সমাজ সাজবে,কালো শামুকে
       বিপ্লব দাস


আমি প্রায়ই দেখতাম পাগল টা রাস্তায় বসে বসে ভাঙ্গা আয়নায় মুখ দেখতো,
দেখে, খিলখিল করে হাসত
আর সমাজের দিকেও ভাঙ্গা আয়না দেখাতো
আর বলে উঠত দেখো দেখো –সমাজ বাবু কি সুন্দর না গাছগুলো,
মানুষগুলো, রাস্তাগুলো, সবুজঘাস গুলো, রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মন্দিরগুলো, স্কুলগুলো, গাছের কচি পাতাগুলো, নীল আকাশের মেঘ গুলো,তোমার বুকে ওড়া পাখিগুলো...
বলেই তৎক্ষণাৎ ভাঙ্গা আয়নাটা ছেঁড়া পকেটে ঢুকিয়ে নেই।
সমাজ বাবু ভালো করে দেখতেই পারে না কোনোদিন নিজেকে,
   সে তো ঘুমিয়ে থাকে সর্বদা।


এক বন্ধু আমার মাকে জিজ্ঞেস করছে–কাকিমনি কেমন আছো?
–খুব ভালো বাবা, এই পৃথিবীর সব লোক অসুখে আছে...
আমি খুব খুব ভালো,
আমার মত ভালো আর কে আছে পৃথিবীতে?
ভালো  থাকার মরমে অসুখীকাব্য, সূর্যের  আলোর মত ছড়িয়ে যাচ্ছে দিকে দিকে,
মায়ের প্রাণোচ্ছল হাসির আড়ালে,
এক কঙ্কালের প্রতিচ্ছবি    থাপ্পর মেরে বলছে– কতদিন আর কতদিন এমন মিথ্যে কথা।
মা এ জীবনে একদিনো কি ভালো থাকেনি?
মায়ের হাতে রোপিত গন্ধরাজ ফুল গাছটি আঙিনায়
            ঝাড়ু দেওয়ার সময় স্পর্শ কি করেনি?


আমার মুক্তি নেই, আমার মনের স্তরে স্তরে
এমন অজস্র অপ্রকাশিত প্রশ্ন....
  আমার মনকে বিধ্বস্ত করে দেয়।


হে সুন্দরী তমসা মাকে একটু ঘুম দিও, শান্তির ঘুম।


আজ আর পাগলটা নেই এই পৃথিবীতে
        এক মাতাল চালক গাড়িটা তুলে দিয়েছে তার গায়ের ওপর সন্ধ্যাঘনা  মুহূর্তে,
               ফুটপাতে থাকা অবস্থায়।
তবে শরীর থেকে একফোঁটা রক্ত ঝড়ে নি।
তার আকাশপানে  হাসি থেকে হাসিতর  মুখশ্রীটা সত্যতার লাবণ্য ছড়িয়ে যাচ্ছে।
         রাজার মতো শুয়ে আছে পাগলটা,
আর পাগলের চিরসঙ্গী সেই আধখানা আয়নাটা পড়ে আছে তার পাশেই
                     এতদিন যে সমাজবাবু তার পুরো মুখ খানা দেখতে পারেনি
     এতক্ষণে সমাজ বাবুর ঘুম ভেঙেছে
তবে কিছু দেখতে পাচ্ছে না সমাজ বাবু
অন্ধকারে এ সমাজ কালো শামুকে ভরে গেছে
           সাঁতার কাটবার বহু প্রচেষ্টা সমাজ বাবুর,
তবে সাঁতার কাটতেই পারলো না।
এতদিনে সে সাঁতার কাটতেও ভুলে গেছে....
পাগল রাজার আলোময় মুখশ্রীটা  
সেটা স্পর্শ করতেও ব্যর্থ হলো।
                      
  সমাজ শুধু সাজবে এইভাবেই কালো শামুকে ...
                 নেই কারো  চিন্তা,
করো মাথা ব্যাথা....


রচনা –বিপ্লব দাস(রাহুল)
২৫জুলাই ২০২১