বয়স; কবি গুরুর সমান নয়, বেশ খানিকটা ছোটই হবে  
জন্ম ভিটে ছেড়ে হরিচরণ গিয়েছিল নতুন ভিটের খোঁজে
সূত্র মারফত খবর পেয়ে পৌঁছে গেল কয়েক ক্রোশ হেঁটে
সত্যিকারের ডাঙায় বাঘ জলে কুমির, এমন একটা পরিবেশে
সেখানে তখন চলছে পাট্টা বিলি, শুনে হরি চরণ দিয়েছিল পাড়ি
পোঁছে সেথায় পরিচিতের বাড়ী, কয়েক দিন কাটিয়ে সেথায়
দেখল খানিক ঘুরে ফিরে, মন্দ নয়, নোনা নদী, জঙ্গল আছে ভারী
পরিচিতের সঙ্গে গেল কাছারিতে, পেন্নাম হল জমিদারে দিয়ে প্রণামী
ভারী গলায় বললে বাবু, নাম কি তোমার, কোথায় ছিল নিবাস
কি কারণে আগমন হেথায়, থাকতে পারবে ? জানো চাষ বাস ।


হরি চরণ কর জোড়ে একে একে বললে সবই , শুনলে জমিদার
নায়েব ডেকে বলে দিল, দেখতো পারো কী দিতে মিঠে খালের পার
আজ্ঞে কত্তা হয়ে যাবে, ঐ দিকটায় জঙ্গলটা বেশ ঘন গরান হেঁতালে
শুনেছি আছে হরিণ, বাঘ, বরাহ – জমি ভালো ,  পরিষ্কার করলে
বসত করেছে গুনো হালদার নোনা খালের এপারে, বাঘ তাড়িয়ে আছে
প্রায় রাতেই নাকি সে দেয় হানা,  খাল পেরিয়ে আসে বাড়ির কাছে
হরি চরণ শুনছে সবই, বুকের ভিতর গুরুগুরু, ভাবছে একি হলো তাল
জঙ্গল কাটা নয় কঠিন, ছেলেপেলে নিয়ে বসত করে হবে নাতো বেসামাল!
জমিদার বলে শুনলে হরি নায়েবের কথা, পারবে কি ? সাহস আছে বুকে
কাল সকালে দেখে এস নিধি সর্দারের সাথে, সাহসে কুলালে থাকবে সুখে
গুনো হালদার খুব সাহসী ছয়টা ছেলে তার, তুমিও পারবে; না পেলে ভয়
কাছারি থেকে সাহায্য পাবে, কালকেই জানিয়ে যেও, থাকলে পাবে জয়।  


পরের দিন একপো বেলায়, হরি আর নিধি মিলে চলল লাঠি ঠুকে  
কাছারি থেকে বেশ অনেকটা সরু মাটির রাস্তা, জঙ্গলে ঝিঁঝিঁ ডাকে
কথায় কথায় চলে এল মিঠে খালের ধারে, নিধি হাঁকে; গুনো আছো ঘরে
মাঝ বয়সী শক্ত পক্ত মাথা ভরতি টাক, বেরিয়ে বলল, খোঁজ কীসের তরে
এই যে গুনো শোন, বাবু পাঠালো এনার জন্যি, করবে বসত তোমার কাছাকাছি
গুনো বলে তা ভায়া একলা নাকি ! পারবে থাকতে এই আমরা যেমন আছি
হরি জানায়, হাঁ দাদা তোমরাই তো হবে মিতে, থাকব ভরসায় হব প্রতিবেশী
গুনো বলে পথম পথম কষ্ট হবে, থাকলে শুনতে পাবে বেন্দাবনের বাঁশি
রাত বিরেতে দিন দুপুরে একই রকম সব; এদিক ওদিক নানা কলরব
ওরা থাকে ওদের মতন, আমরাও তেমন, লাঠি থাকলে ভয় কেটে যায় সব।  
  
সোনারপুর
০১.০৬.২০২০          


( প্রজা পত্তন -২  ১৮।০৬।২০ তে আসছে)