খেয়াল এল হেলুরাজের মাথায় -
দেখতে হবে, প্রজারা সব কেমনে দিন কাটায়,
যেই না চিন্তা মনের ভিতর আসে -
বাড়াল পা , পথের পরে পয়লা শ্রাবন মাসে।
সঙ্গে ছিল মন্ত্রী গুপী , পচাই সেনাপতি ,
হাল দেখতে প্রজার, হঠাৎ রাজার হল মতি।
এ গাঁয় ও গাঁয় ঘুরছে হেলু প্রজারে জিজ্ঞাসি,
কেউ না চিনে রাজারে , ভাবছে তিনজনা বিদেশী।
রাজা আছে নগ্ন পায়ে চাদর ঢাকা গায়ে
মন্ত্রী সেপাই সেই রকমই চলছে  ডাইনে বাঁয়ে।
হঠাৎ হেলু বলল- গুপী , স্বর্গ থেকে বেশী -
আমার রাজ্যে প্রজারা সব কেমন হাসি খুশী।
আড়াল থেকে লুকিয়ে সবই ইন্দ্র রাজা শুনে,
স্বর্গ বুঝি হাত থেকে যায় ভেবে প্রমাদ গুনে।।
ডেকে বলে বায়ু ও মেঘে ভাসাও হেলুরাজে
অহংকারে আপনারে আমার বাড়া বোঝে?
নামল হঠাৎ মেঘ বৃষ্টি যায় না নজর আগে,
বদলা নেবে অতীতেরও,  আজ পেয়েছে বাগে।
ত্রাহি ত্রাহি হেলু বলে ওহে গুপীনাথ -
কেমনে বাঁচি শিরের ওপর চরম ধারাপাত ।
এ কোন শত্রু আড়াল হ তে অস্ত্র হানে বেশ ।
হেঁট হচ্ছে মাথা আমার লজ্জার নেই শেষ ।।
বৃষ্টি জলে ভিজে গ্রামের রাস্তা হল কাদা ।
রাজ্য ভ্রমণ করতে গিয়ে রাজা পেলেন বাধা ।।
অনেক আছাড় খেয়ে রাজা ফিরে আপন ঘরে ,
ঘরের বাহির আর না হন , মরেন সদা ডরে ।।
সর্দি কাশি হলে আছে রাজ বৈদ্য চার ।
বৃষ্টি এলে দেখছি মাথা বাঁচানোটাই ভার ।।
আর না হব ঘরের বাহির থাকবো খিল এঁটে ।
ঘরের ভেতর হেসে খেলে যাক না জীবন কেটে।।
এই ভাবেতে চলল কিছু দিবস রাতি বেশ-
মন্ত্রী সান্ত্রী সেপাই সবার চিন্তার নেই শেষ।।
কেমনে চলে দেশের শাসন রাজা র'লে ঘরে ।
হাসবে লোকে শত্রুরা সব ব্যঙ্গ দেবে ভরে ।।
দেশের মান যায় বা বুঝি রাজার কাছে কয় ।
রাজা তবু খোলেন না দ্বার মনের মাঝে ভয়।।
অনেক কাতর অনুনয়ে বলেন রাজা শেষে ।
বৃষ্টিতে না ভিজতে হলে ফিরব রাজ বেশে ।।
পড়ল ঢ্যাঁড়া রাজ্যে তবে বাঁচাও মহারাজে ।
এমন সুযোগ পাবে না, নাম হবে দেশের মাঝে ।।
জমিদারি, খাজনা মুকুব , অনেক পরিতোষ ।
আর্ যা চাও পাবে, ঘোচাও রাজার মাথার দোষ ।।
চতুর্দিকে খবর গেল কে বা আছ গুণী,
সমাধান দিয়ে করো মহারাজে ঋণী ।
বৃষ্টি হতে রাজার মাথা বাঁচলে বাঁচি মোরা ।
কোথায় আছ দেশের গরব আজ লুকিয়ে কেন তোরা।।
পারিতোষিক লোভে এল সে এক চর্মকার।
নিজের মাথায় নিতে গেল সমাধানের ভার ।।
মন্ত্রী গুপী শুধায় তারে নিজের পরিচয় ,
চামার বলে আমার অষ্ট পূর্ব-পূরুষ যেবা হয় ,
বানিয়ে  প্রথম জুতো ঢাকে রাজার পদ দ্বয় ।
কবিগুরুর লেখনীতে তাই তো লেখা রয়।।
