তোমার যবে জন্ম হোলো কেউ বাজালো না শাঁখ-
মাতার সেদিন ক্ষোভ জমে শেষে বাষ্পীভূত আঁখ ।
হয়তো বলতে চেয়েছিল ভেজা নয়ন তার,
আমরা চালাই বিধির সৃষ্টি, তাই কি ধরায় ভার ?
অল্প যখন হলে বড় পাঠ্শালাতে যাও -
নিজের পাঠ শেষ করে ভায়েরে পড়াও ।
হঠাৎ কিছু এলোমেলো ঝড় এসে অঙ্গনে
ফেলল তোমায় ধাক্কা দিয়ে জীবন রণাংগনে ।
পুতুল কেনার বায়না ধরো প্রথম রথের মেলা
পাওনি, কেউ দেয়নি কিনে (তাই) কাঁদলে সারা বেলা।
ছোট্টো ছোট্টো সাধটি ভায়ের পূর্ণ করে সব -
চাইলে তুমি পেন পেন্সিল গেল গেল রব।
ভাইয়ের খুশী আনন্দ দেয় তোমার বৃহ্ৎ মনে
সেই ভাইই স্বদোষ ঢাকে তোমা দোষে অকারণে।
ছোট্টো শিশু এসব কাঁটা মাখলে নাকো গায় ,
বিদ্রোহিণী সাজলে শেষে হয়ে নিরুপায়।
তোমার রুদ্র প্রতাপ দেখে সবাই হতবাক্
মাতা নীরব সমর্থনে বলেন এবার থাক॥
দাও ক্ষান্ত অত্যাচারী , কন্যা আপন খুন
ছেলের চেয়ে কোনো অংশে কম নেই তার গুন।


ঘরের লোকে করল মানা পাঠ্শালাতে যেতে
বলল হয়েছে ,নামসইটা শিখলে কোনোমতে,
ওকে তো আর ব্যারিষ্টার নেই কো বানাবার
বছর কতক গেলেই মুক্ত করব মেয়ের ভার।
সত্যি হল সাধটি তাদের কয়েক বছর পর
বাপের বাড়ী ছেড়ে কন্যা চলল স্বামীর ঘর।
নতুন জীবন নতুন ছন্দ অনেক আশা নিয়ে
ভাবলে করবে আপন সবে প্রাণের সেবা দিয়ে ।
শুরু হল নতুন জীবন পেলে নতুন ছন্দ
চোখ খুলে যবে দেখলে চেয়ে চলছে কিসের দ্বন্দ।
সেথায় স'বে হিসাব কষে কি পেল কি পায় নি-
নব বিশেষণে ডাকে লক্ষীছাড়া ডাইনি -
যে দিন থেকে রাখল এ পা মোদের সাধের ঘরে
শাজ্তিভঙ্গ হল সবার , কাটল বাঁধন ডোরে।
রিক্ত হাতে প্রবেশ করে যেমন ভিখারী মেয়ে -
কিছুই আনতে পারেনি এ বাপের কাছে চেয়ে।
শোনরে ছেলে তুই স্বামী ওর সবার চেয়ে দামী
শান্তি যদি দি'স্ এরে হ'বি নরকগামী !
স্বামী মহাশয় মনে মনে এই তো যাচনা করে
ঘরে থাক স্ত্রী ঝিয়ের মতো , বাজারের মেয়ে নিয়ে-
সারাটী জীবন কাটুক সুখে জীবন সুধা পিয়ে।
কন্যা কর্ম করে সারাদিন শ্ব্শুরবাড়ী এসে-
(যেন) নতুন ঝি এক বিনে মাহিনার এসেছে বধূর বেশে।
শ্ব্শুর শ্বাশুড়ী ভাসুর দেবর ননদ যতেক জা
সবার আদেশ নতমস্তকে মান্য করেন তা।
একটু অমান্য হলে শোনে কত গাল কত যে যাতনা সয়
জীবনের এত দুঃখ সে কার কাছেই বা কয়।
বাপের বাড়ী সদা দেয় খোঁটা স্বামী তার ব্যভিচারী
শ্বশুরবাড়ী তারে দেখে কয় এসেছে লক্ষ্মীছাড়ী।
এর বাপ করেছে কথার খেলাপি বিয়েতে না দেয় পণ্
হারামজাদী এসেছে হেথায় বিষম জ্বালাতন॥
সব শুনে মেয়ে চুপ থাকে, না পায় উপায় ভেবে
স্বামীও যে তার নিজের হল না এ কথা কেমনে কবে।
একদিন স্বামী অফিস ফেরতা সঙ্গে আরেক মেয়ে-
ঢলাঢলি তার নাহি দেখা যায় মাতাল সুরা পিয়ে।
আজকে কন্যা সহিতে না পারি করল প্রতিবাদ
রক্ত চক্ষু দেখে তার সবে গণিল পরমাদ।
যুক্তি করিল সকলে মিলিয়া নাহি স'বে আর এরে -
মানব মেতেছে সাজিয়া দানব , নারী হত্যার তরে।
ধরিয়া সকলে ঢালে কেরোসিন ভিজিল তাহার দেহ
আয়ু তার শেষ হয়েছে ধরায় , তাই বাঁচাতে এল না কেহ।
করে অনুনয় কন্যা সকলে "দোহাই মেরো না মোরে
ব্ংশেরদীপ বাড়িছে জান না আমার অভ্যন্তরে "।
না শুনিল কেহ তার অনুনয় পোড়ায়ে করিল ছাই
ভাগ্যহীনা ধর্ম্মভীরুর এ জগতে নাই ঠাঁই!
মরিয়া বাঁচিল , বাঁচাল সকলে বিড়ম্ব্না থেকে
ভাবিয়া না পাই কেন যে এ ধরা নারীরে এ নজরে দেখে?
নারীরা কেন বা নারীদের প্রতি এতটা মমতাহীন -
পুরুষ কেমনে শুধিবে নারীর ঋণ অপরিসীম্ ?
বুঝবে কবে সে যে মাতা, বোন, দুহিতা কখনো জায়া
নানারূপ ধরে নারীরা যোগায় ধরায় মানব কায়া।