"তিন নং বেঞ্চের তিন নম্বর ছেলেটা"
               বিপ্লব দাস


তিন নং বেঞ্চের তিন নম্বর ছেলেটাকে মনে আছে বন্ধুগন–
তার মুখশ্রী  আজ ভীষণ কালো
এইই কালের সমস্ত কালি তার মুখে ।
কয়েকটি ক্লান্ত মাছি মৃত্যু ভয় না করে
খাবারের সন্ধানে বসেছিল তার গালে।
যন্ত্রণার বিস্ফারিত রক্তরাঙ্গা  শব্দ বাজি চোখেমুখে।
শতাব্দী ধরে দোলনায় দুলে–দুলে
মনে হয় তবুও তার পরম শান্তি
এইই ভূমি সিঁথিতে তার পায়ের তলায় ঠাণ্ডা বরফ।
তবুও সে স্থির দাঁড়িয়ে আছে হাসিমুখে।


জানি তাকে মনেই নেই কারো।
মনে করার জন্য তো...
তার চোখ থেকে কেউ বের করেনি  ধুলো।


টিফিনে চিকচিকে রোদে শালিক পাখিগুলো সবুজ ঘাস ঠুকরে চলে যায় ওই দূরে,
গল্পের পুঁথি পাতা খুলে গল্প হত  হাইড্রেনে পা দুলে দুলে।
আঁটসাঁট শরীরে লেপে থাকা আকাশী জামার গন্ধ
আহা...
আর একটা জায়গা পরিষ্কার করে বাঘ বকরি কাটাকুটি সংসার।
নিত্য পৃথিবীকেও  মাথা দিতে হয়  সময়ের বলিকাঠে।
আমাদের হাতের জলছাপ হারিয়ে গেছে পৃথিবীর ঘূর্ণিঝড়ে।


আমার মনে সংশয় এই প্রকৃতি ভুলে যায়,
না তোমরা।
আজও 108টা শুকনো গোলাপ খোয়াই হাটের নকশা ব্যাগে,
বইয়ের ভাঁজে ঘোরে শহরে শহরে।
সিগারেটের জ্বলন্ত বুকটা ফুঁক দিয়ে দিয়ে ভাবো নিজেদেরকে বিদেশি পর্যটক।
পাশে দাঁড়ানো পাখি, চাঁদ বলেছিল তখন
তুমি– কি সাংঘাতিক!


যুগান্তর ধরে পায়ের তলায় খুশি খুশিরত ঘাস জানে।


কেন তোমরা বলেছিলে ওকে?  শেষ ঘন্টা আগে ফিসফিস করে–"কোনদিন ভুলে যাব না"
তোমার মায়াবী চোখ দুটোই তো বইপাতা,
সেখানেই  তো বন্দী ।
আজ সেই বই পাতা লালচে।
তারপর থেকে হয়ে গেছে...
কত সময়ের দেওয়াল ঘষে, নক্ষত্র পতনের গল্প ।


আজ ক্লান্ত পৃথিবী ঢলে পড়েছে তার কালো মুখখানিতে।
ছেলেটি নিশপিশ করে বলেছিল–
কেন এত সময়ের পাতা থেকে ছিঁড়ে শব্দগুলো
জলসুরে বলে যাচ্ছ।
হাজার হাজার কর গুনে কেন থেকে যাওয়ার জন্য মিথ্যে প্রতিশ্রুতি?


প্রথম দিনের সেই প্রথম আমার কান্না মনে রেখো।
এই কাঠের বেঞ্চ থেকে অশ্রু বাষ্প হয়ে গেল
দেখো,
দেখো কিন্তু তুমি ,
তা না হলে ভুলে যাবে।


বন্ধুগণ জানি তোমাদের তাঁকে মনে নেই...
আমার ঠিক মনে আছে...
সেই ছেলেটি বকুলতলা থেকে বকুল গুলো কুড়িয়ে কুড়িয়ে বলেছিল– মা ও মা খাও ভালো লাগবে।
মা বলেছিল– লক্ষী ছেলে আমার ।
গাছটা অমনভাবে নাড়িয়ে দিও না;
পাখিগুলো উড়ে যাচ্ছে।
একটু শান্তভাবে বসো
   তোমার ভর্তিটা হয়ে যাক।


তিন নং বেঞ্চের তিন নম্বর ছেলেটাকে মনে আছে বন্ধুগণ...
সঙ্গে তার দু টাকার ডালমুটের স্বাদ।
তার জীবনটা সমান্তরাল নয়
         আছে একটা  রূপসী গহীন খাদ।
তার গৌরবর্ণ মুখখানিতে আজ তিমিরের বসবাস।
মধ্যবিত্ত  স্বল্পাহারী ফড়িঙের জন্য শিস দিতে থাকে শহরে শহরে।
      


সে সেই ছুটে বেড়ায় বেদনার জীবন নিয়ে।


রচনা–বিপ্লব দাস
তাং–১৮/০১/২০২২