সেই বংশে জন্ম আমার এ কাজ এমন কি ,
আদেশ দাও তো চামড়া দিয়ে রাজার মাথা ঢেকে দি।।
চটল শুনে গুপীনাথ বলল ভাগাও এরে -
এবার যদি দেখি দেবো সটান কারাগারে ।।
প্রাণ নিয়ে সেই চামার গেল এল বামুনপুত -
বলল যজ্ঞ করে তাড়াই রাজার মাথার ভূত ।।
আগে আমায় দাও গো লিখে রাজ্য আধেক্ খান -
বিবাহেরি তরে করো রাজ কন্যা দান,
রাজা যদি বেঁকে বসে আগেই এ সব চাই -
বলল পচা দাঁড়িয়ে আছিস্ বামুন বলে তাই ,
নয়তো তোকে চড়িয়ে শূলে আপদ্ ঘোচাতাম
বাঁচ্ পালিয়ে নয়তো এখনি বিধি হবে বাম্ ।।
সোনার এসে বলল রাজা মুকুট পরে যাক্ -
যতক্ষন বৃষ্টি হবে মুকুট মাথায় থাক্ ।।
বলল পচা মুকুট পরে ভিজবে না কি দেহ ,
সভা মাঝে এ সব আপদ ঢুকতে না দাও কেহ ।।
কারো বুদ্ধি কাজ করে না সমাধানের ত'রে ।
মন্ত্রী সান্ত্রী সেপাই স'বে উপায় খূঁজে ম'রে ।।
এমন সময় এক মহাজন এল খবর নিয়ে ।
সমাধানের তরে বৃদ্ধ আনছে কাপড় ব'য়ে ।।
এমন চির্ বানিয়েছে সে বৃষ্টি মানে হার ।
গায়ে দিলে কোনও ভাবেই বৃষ্টি না যায় পার ।।
বলতে বলতে বৃদ্ধ সে এক পৌঁছে গেল সভা -
বয়স দেখে মন্ত্রী সান্ত্রী সেপাই হল বোবা ।।
শুধায় গুপী কিসের লাগি তোমার আসা আজ,
রাজামশায় কখনো না পরেন কালো সাজ।।
তোমার কাপড় নিকষ কালো মানায় নাকো দেহে ।
বস্ত্র করে এরে পরা বিষম ব্যাপার যে হে ।।
বলল বুড়ো পরতে এরে বলল তোমায় কে ?
এলাম হেথা রাজার লাগি যন্ত্র বানাতে ।।
এই বলে সে এক খানি বেত দন্ড বাহির করে ।
শিক্ দিয়ে তার চারিধারে সেই বস্ত্র ধরে ।।
দেখতে সেটা চাকতি যেন মাঝখানেতে দন্ড ।
গুটিয়ে তারে ছোটো করো চাও কি করো খন্ড ।।
ডান্ডা ধরে রাজামশায় চলেন যদি কাজে -
রোদ বৃষ্টি লাগবে না গায় বলুন মহারাজে ।।
সবাই বলে এ যন্ত্র বেশ বাঁচায় বৃষ্টি থেকে ।
রাজা শুনে বলেন তখন সেই বৃদ্ধে ডেকে ।।
কে হে তুমি কিবা পরিচয় কোন বংশ জাত,
বৃদ্ধ ক'হে কৃষ্ণচন্দ্র পাল বংশ খ্যাত ।।
আসুন মহারাজ আর না বৃষ্টিপাতে ভয় ।
হোক না যতই ধারাপাত এবার ধরাময় ।।
মাথার প'রে থাকবে যেন রাজছত্র ঐ ।
চলতি ভাষায় ডাকবেন আমার ছাতা কই ।।
এতেক শুনে বলেন রাজা বলব এ'রে ছাতা -
এর জন্যই বৃষ্টি থেকে বাঁচবে আমার মাথা ।।
এই কৃষ্ণ ব্যক্তির নাম হঊক অক্ষ্য় ।
ছাতার সাথে এর নাম সদাই দেখ রয় ।।
সেই থেকে ধরায় হল ছাতার প্রচলন ।
হেলপুরাণের পাতায় আছে সে কথা বর্ণন ।।
হেলুরাজের রাজত্বেতে ছাতার আবিষ্কার ।
হেলুরনামে জয়ধ্বনি কর বারম্বার ।।