ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে বাংলা ভূখণ্ডে রেলগাড়ি এসে  থেমেছিলো আজকের দিনে,ঠিক ১৫৯ বছর আগে----
আজ তোমার জন্মদিন,আজ ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর
স্টিম ইঞ্জিনের পু ঝক ঝক শব্দে কেঁপে উঠেছিল
এখানকার মাটি,মানুষ,প্রকৃতি ও কুষ্টিয়ার জগতি স্টেশন।
-
সেদিন ভিড় জমিয়েছিল,আশপাশের দু-দশ গ্রামের মানুষ
প্রত্যক্ষ করেছিল,কৌতুহলী জনতা, প্রত্যক্ষ করেছিলো
বিস্ফোরিত চোখে পূর্ববঙ্গে ব্রিটিশের গড়ে তোলা প্রথম অবকাঠামো লাল ইটের বিশাল স্থাপনা,
স্টেশনজুড়ে আলোর রোশনাই
জল ভরার জন্য বিশাল জলাধার, কয়লা রাখার গুদামঘর
টেলিগ্রাফে টরে টক্কা,টলিফোনে হ্যালো হ্যালো গম গম
চারিদিক।
সিগন্যালম্যান,কুলি কামিন,লাইন ম্যান,মালবাবু
টিকিট বাবু,ছোট বাবু,বড়ো বাবুর শত ব্যস্ততা
ট্রেন এলে টিকিট বিক্রি,বিবিধ মালসমানের হিসাব নিকাশ,স্টেশন জুড়ে ট্রলির ঘর ঘর আওয়াজ
লাল-সবুজ চৌকোনা বাতি দুলিয়ে সিগন্যাল দেওয়া।
-
চায়ের স্টলে জড়ো হতো এলাকার গন্য মান্য সম্ভ্রান্ত মানুষ জন
স্টেশনের আশপাশ ঘিরে তৈরি হয়েছিল বাবুদের বাসগৃহ
বারাদীতে গড়ে উঠলো নতুন জনপদ,দ্বিতল গৃহ
বিচারপতি মন্মথনাথের বাড়ি,ব্রাহ্মসমাজের পুরোধা
চারুলতা স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পন্ডিতের বাড়ি, নদীয়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতি বিজয় বসন্ত লাল রায় চৌধুরীর ভবন ইত্যাদি ইত্যাদি
-
একদা চঞ্চল জমজমাট জগতি স্টেশন এখন বিবর্ণ মলিন
পরিত্যক্ত হয়ে গেছে স্টেশনের সব আসবাবপত্র
ভবনে বিচিত্র ফাটলের মানচিত্র রেখা
নষ্ট হয়ে গেছে মূল্যবান যন্ত্রাংশ,টাকা রাখার লকার
টেলিগ্রাফ যন্ত্র, হাতলওয়ালা টেলিফোন সেট
বেশির ভাগ অচল এখন, বাতিলের খাতায়
মুখ থুবড়ে পড়ে আছে দরোজা কপাট জানালার ঘুলঘুলি।
দেওয়াল জুড়ে বুনো গাছের আবাদ,জলের টাঙ্কি মনে হয় ছাদ বাগান, আগাছার সযত্ন আবাস
সন্ধ্যা হলেই অন্ধকারের চাদরে ঢাকা পড়ে চারপাশ
-
সময়ের নিরিখে এভাবেই কি একদিন 
সব মূল্যহীন হয়ে যাবে,হারিয়ে যাবে
বাংলা ভূখণ্ডে ঐতিহ্যমণ্ডিত প্রথম রেলওয়ে স্টেশন,
আমাদের কিছুই কি করার নেই  !!!


১৫-১১-২০২১
জগতি,কুষ্টিয়া।