অন্ধ লোকটি বাজাইছে বাঁশী বসিয়া আপন মনে,
যেন ভিক্ষা না যাচি ঈশ্ন্বর সেবা করিছে ইস্টিসনে ।
পাশেতে রেখেছে এক খানা বাটি ভিক্ষা পাত্র তার,
হাতড়ে না দেখে কি পড়েছে তায় পাছে রেশ টুটে সুরটার।
ঘিরিয়াছে তারে চারিদিক থেকে যাত্রী অগণিত -
এ বলে এই রাগটি শোনাও ও বলে আমার মত।
সকলের ফরমায়েশ মতো বাঁশরীতে তোলে তান
যেন ইন্দ্রলোক ধরায় নেমেছে দূ:খ করিতে ত্রাণ।
চলছিল কচকচি বড়দের যত ছোটদের কান্না
সব থেমে গিয়ে নিঃসাড় হল যেই  ঝরল সুরের জহরত পান্না।
দূরে দাঁড়ায়ে ভাবিতেছি আমি কোথায় পেয়েছে শিখ
এমন দূর্ভাগা দেশে গুণীজন কেন চেয়ে মরে ভিখ ?
ভাবিতেছি এই ভিখারী অন্ধে দেখিবে কে বা প'রে -
জানিনা কোনো আত্মীয় তার রয়েছে কি নেই ঘরে ?
এমন সময়ে পুছে সে অন্ধ পাশের দোকানিকে
জানিস রে বেটা করেছে কি খালি ট্রেনের বগিটিকে ?
যেটিতে আমি রাত্রি কাটাই নেমেছে কি তার যাত্রী -
দ্যাখ দেখি তোর ঘড়িখানায় কতটা হয়েছে রাত্রি ?
ক্ষমা করে দাও যাত্রীগণ এই বৃদ্ধ শরীর সহে না আর
শুনে নিও বাঁশী নরনারায়ণ দেখা হলে আরবার!
এই বলে সেই বৃদ্ধ লোকটি চলিল ঠুকিয়া লাঠি
সেই বগিটির পানে, যেথা কাটায় রাত্রি ; হাতেতে তুলিয়া বাটি।
ভাবিতেছি আমি কে ক'রে এর সেবা শুশ্রষা যবে অসুস্থ হয়
কে দেখিবে এরে হলে অথর্ব তবু রহে কেমনে আনন্দময়।
হঠাৎ দেখি আছিল যতেক ভিখারীর ছেলে ও চত্বরে,
"দাদু এল দাদু এল " বলি নিল বৃদ্ধের হাত ধরে।
বৃদ্ধ তাদের পেয়ে  হল খুশী , এই তার সংসার,
যত মাতাপিতাহীন ছেলেমেয়ে হেথা সবে তার পরিবার।
বুঝিলাম তবে রক্তের টান থেকে বেশী দৃঢ় মায়ার বাঁধন ডোর -
ছুটিলাম ট্রেনের বাঁশী বাজিতেই ভাঙ্গল স্ব্পন ঘোর।