সবার মতো দেশ ত্যাগ করেনি সে,
দেশের জন্য তার ছিলো অফুরন্ত মমতা
-
আমার জন্মের বছর দশেক আগে
লোকটা পুড়ে গেছিলো ১৯৪৬ এর দাঙ্গায়,
বাবার কাছে আসতো সে, ওষুধ নিতো,
সাহায্য চাইতো,
আমাকে তার অভিজ্ঞতার কথা বলতো,
লুটতরাজ অগ্নি সংযোগ খুনখারাবির গল্প করতো,
১৯৫০ দাঙ্গা, তারপর তার নিঃস্ব হয়ে যাওয়া।
-
পরের বার ১৯৬৪ - ৬৫ তে আবার দাঙ্গা হলো,
পাক ভারত যুদ্ধ শেষে
সে শত্রু হয়ে গেল তার জন্মভূমির
-
তখনও অনেকে আসতো চিকিৎসা সহায়তা নিতে
বাবার কাছে, সেই একই গল্প একই অভিজ্ঞতা।
লুটতরাজ অগ্নি সংযোগ খুনখারাবি মারপিটের গল্প
এতদিন যারা প্রতিবেশি ছিলো,
তারা সব অচেনা হয়ে গেল রাতারাতি -- বলতে বলতে লোকটির চোখ দিয়ে জল ঝড়তো,
গড়াতো টপ্ টপ্ করে ---
-
কোন প্রশাসন তাদের পাশে ছিলো না,
কোন রাজনৈতিক দল ছিলো না তাদের পাশে,
সেচ্ছাসেবী সংগঠন  ছিলো না তাদের পাশে
কোন ত্রাণ-সাহায্য জোটেনি কপালে,
আশ্রয় মিলেছিল খোলা আকাশের চাঁদোয়ার নিচে,
বারোয়ারী তলায়, চন্ডী মন্ডপে।
-
একই অভিজ্ঞতা আবার বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ভাষণের পর
সে এক ভয়াবহ অরাজকতা
রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের চৌকস সৈনিক সেনাবাহিনী মোতায়েন করে ধূলিস্যাৎ ধ্বংসস্তুপের পাহাড় গড়লো নির্দ্বিধায়!
-
লোকটা দেশ ছাড়েনি, শত সন্তাপে, অভাবেও
১৯৭১ সালে গান পাউডারের আগুনে শেষ পর্যন্ত তার জন্ম ভিটেতে পরিবার পরিজন নিয়ে পুড়ে ছাই হয়ে গেল! রাতের আঁধারে, বসত ভিটেতে, মিশে গেল এ মাটিতে,
আগুনে ঝলসে পুড়ে মারা গেল লোকটা।


২০/১০/১৯৮৬
কে এম দাশ লেন,
ঢাকা।