছি; আসেন
নায়েব বটুক মিত্তির কাপড়ের ঝোলা কাঁধে ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়েন
একটা বস্তা জড়ানো বেশ বড় বোঝা, নিধি মাথায় নিয়ে আগে আগে
পিছনে নায়েব বলে সব নিয়েছিস নিধি; অনেক গুলো লাগবে ভাগে ভাগে
নিধি উত্তর দেয়, ডাং বাড়ি, নারকোল দড়ি, মুগুর, কাটারি; খান ৪০ খোঁটা
গাং-ভেড়ি ছেড়ে সরু মেঠোপথে নামে ওরা, হরি পৌঁছেছে দূরে যায় দেখা।  


মাথার বোঝাটা মাটিতে ফেলে,  নিধি বলে অনেকটা আগে নাকি মিতে
হরি নায়েব কে নমস্কার জানিয়ে  উত্তর দেয়, না;  এই খানিক আগে
নায়েব খাতা দেখে নিধিকে বলে, এখানে খোঁটা মেরে সোজা মাপ দে দখিনে
নিধি দু-গজের ডাঙে মাপ শুরু করে, নায়েব চলে নিধির পিছনে পিছনে
নায়েব বলে; থাম এখানে খোঁটা লাগবে, নিধি হাঁক দেয় মিতে ...মিতে
খোঁটা মুগুর নিয়ে এস, হরি নিয়ে যায় , নায়েব বলে এখানে দাও পুতে
অনেক সময় লাগে মাপ শেষ হতে, নায়েব খাতায় হিসেব করে দেখে  
হরি এই তোর ভিটে ৬৩ শতক, পুবে মিঠে খাল পশ্চিমে বিশ বিঘে  
উত্তরে রাস্তা, দখিনে জঙ্গল; চৌহদ্দিতে আরো খান কয়েক খোঁটা দে  
লেগে পড়, চাষের জমিও তো চাই, পাতলা জঙ্গল ফাঁকা কর কেটে
হরি মাথা নেড়ে সায় দেয়, ধন্যবাদ জানায় ইষ্ট দেবতাকে  মনে মনে                  
আন্দাজ করে দিন তিনেক লাগবে কাটতে, পরিস্কারের কাজ দুই দিনে
ভাবে এক হপ্তার বেশী হয়ে গেল, আরো কমপক্ষে পাঁচ-ছয় দিন
যতই আত্মীয় হোক, তবুও অন্যের সংসার নিজের কাছেই লাগে হীন
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে কুড়ুল হাতে কাজে লেগে যায়, মনে জোর পায়
ভাবে ভাগ্য দেবতা নিশ্চয়ই করবে দয়া; অন্নের কষ্ট এইবার যদি যায়।


নায়েব ও নিধি একটু দুরেই আরো জমি মেপে মারছে খোঁটা- নিশানা
হরি মনে বল পায়; নিশ্চয়ই আরো মানুষ আসবে, একলা থাকতে হবে না
এক মনে কাজ করে হরি; মিতে নিধি যে কখন এসেছে দেখতে পায় না
সম্বিৎ ফেরে মিতের ডাকে, কুড়ুল হাতে সোজা দাঁড়ায়, মিতে ঘর যাবে না
বেলা প্রায় তিনপো হয়ে এল, আমরা ফিরব, নায়েবের কাজ শেষ
হরি বলে, তাইতো; হুঁশ পাইনি, হাঁ ফিরব মিতে, জায়গাটা লাগছে বেশ।  


সোনারপুর
৫/৭/২০২০