আমারও ছিল এক আঁধার ভোরে
স্বপ্নে লেখা সূর্যোদয়—
চিঠির খামে ভেজা হাওয়া,
পাহাড় ঢলে পড়া কুয়াশা দ্বয়।

ছিল আকাশের কপোলে আঁকা
বকুল-ছায়া শিশিরপাতা,
দূর মাঠ পেরোনো কিশোর মন,
যেমন গঙ্গার বুকে কংক্রিট গাঁথা।

আমারও ছিল ডানাওলা নদী,
যে ডাকে—"চলো, নামো ,ছুটে!"
পলিমাটি গন্ধে মাখা
আত্মার পাতায় গোপন লুটে।

জোনাকির মতো ছিল কিছু দিন,
যারা জ্বলত নিঃশব্দ রাতে,
আলপথ ধরে হেঁটে আসা
হৃদয়-কাঁপা নামহীন প্রাতে।

আমারও ছিল তেঁতুল-ছায়া দুপুর,
মাটির ঘ্রাণে পাতা ছেঁড়া ছুটি,
প্রজাপতির ডানায় আঁকা ডাকঘর—
চিঠির ভেতর থাকত নীরব জাতি।

ছিল মনের ভিতর দোলে ওঠা
একফোঁটা শ্রাবণের অঘ্রাণ,
যেন বাঁশির বুকে কান্না বাজে—
যেমন বিসর্জনের শঙ্খে গান।

সেইসব দিন, আজ চিঠির পেছনে
তুলে রাখি মেঘের পাণ্ডুলিপি,
চাওয়ার কলম শুকিয়ে গেছে—
থাকে শুধু বেদনার দীপ্তি।

আমারও ছিল এক ঘুঙুরহীন নাচ—
যা বাতাসে বেজে উঠত বিষণ্ণ ঋতুতে,
ছিল এক রুক্ষ সুর,
যা হৃদয় ফুঁড়ে উঠত নির্দ্বিধায় মেঘপুঞ্জেতে।

আজ যুগের গাড়ি চেপে আমি,
নিয়মে বাঁধা, দৃষ্টি বেঁধে...
আমারও ছিল—শিশু সকাল,
যা হারিয়েছে নির্বাক সন্ধ্যে।

তবু আজ…
একটা যন্ত্রচালিত ট্রেন থেমে যায় মনে,
আর আমি দেখি—
আমার ‘হওয়া’র ট্র্যাক থেকে ছিটকে পড়েছে
সব ‘ছিল’-এর কামরা,
অদৃশ্য প্ল্যাটফর্মে নামিয়ে গেছে
সময়ের হুইসেল-হারা সমর্পণ।