"পৃথিবীর বোতলে বন্দী"
                বিপ্লব দাস


আমার জন্ম কি শুধু এই করার জন্য?
ভাবলেই কেমন জানি কোটি কোটি জিজ্ঞাসা চিহ্ন  মনের পাতায়,
তুমুল ঝাঁজালো ঠোক্কর দিতে থাকে ।
অতি সামান্য খাদ পেরোতেই
ধারালো ঘাসের শরীরে,
পা দুখানি টুকরো হয়ে যায়।
জং ধরা হাততালির বিনুনি  আস্বাদময়ী  অনাবৃত  ধরিত্রীকে প্রশ্ন করি–
জীবন উপন্যাসের
মাত্র সামান্য কথাখানি তখন
বন্দুকের গুলির মত বেরিয়ে যায়–
আমার  জন্ম কি শুধু এই করার জন্য?
বলো, বলো একটিবার পৃথিবী,
আর, আর পারছি না  কারো পকেটে বুকে রাখা সোনালী রোদ্দুর হতে।
অনর্গল সূচালো আঘাতে আঘাতে শুধু মৃতপ্রায় আত্মা নিয়ে ঘুরি,
অত্যাচারী পোশাক পরা শহরে।
ফুলের বোঁটার মতো ছিঁড়ে নেয় আমার এক একটা দিন রাত্রি,  অর্থধারী বাবুরা।
গ্রামবাংলার রাত্রি শেষে যেমন ফুলগুলো ফুটে ওঠে
আমার মস্তখানিও জেগে ওঠে শুধু খন্ড খন্ড হবার জন্য ধারালো বাক্যাস্ত্রে।


পৃথিবীর জানালা খুলে বলেনি কোন কিশোরী
"পালকের দোঁয়াতগুলো  শুধু তোমার
যতদূর পৃথিবী দেওয়াল, ততদূর তুমি মন খুলে লিখে যাও,
মানুষের সূদরে যাওয়া উপাখ্যান"।


তবে কেঁদোনা তুমি।


চারিদিকে আমার জাগরিত শত্রু।
আড়ালে, অন্তরালে, সম্মুখে রক্ত চুষে।
আমার এই প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারেনি
কেউ না...
তারাও নত ক্রুশে বিদ্ধ।
প্রেমিকাও ছেড়ে গেছে ঘুমন্ত শব্দগুলো দিয়ে।
পৃথিবীর বোতলে বন্দি থাকা
জীবিত এক মৃতদেহ।


নেই কোন সংসারধর্ম নামে পুঁজিবাদের আলপনা,
নেই অজানা লোভ।


বাতাসে শুধু অনাবিল ভালোবাসাভাইরাস তীব্রভাবে ছড়িয়ে পড়বে আমার।
ফুটফুটে ফুলের মত নতুন, নতুন ভাবে ভালোবাসার জাগরণ হবে।
৩৬৫ দিন নামের পঞ্জিকাটি  খৈনির মত ডলে ডলে
মুখে পরে নেবে সবাই।
চারিদিকে শুধু শান্তি, শান্তি  শঙ্খ ধ্বনি বেজে উঠবে।


তবুও আজ আকাশ পুস্তিকা জুড়ে মুক্তির জয়গান,
আর ভাল লাগে না বাঁচতে
প্রিয় তালিকার দুনিয়া চূর্ণ-বিচূর্ণ
মৃত্তিকার বুকে আমার ক্ষয়িত অভিলাষ।


বলো বলো একটিবার ধরিত্রী
আমার জন্ম কি শুধু এই করার জন্য?
জানি এর কোনো বিন্দুমাত্র উত্তর নেই
তবুও এই এই করে আঠাশটা বসন্ত বনস্পতি
দিয়েছি নিজহাতে চিতায় তুলে।


পাখির কণ্ঠস্বরের মতও পাইনি ক্ষণিক আভাস।
আমার জন্মটাই লুটেপুটে নেবে ক্ষমতাধারী দীর্ঘশ্বাসে।


জানি,জানি  ধরিত্রী  চিরকালই কাটবে শুধু এই এই করে বিস্ময়ে।


রচনা–বিপ্লব দাস
তাং–১৪/০৫/২০২২