বৃষ্টিক্রুশে ' মা ' বিদ্ধ
                বিপ্লব দাস


বৃষ্টিতে তোমরা ভিজতে ভালোবাসো
       বৃষ্টিকে  কে না আলিঙ্গন করতে ভালোবাসে?
তবে আমার বৃষ্টি মোটেই ভাল লাগেনা।
বৃষ্টি আসার কথা শুনলেই বুক কেঁপে কেঁপে ওঠে অস্থিরতায়।
চিবুকে বোধদয় থেকে ঝুলে থাকে বিভীষিকা।
শরীরের সমস্ত যাত্রী স্তব্ধ হয়ে যায়, তমসার মেঘ রোগে।
টিনের ঝনঝনানি শব্দ, মৃত বারির করুণ আর্তনাদ।
রাত পাতার এক একটা শব্দ দেয়াল ফেটে চিৎকার করে বলে–
       "বাবু একটু দরজা খোল,
      কিরে শুনতে পেলি"।
এমন মায়াদ্রোহী শব্দ শুনে–  নিদ্রা নিয়ে,
অকস্মাত্ ধড়াম করে দরজা খুলে উঠি,
দেখি আঁধার বৃষ্টির বিস্ময় ব্রত
আমার মনেও এ চিন্তিত  ভ্রম......
               মা আমায় ডাকছে না,
এই অন্ধকারে জল বৃষ্টিতে শুধু ঝিঁঝিঁ পোকা ডাকছে
মা ভগ্নস্তূপের মত শুয়ে ঘুমিয়ে আছে
ঝড়, বৃষ্টি ,বিদ্যুৎ, চমক ঝাপটায়।


এসুখের নিঃশ্বাস ব্যাখ্যাহীন।


তোমরা তোমাদের প্রেমিকাকে নিয়ে উৎকণ্ঠায় থাকো
বৃষ্টি কখন আসবে?
মনের শেকড়গুলো অসুখে,  রুক্ষ, সূক্ষ্ম, ছায়াচ্ছন্ন–
             সতেজ হবে পাখা মেলে বৃষ্টি অন্তরে।
সামান্যই মন নৌকা ভাসানো স্বস্তি।


বৃষ্টিকে নিয়ে কবি, লেখক, গীতিকার সবাই সুন্দর সুন্দর লেখা লিখেছেন,
এই মুখরো দিনে বাদলাচুম্বন উপভোগ করে সবাই পরম সুখে।
তবে আমি লিখতে চাই না কান্না পায়
জোছনার আলোর মত অশ্রু ছড়িয়ে পড়ে শেষ চূড়ায়।
কারণ, বৃষ্টিতে ভেজা প্রথম সঙ্গিনী আমার 'মা'
আর প্রসবকালে মায়ের গর্জে ওঠা রক্তে ভিজেছি,
মনে হয় অন্ধ হলে আজ নিহত  গদ্য-পদ্যের রূপ দেখতে হতো না।
আজও মনে পড়ে আমাকে নিয়ে,
ডাক্তার-খানা থেকে ফেরার পথে
ঝমঝম করে বৃষ্টি , মা  ক্যাঙ্গারুর মত তার কোলে কাপড় দিয়ে ঢেকে নেয় আমাকে ।
তবে মায়ের কাপড়ের রং জানি না– আলো ছায়া।
মায়ের হৃদয়ে যে অগ্নি ফুলকি, আমাদের বাঁচিয়ে রাখার
সেদিন দেখেছিলাম,
অনায়াসে সহস্র রাত জেগে থাকতে পারবে আমাদের অসুখে।
মায়ের অশ্রুআঁখি বোঝা যায়নি কোনোদিন বৃষ্টির জন্য,
তবে আমি অক্ষরে অক্ষরে টের পাই।


মায়ের শরীর জল কাদার  সোঁদা গন্ধ নির্জনে আজও মনে করি।
                 সে গন্ধ স্বর্গতুল্য, তাজা ফুল।


মা আজও ভেজে....
রান্নাঘরের আধখানা ফাটা ত্রিপলে,
বাসন মাজার সময়,
উঠোন ঝাঁটা দেওয়ার সময়,
সব সময় মা ভিজে ভিজে থাকে।
মায়ের পা ঘা হয়ে যায়, আঙ্গুলের ফাঁকেও–
রাত্রিবেলা মা যন্ত্রণায় চিৎকার করে,
আমি মায়ের গর্ত গর্ত পায়ের তলায় ও হাতে
         মলম লাগিয়ে দিই।


কবেই দুইশো ছয়টি হার পিষে গেছে, রক্তের সংকট
তবুও জীবনের জীবন্ত গল্পে সবুজের রসায়ন,
তুড়ি মেরে দাঁড়িয়ে আছে যুগে যুগে,
মায়ের একেকটা স্পর্শ আরোগ্য লাভ।


মা  ভিজতে চায় না,
বলে– হে ঈশ্বর একটু  রোদ দাও।
তবু মাকে ভিজতে হয় সর্বক্ষণ আমাদের জন্য,
            লোকের দ্বারে দ্বারে গিয়েও।


আর আমি ভিজলে..............


রচনা–বিপ্লব দাস
৩০জুন২০২১
দুপুর২টা৩০